আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হয়ে বাঁচার মাঝেই কৃতিত্ব!

রাজু আহমেদ

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মানুষ তার গ্রেডের সমান বড় নয় বরং তার স্বপ্নের সমান বড়! একজন বড় চাকুরে আর একজন বড় মানুষ- দুটি ভিন্ন বিষয়কে একসাথে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। কত বড় বড় পেশায়, কত বড় বড় চেয়ারে কত কত ছোটলোক আছে- যা রীতিমতো হতাশ করে! বড় সাহিত্যিক আর মহান সাহিত্যিকের মধ্যে যে প্রভেদ তা বোঝার জন্য নিজস্ব বোধবুদ্ধি থাকতে হয়। ভাইরাল মানবহিতৈষী আর মানবিক মানুষ- এই দুইয়ের ব্যবধান করতে পারি না বলেই বিব্রত হই এবং রোজ রোজ বিশ্বাসভঙ্গের দায় নিই!

বয়সে জুনিয়র হোক কিংবা সিনিয়র, ক্ষমতায় এগিয়ে থাক কিংবা পিছিয়ে- কারো যখন অন্যায় আব্দার করতে হয়, অবৈধ কিছুর জন্য সুপারিশ করতে হয় তখন নিজেকে ছোট ভাবতেই হয়! মানুষ হিসেবে ছোট-বড় না হলেও স্বার্থের জন্য আমাদের ছোট-বড় হতে হয়! যিনি যত বেশি সুযোগ-সুবিধার খোঁজ-খবর রাখেন, যার যত বেশি সুযোগের দরকার হয় তার মাথা তত বেশি কুর্নিশের অবস্থানে নোয়াতে হয়! নচেৎ মেরুদণ্ড সোজা করে, শির উঁচু করে বাঁচা যায় না। লোভের মোহে আমরা স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলি! হয়তো দুই টাকায় বিক্রি হই!

একজন সৎ মানুষ কখনোই, কারো কাছেই ছোট হন না। তার কারো জন্য কোনো সুপারিশ থাকে না কিংবা নিজের জন্য কিছু কামনা করেন না। কাজেই কারো কাছে মাথা নত করার, হুজুর হুজুর করার কোনো প্রশ্নই আসে না। সৎ মানুষকে তার চাকরির সাথে কিংবা অবস্থানের সাথে কারো চাকরি বা অবস্থানের তুলনা করে হতাশ হতে হয় না! রাষ্ট্র যদি কোথাও অবিচার করে সে ব্যর্থতা রাষ্ট্রের! তবে যিনি আপাদমস্তক সৎ তিনি ঠেকে যেতে পারেন তবে চিরকালের জন্য থেমে যান না! তার জন্য উত্তম বিনিময় অপেক্ষা করে।

কে সমাজে কত দাপটের সাথে চলেন, কে কতখানি ক্ষমতা দেখান- এসবের মধ্যে ব্যক্তিত্বের কৃতিত্ব নেই বরং ভালো চাকরি করেও কে কতখানি বিনীত, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কে কতখানি শান্ত- এসবই ব্যক্তিত্ব পরিমাপের পারদ। অর্থ থাকলেই উগ্রতা দেখাতে হয় না, ক্ষমতা থাকলেই তা দিয়ে কারো ক্ষতি করতে হয় না। বরং সদাচারের চর্চা করা, বিনয় ধারণ করা এবং আনুগত্য লালন করার মধ্যেই মানুষের সফলতার সুভাষ ও সৌন্দর্য নির্ভর করে। দাপট দেখিয়ে মানুষকে তটস্থ রাখার মধ্যে কল্যাণ নেই। সসীম জীবের ক্ষমতাণ্ডদম্ভ কতদিন স্থায়িত্ব পায়? একদিন সাধারণের কাতারে দাঁড়াতেই হয়! সেদিন যাতে লোকে ঘৃণা না করে! বটবৃক্ষের শাখারা যাতে ছায়া সরিয়ে না নেয়!

কে কত সম্পদের মালিক, কে কত শিক্ষিত কিংবা কার কত যোগ্যতা আছে তা বিনয় দেখে মাপা হয়। সৎ মানুষের মধ্য দম্ভণ্ডঅহংকার, হিংসা কিংবা লোভ থাকে না। কারো ক্ষতিতে তাদের নাম জড়িয়ে থাকে না। মানুষ যখন স্বার্থান্ধ না হয়, মন্দ পথের তালাশ না করে তখন কোনো মানুষ অপমান-অপদস্ত হয় না। কারো কাছে ছোট হয় না। কারো সামনে গিয়ে কাচুমাচু করে দাঁড়াতে হয় না। সততার যে শক্তি, ন্যায়ের যে সৌন্দর্য তা জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ শোভা ধারণ করে। যে মানুষ কখনো অবৈধ পথে পা বাড়ায় না, কারো ক্ষতির চিন্তা করে না- সে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকে। তাকে প্রশান্তি দেওয়া, তাকে ভালো রাখার এবং সর্বত্র সন্তুষ্ট হওয়ার পরিবেশ ঐশ্বরিক ওসিলা দ্বারা নিশ্চিত হয়।

সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য, সম্মানের সাথে টিকে থাকার জন্য এবং মানুষের ভালোবাসা অর্জনের জন্য সততা ও ন্যায়পরায়ণতাই যথেষ্ট। ন্যায়-অন্যায় খুঁজে, ভালো-মন্দ বুঝে সামনের দিকে পা ফেললে কোথাও লাঞ্ছিত হতে হয় না। অনেক আছে অথচ শান্তি না থাকা এবং প্রয়োজনীয় অংশ টানে-মানে আছে এবং তাতে বারাকাহ থাকাণ্ড এর মধ্যকার উত্তম অংশ বিবেক দিয়ে বাছাই করতে হবে। দিনশেষে ভালো থাকা জরুরি, বিবেকের দংশন থেকে বেঁচে থাকা খুব দরকারি। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হয়ে বাঁচার মাঝে কৃতিত্ব আছে!

স্বার্থপর ও অসৎ হয়ে রাজা-রানির বেশে বেঁচে থাকাও নিরর্থক! মরার আগেই মরার মাঝে সাফল্য নেই বরং মরার পরেও বাঁচতে হবে। বিবেক বেচে দিয়ে, নিজেকে বিকিয়ে দিয়ে টেবিলে টেবিলে আত্মগ্লানি নিয়ে অবহেলা বয়ে বেড়ানোর মাঝে বিবেকবানগণের জীবনের জন্য শুভ বার্তা নেই। বরং ছায়া দেখে, নাম শুনে মানুষের মনে ভালোবাসা জাগরুক হোক- কর্ম ও চিন্তায় এইটুকু এই একজীবনে অর্জন করতেই হবে। তাতে যা যা বর্জন করতে হয় তা ছেড়ে দিতে দ্বিতীয়বার ভাববার অবকাশ রাখা ঠিক নয়। মানুষ হয়ে ওঠার দৌড়েতে শেষ সামনের কাতারে সামিল থাকতে হবে।