ভালো মানুষ গঠনের স্কিম জরুরি!

রাজু আহমেদ

প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ভালো মানুষ বলতে আমরা সৎ মানুষকেই বুঝি। ভালো মানুষ বলতে সত্যবাদী, সচ্চরিত্রবান, দায়িত্ববান এবং ভালো ব্যবহারকারীকে বুঝি। কারো সঙ্গে দু’বেলা চলাফেরা করলে, একদিন কাটালে চোখবন্ধ করে বলে দিতে পারি- তিনি ভালো মানুষ কি-না! সমাজে ভালো মানুষ সাজার প্রবণতা বাড়ছে! ফেসবুকে সবাই ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করছে! মানবিক পুলিশ, মানবিক রাজনীতিবিদ, মানবিক অমুক-তমুক, এই পরিচয় তো ব্যক্তি বিশেষের নয় বরং সবার হওয়া উচিত ছিল! যিনি মানবিক অমুক পেশাদার শব্দটি ব্যবহার করেন, তার বাইরে যারা আছে তারা অমানবিক? হয়তো! নয়তো মানুষের মধ্যেও আবার মানুষ সাজার খায়েশি কেন!

সিস্টেমের অব্যবস্থাপনার অন্ত নেই! যে রাজনীতিবিদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তিনি যত টাকা ব্যয় করেন তার সিকি ভাগও বেতন-ভাতা দিয়ে আসবে না। তবে এই টাকা কোথা দিয়ে লাভণ্ডসুদ সমেত পূরণ হয়? রাষ্ট্র নিশ্চয়ই জানে! একজন সৎ কর্মকর্তা তার বেতন ভাতায় চাকরিকালে বাড়ি-গাড়ি করার প্রশ্নই আসে না! তবে হয় কি করে? রাষ্ট্র জানে! এদের বিচার হোক বা না হোক, অন্তত আমরা যেন চোরকে চোর, আর সাধুকে সাধু বলতে পারি। এই সমাজে সৎ মানুষের অভাব নেই। সৎ আমলা, সৎ পুলিশ, সৎ ব্যবসায়ী কিংবা সৎ শিক্ষকের সংখ্যা অগণিত! তবে অসৎদের চাকচিক্য, তাদের দৌরাত্ম্য এবং ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার জন্য চাটুকারিতায় সততার আলো চাপা পড়েছে। ভালো কাজ করে জনপ্রিয় হওয়ার চেয়ে অন্যের অপপ্রচার করে বিশিষ্ট হওয়ার বাজার রমরমা জমেছে! মানুষ আসলে বিবেকবোধ দিনে দিনে খাটো হচ্ছে। প্রজন্ম যদি অসৎ ব্যক্তির দিকে আঙুল তুলতে ভুলে যায় কিংবা ভয় পায়, অসাধুকে ধিক্কার দেওয়ার সাহস হারায়, তবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ পথ হারাবে! উপজেলা পর্যায়ের একজন ছাত্রনেতা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে, শর্ষের মধ্যে থাকা ভূতে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি এবং আদর্শপ্রীতি করে চাকরি দিচ্ছে-বাগাচ্ছে কিংবা ব্যবসায়ী জনগণকে জিম্মি করছে- এমন চিত্র এখানে দুর্লভ নয়। যারা অসুর তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতেই হবে! ঘুষখোরকে মসজিদের সভাপতি করলে আর দুর্নীতিবাজদের কাছে মন্দির ইজার দিলে, সেখানে ইবাদত-আরাধনা কতখানি শুদ্ধ ও পবিত্র থাকবে, তা যথেষ্ট সন্দেহের ব্যাপার! অথচ সেসবই বেশি হচ্ছে!

সমাজে রিপু প্রবেশ করেছে! অভিভাবকদের বৃহদাংশ সন্তানকে যেকোনোভাবে শিক্ষিত করতে চান, বৈধ-অবৈধ পথে চাকরি পাইয়ে দিতে চান! বেতন কত, তাতে কিছু যায় আসে না বরং কামাই কত, সেদিকেই লোভাতুর চোখ! এর পরিণাম ভালো নয়। সবাই যখন মন্দ পথে প্রতিযোগিতা করে, তখন ভালো মানুষের উৎপাদন কমে যায়। যে সমাজে ভালো মানুষরা কোণঠাসা, পদণ্ডপদবি এবং ক্ষমতার বৃত্ত থেকে বাইরে, সেখানে অরাজকতা তৈরি হয়। ৬ মাসের প্রজেক্টে ৬ বছর লাগে, শিক্ষা ব্যবসায়ীদের কাছে পণ্য হয় এবং শুদ্ধাচার ও নৈতিকতা শুধু কাগজ-কলমের পাঠে পরিণত হয়। শুদ্ধতার চর্চা যদি ব্যক্তির মধ্যে ডেভেলপ না করা যায়, তবে জেল-জরিমানা এসবে কোনো ফলাফল আনবে না! রাক্ষস ও অসুরদের দাপট ও দৌরাত্ম্যের লাগাম টানতে হবে। মন্দকে বন্দি করে ভালো মানুষকে সমাজে বাধাহীন বিচরণের সুযোগ দিতে হবে।

ভালো মানুষ গঠনের স্কিম খুব দ্রুত চালু করতে হবে। প্রচলিত রীতিনীতিকে ঘষেমেজে ভালোমানুষদের অনুকূলে নিতে হবে। টাকা আর ক্ষমতাকে জনতা ভীষণ সমীহ করে! তাদের প্রলোভনের যুজুতে ভুলিয়ে রাখা বড্ড সহজ এখানে! মাদকের বিস্তার, খেলাকেন্দ্রিক জুয়ার আসর- তরুণ প্রজন্মকে ভেতর-বাইরে চরমভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে! কিশোর গাংয়ের কবলে পুরো রাজ্য। ঘুষ যে অন্যায় এই বোধ পর্যন্ত হারিয়ে যাচ্ছে। বেগমপাড়ার খবর, বিদেশে দেদারসে অর্থপাচার- এসব সংবাদ চুনোপুঁটিদের বেশ উৎসাহ দেয়। রাঘববোয়ালদের দেশ তছনছ করার উৎসব একজন সৎ প্রধানমন্ত্রী এবং তার কয়েকজন সৎ রাজন্যদের দ্বারা শুদ্ধ করা অসম্ভব ঠেকছে! ঘাটে ঘাটে অনেকেই বাটি নিয়ে চাঁদা ভিক্ষা করছে! কেউ সিস্টেমে অভ্যস্ত না হলে তার থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে যারা রাতারাতি মূল্যবৃদ্ধি করে, সাধারণ মানুষের সর্বস্ব লুটুপুটে খায় এবং দেশের ভবিষ্যৎ আরেকদেশে পাচার করে তাদের রুখে দিতেই হবে। দেশবিরোধী আদর্শের আমদানিকারক এবং প্রচারকদের চিহ্নিত করে উৎখাত করতে হবে। সীমিত সম্পদের দেশটিতে অধিক জনসংখ্যায় ঠাসা। সম্পদের যদি সুষ্ঠু বণ্টন না হয়, তবে বৈষম্য শুধু প্রকট থেকে প্রকটতর হতেই থাকবে। তার খেসারতের পথে বোধহয় হাঁটছে দেশ! সর্বত্রই সিন্ডিকেটের রেশ। হঠাৎ কোটিপতিদের উৎপাতে সৎ মানুষ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরেছে। মানুষের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা হ্রাসের এ দায় কার, তা খতিয়ে দেখা দরকার। একজন ভালো মানুষের যে কদর সমাজে থাকা দরকার, তা মন্দদের উৎপাতে অনেকখানি মলিন হয়েছে। যে ধরতে পারে, মারতে পারে তার দিকেই তরুণ প্রজন্ম ঝুঁকে যাচ্ছে।