ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশীয় পশুতেই কোরবানি

মাঠপর্যায়ে চাই প্রতিশ্রুতিমালার বাস্তবায়ন
দেশীয় পশুতেই কোরবানি

ঈদুল আজহার প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে হালাল পশু কোরবানি। তবে কোরবানির মৌসুমে পশু কেনা নিয়ে অতীতে ক্রেতাদের নানা রকম ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও সরকারের অন্যান্য দপ্তর সংস্থার পক্ষ থেকে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এসব প্রতিশ্রুতিতে মানুষ খানিকটা হলেও আশ্বস্ত হয়। তবে ঈদুল আজহার সময়ে এর আগের অঙ্গীকারের কোনো প্রতিফলন কার্যত দেখা যায় না। প্রতি বছরই একই ধরনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। ঈদুল আজহার আগে এবার যে রকম প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। অতীতেও একই রকম প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। অতীতের সঙ্গে বর্তমানের প্রতিশ্রুতির তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। বিগত বছরগুলোতে ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুর হাট কেন্দ্রিক যেসব অনাচার হয়ে আসছে, এবারও তা হবে- এমনটাই বলা যায়। কেন না, অতীতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কোনো বাস্তবায়ন করা হয়েছে কি না, সেটা নিশ্চিত করা হয়নি। তবে শুনতে ভালো লাগছে যে, এ বছর কোরবানির জন্য ১ কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৩৯৪টি পশুর চাহিদার বিপরীতে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪টি বেশি। এই হিসাবটা কোথা থেকে পাওয়া গেল, সেটা পরিষ্কার নয়। তবে আমাদের অনেক জরিপ কিংবা সমীক্ষা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে বসে করা হয় বলে মানুষ সেটা সহজে বিশ্বাস করতে চায় না।

যেহেতু সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, সেহেতু মেনে নিতেই হবে। তবে এবার আর দেশের বাইরে থেকে কোরবানির পশু আনতে হবে না। তবে চোরাচালান রোধ করবে কারা এবং চোরাচালান পুরোপুরি রোধ হবে কি না, সেটাও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এবারও নানা রকম পদক্ষেপের কথা জানান হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, চোরাই পথে যেন গরু না আসে, সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সতর্ক ও সজাগ থাকবে। এ বছর সারা দেশে ৩ হাজার পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে বসবে ২১টি। রোগাক্রান্ত পশু হাটে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হবে। হাটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। কোনো খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে তাকে হাসিল দিতে হবে না। কোনো খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে, রাস্তাঘাটে জোর করে নামাতে বাধ্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় সরকারের ইউনিট তথা পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে। হাটে আনার পথে কেউ প্রাণী বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারা গ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল গ্রহণ করতে পারবে না, নগদ টাকা বহন না করে যথাসম্ভব বিকল্প উপায়ে স্মার্ট পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেন করার জন্য খামারিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গত বছরের মতো এ বছরও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সারা দেশে কোরবানির পশু বিক্রয়ের ব্যবস্থা চালু থাকবে। যা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য সুখকর অবস্থা তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। লাভের আশায় কোরবানির অনুপযুক্ত পশু বা রোগাক্রান্ত পশু যেন কেউ বিক্রি করতে না পারে, সে জন্য প্রতিটি কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকবে। কোরবানির পশু নিরাপদ ও কোরবানি উপযোগী কি না বা তাদের শরীরে দূষিত পদার্থ প্রবেশ করানো হয়েছে কি না, তারা সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। মহাসড়কে বা যেখানে হাট বসালে যান চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে- এমন কিছু যেন না হয়, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে। সড়কে বা সেতুতে কোরবানির পশুবাহী গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, যেন রাস্তায় পশু আটকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না হয়। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (হট লাইন-১৬৩৫৮) চালু থাকবে।

পশুর হাটে কোনো রকম সমস্যা হলে হটলাইন নম্বরে কল করলে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ঈদুল আজহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি যেন স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এবং পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে উদযাপন করা যায়, সে লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও সরকারের অন্যান্য দপ্তর-সংস্থা কাজ করছে। কোরবানির পশুর জন্য অতীতে অন্য দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো। এখন দেশে উৎপাদিত পশু দিয়েই আমরা কোরবানি সম্পন্ন করতে পারছি। যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে তা পুরোপুরি নয়, অর্ধেকটা বাস্তবায়ন করা হলেও মানুষ কোরবানির পশু কিনতে অনেক স্বস্তি বোধ করবে। কিন্তু সেটা কতটা সম্ভব, সেটা বলা যাবে না। অতীতে এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিপালন করা যায়নি। তবে এবার আশা থাকবে, এসব প্রতিশ্রুতির যেন বাস্তবায়ন করা হয়। আর মাঠপর্যায়ে সেটি বাস্তবায়ন করা হয় কি না, সেটা পর্যবেক্ষণে নিরপেক্ষ কোনো সংস্থাকে দায়িত্ব দিলে প্রকৃত অবস্থা জানা সম্ভব হবে। কেন না, অফিসে বসে কল্পনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত মাঠপর্যায়ে আসতে না আসতে ম্লান হয়ে যায়। এবার যেন সেরকম না হয়। সেই প্রত্যাশাই থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত