ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাজার মনিটরিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপ দ্রুত রোধ করা দরকার
বাজার মনিটরিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

বাজার মনিটরিংয়ে খুব কঠোরভাবে মনিটরিং করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এই নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করার নির্দেশনা দিয়ে বাজারে পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখারও নির্দেশনা দেন তিনি। সরবরাহ ঠিক থাকার পরও বাজারে কৃত্রিম মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা রোধে কঠোরভাবে যেন বাজার মনিটরিং শুরু করা হয় প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন। ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ানোর ফলে এর একটা নেতিবাচক প্রভাব বাজারে এরইমধ্যে পড়েছে। পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। হু হু করে বেড়ে গেছে ভোগ্য পণ্যসহ বিভিন্ন জিনিসিপত্রের দাম। ফলে বেসামাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তাদের ব্যয় বাড়লেও, বাড়ছে না আয়। ফলে সংসার চলাতে হাঁসফাঁস উঠেছে তাদের। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বেশিরভাগ সময় সিন্ডিকেটের দিকে আঙুল তোলা হলেও এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। বিশেষ করে উৎপাদন বেশি হলেও বাজারে ঠিকমতো সরবরাহ হয় না। আবার উৎপাদন ও আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রভাবও পড়েছে অনেক পণ্যের দামে। সরকারি যেসব তথ্য দেওয়া হয়, সেখানেও প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে তারতম্য থাকে। বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেট বা ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে বিভিন্ন সময় দায়ী করা হয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ও সরকারের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে। কয়েক মাস ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। শ্রমজীবীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। চাল, ডাল, চিনি, তেলসহ প্রায় প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। খাদ্য মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। জীবনধারণের জন্য খাদ্য অত্যাবশ্যক, আবার সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ পুষ্টিমানসম্পন্ন ও সুষম খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। একজন মানুষ যখন তার প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন না, তখন তিনি কোনো কাজই ঠিকঠাক করতে পারেন না। নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। শত চেষ্টা করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কিন্তু কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, এমন প্রশ্ন প্রতিটি সাধারণ মানুষের কাছে নিয়মিত ঘুরপাক খাচ্ছে।

সোজা কথায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এখন একটি আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা শুনলেও মানুষ ততটা ভয় পান না, যতটা এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ে পাচ্ছেন। অল্প বেতনে ঠিকমতো ডাল-ভাত যাদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব হয় না তাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার উচ্ছা অপূরণীয় থেকে যায়। এই পুষ্টিহীনতা নিয়ে আমাদের দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের কর্মক্ষমতা অথবা কর্মদক্ষতা স্বাভাবিকভাবেই কমে আসছে। মানুষ ঠিকমতো খেতে না পারলে উন্নয়নের সার্থকতা ম্লান হয়ে যায়। দেশের মানুষ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। দ্রব্যমূলের বিষয়টি সরকারের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত। দ্রব্যমূল্য কীভাবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা যায়, সেদিকে নজর দিয়ে মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। অবিলম্বে সিন্ডিকেটের অবসান হওয়া জরুরি। বাজারের অস্থিরতা দূর করতে হলে অবশ্যই অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দমন করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিত্যপণ্যের বাজারে কেউ যেন কারসাজি না করে, সেদিকে নজর দিতে হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়কে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে। যারা অনিয়ম করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সাধারণ শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ যেসব সম্মানজনক পেশার সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছেন তাদের মাসিক আয় দিয়ে পুরো মাস সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে কারণে বর্তমান সমাজের জন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি একটি অন্যতম বড় সমস্যা। এমনভাবে চলতে থাকলে মানুষের জীবনমান যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়। সাধারণ মানুষের নানা অভাব-অনটন স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনে প্রধান অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। খাদ্য জোগাড় করা যেন এখন লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।

সাধারণত চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের সমন্বয় করে পণ্য উৎপাদিত হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে অর্থনীতিসহ মানুষের জীবনযাপনের অবনমন ঘটে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয় করার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। ব্যাংকিং ও সঞ্চয়পত্র খাত চরম আমানত সংকটে ভুগছে। যেসব সাধারণ মানুষ সঞ্চয় করেছিল, তারা জীবনযাপনের খরচ চালাতে সঞ্চয় ভেঙে এবং ব্যাংকে জমানো টাকা তুলে নিঃশেষ হয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরাও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের ওপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ ক্রমবর্ধমান চাপ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোধ করা প্রয়োজন। এমনি পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা অত্যন্ত সময়োপযোগী। তবে সরকারপ্রধানের এই নির্দেশনা যত বেশি কার্যকর হবে ততই মঙ্গল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত