ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এমপি আনার খুন উদ্বেগজনক

ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে
এমপি আনার খুন উদ্বেগজনক

ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। গত ১২ মে তারিখে তিনি দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। এরপর থেকে তার পরিবার এবং স্টাফদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে নানা আশঙ্কা ডালপালা বিস্তার করতে থাকে। কয়েক দিন ধরে দুই দেশের পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা শেষে গত মঙ্গলবার আনারের নিহত হওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়। কলকাতা পুলিশ তার হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলার আগেই বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, আনার হত্যাকাণ্ডে ভারতের কেউ জড়িত নয়। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার এক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, দেশি-বিদেশি চক্রের পরিকল্পনায় এমপি আনার খুন হয়েছেন। তবে তার মরদেহ এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। প্রথমে পুরোনো বন্ধু গোপালের বাসায় উঠলেও ১৩ মে তারিখে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেন্সের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে গমনের পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। কথিত ফ্ল্যাটে রক্তের নমুনা পাওয়া গেছে এবং লাশ টুকরো টুকরো করে গুম করা হয়েছে বলে তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে অনুমান করছেন। তিনবারের একজন সংসদ সদস্যের প্রতিবেশি দেশের মাটিতে এমন রহস্যজনকভাবে খুন হওয়ার ঘটনায় হত্যাকাণ্ড নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। দেশে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরদারির বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মামলার সাক্ষী, বিরোধীদলের নেতাকর্মী গুম হওয়া এবং ভারতের মাটিতে খুঁজে পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এবার সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্য সেখানে গিয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্রের যোগসাজশের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে নানা ধরনের তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। স্বর্ণ চোরাচালান হুন্ডির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলেও গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত কনটেন্টে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আনোয়ারুল আজিমের ব্যক্তিগত জীবন যেমনই হোক, তিনি একজন সংসদ সদস্য। বিদেশে তিনি বাংলাদেশের লাল পাসপোর্ট ধারণ করেন বিধায় কূটনৈতিক ইমিউনিটির পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবেই গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ নজরদারিতে থাকার কথা। তার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কলকাতা পুলিশের একেবারেই কিছু জানতে না পারা সত্যিই বিস্ময়কর। আমরা আশা করি, কলকাতা পুলিশ শেষ পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তে সফল হবে। ভারতে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকাণ্ডের পর দেশের রাজনীতিতে কালোটাকা ও মাফিয়াতন্ত্র সম্পর্কে নতুনভাবে আলোচনা চলছে। রাষ্ট্রের আইন প্রণেতা হিসেবে একজন সংসদ সদস্য পবিত্র দায়িত্ব পালনে শপথবদ্ধ। বিদেশেও তিনি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের অনেকের রাতারাতি অগাধ অর্থের মালিক বনে যাওয়া স্বাভাবিকভাবেই বিরূপ প্রশ্নের জন্ম দেয়। দেশে-বিদেশে সম্পদের প্রাচুর্য, অর্থ পাচার করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দেয়ার পেছনে একশ্রেণির রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ব্যবসায়ীর ভূমিকা নতুন কিছু নয়। দেশে-বিদেশে প্রতিদিনই নাগরিকরা অপঘাত মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। আনার হত্যাকাণ্ড কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বাংলাদেশে নাগরিক গুম বা নিখোঁজ হওয়ার পর ভারতে তুলে নেয়ার ঘটনা, কিংবা ভারতে এমপি খুন হওয়ার মতো ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্রকে নতুনভাবে ভাবতে হবে। অপরাধী যারাই হোক, তাদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। নিহতের লাশ উদ্ধারে কলকাতা পুলিশ সফল হোক- এটাই প্রত্যাশিত। এমপি আজীমের কন্যা, পরিবারের সদস্যরা এবং ঝিনাইদহের নিজ এলাকার মানুষ স্বজন হারানোর শোক বুকে নিয়ে প্রিয়জন হত্যার বিচার চায়। হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজনৈতিক ব্লেইম গেম কাম্য নয়। কোনো রাজনীতিবিদ কিংবা সাধারণ নাগরিকের এমন নৃশংস মৃত্যু কারো কাম্য হতে পারে না। আনার হত্যার অনুপুঙ্খ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত