ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশ ব্যাংককেন্দ্রিক বিতর্ক

সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দরকার
বাংলাদেশ ব্যাংককেন্দ্রিক বিতর্ক

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে দিন দিন বিতর্ক বাড়ছে। এই দুটি বিতর্কটি রাজনৈতিক অঙ্গনকে স্পর্শ করেছে। অবিলম্বে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া না হলে মানুষের বিভ্রান্তি কাটবে না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি জটিলতায় রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওবায়দুর কাদের বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে যেসব তথ্য দেয়া থাকে, সেখান থেকে তথ্য নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে। সাংবাদিকরা কোনো উৎস থেকে সংবাদ সংগ্রহ করবেন, সেই নসিয়ত যদি ওবায়দুল কাদের দেন, তাহলে রাজনীতির নসিয়ত কে করবেন? সেই প্রশ্ন তো চলে আসে। বাস্তবতা হচ্ছে- বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ডলার চুরি কিংবা পাচারের খবর থাকে না বলেই তো সাংবাদিকরা ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন উৎস থেকে সংবাদ সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগেও ডলার চুরি হয়েছে আবার নতুন করে বিপুল অঙ্কের ডলার হাত ছাড়া হওয়ার খরর আমাদের একটি প্রতিবেশী দেশের পোর্টাল পরিবেশন করেছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকে রহস্যজনক আগুনের খবর যদি গণমাধ্যম উদ্ঘাটন করতে না পারে, তাহলে অনেকেই তা জানতে পারবে না। খবরের পেছনে, খবরের সন্ধানে থাকে গণমাধ্যম কর্মীরা। তারা এই রিজার্ভ নিয়ে ব্যাংকার কিংবা অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছেন। আর ওবায়দুল কাদের যা বলেছেন, তা শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য। সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে জর্জরিত করে, কোনো রাজনৈতিক নেতা খুব একটা সুবিধা করতে পেরেছেন এমন নজির বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কীভাবে বাড়বে ওবায়দুল কাদের সেই দিকনির্দেশনা দিলে বরং মানুষ আশ্বস্ত হতো। পৃথিবীর কোনো দেশে সেন্ট্রাল ব্যাংকে সাংবাদিকরা ঢুকতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন ওবায়দুল কাদের করেছেন। তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম পারে না। বিশ্বের কোনো কোনো দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়, সেই খবর কি ওবায়দুল কাদের দিতে পারবে না? সেই প্রশ্নটাও জাগে। দেশের গণমাধ্যম সরকারের প্রতিপক্ষ নয়। সরকার ও গণমাধ্যমের লক্ষ্য জনগণের কল্যাণ। তবে এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে, গণমাধ্যমের খবর থেকে সরকার দেশের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির ডেপুটি গভর্নর খুরশিদ আলম জানিয়েছেন, সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে যেতে বাধা নেই। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে- এটা মিথ্যা প্রচার। সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার জন্য তিনজন কর্মকর্তার পাশাপাশি তিনজন ডেপুটি গভর্নরও কাজ করছেন। বাস্তবতা হচ্ছে সাংবাদিকদের তথ্য দেয়ার জন্য মোট ৬ জন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে ওবায়দুল কাদেরের এই তথ্যটি জানা থাকলে তিনি এমন বিতর্কিত বক্তব্যটি হয়তো দিতেন না। বাংলাদেশের ব্যাকিং ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে সাধরাণত নানা প্রশ্ন জাগে। দিনে অন্তত একবার হলেও মনে হয়, গচ্ছিত টাকা কি ব্যাংক নিরাপত্তা দিতে পারবে! একটার পর একটা দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারের এই পদক্ষেপ সম্পর্কে যথার্থভাবে অবহিত না থাকার কারণে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়ছে। মানুষ এখন জানতে চায়, আসলে ব্যাকিং খাতে কি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ নিয়ে ব্যাংক বলে এক কথা। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল-আইএমএফ জানায় আরেক কথা। আমাদের দেশের অর্থনীতিবিদরা বলেন আরেক কথা। ব্যবসায়ীরাও একটা নিজস্ব মতামত দেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিন রাজনীতি করেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি তিনি। তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি আছে কি নেই কিংবা রিজার্ভের বর্তমান স্থিতি কত- সেটি স্বস্তিকর, নাকি অস্বস্তিকর- সেটা তার জানা উচিত ছিল। তিনি অহেতুক একটা বিতর্ক সৃষ্টি করলেন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিয়ে খবরের যে ডালপালা দিন বাড়ছে, তা রোধ করার জন্য একটা পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে। তা না হলে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বাদানুবাদের জন্ম নেবে এবং সাধারণ মানুষ দেশের ব্যাকিং খাত নিয়ে আরো বেশি হতাশা প্রকাশ করবে। সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ও তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। সংস্থাটি গত বুধবার এক স্পষ্টীকরণ বার্তায় জানিয়েছে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এই মর্মে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। তারা জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের জনগণের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে বলে জানায়। স্পষ্টীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে দেশের জনসাধারণের কাছে সব প্রদানযোগ্য তথ্য প্রদানে বদ্ধপরিকর। তাই গণমাধ্যমকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রদানযোগ্য সকল তথ্য সংগ্রহ ও পরিবেশনে কতিপয় পদ্ধতি অনুসরণ করছে তারা। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কিত গণমাধ্যমে প্রদানযোগ্য তথ্য প্রদান, তার ব্যাখ্যা ও সম্পূরক তথ্যাদি প্রদানে নির্বাহী পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা মুখপাত্র হিসেবে এবং পরিচালক পর্যায়ের দুইজন কর্মকর্তা সহকারী মুখপাত্র হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। যে কোনো সংবাদকর্মী অফিস চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল ভবনে প্রবেশ করে এই কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ ও বক্তব্য গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়া কোনো বিশেষ প্রয়োজনে কোনো নির্দিষ্ট কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রবেশ পাস গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে সংবাদকর্মীরা প্রয়োজনীয় তথ্যাদির ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে পারেন। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে প্রেস কনফারেন্স, প্রেস রিলিজ ও অন্যান্য মাধ্যমে সংবাদকর্মীদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করছে। এছাড়া অবাধ তথ্য প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক তার সংরক্ষিত সকল অর্থনৈতিক তথ্য ও উপাত্ত ওয়েবসাইটে নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে আসছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার আছে কি না, সেটা স্পষ্ট করা হয়নি। এটা স্পষ্ট হোক- বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা যেতে পারবেন কি পারবেন না। তবেই সব বিভ্রান্তির অবসান হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত