মুসলিম সাহিত্য জাগরণে কবি নজরুল

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাঙালি মুসলমান সবসময় একপা এগিয়ে দুইপা পিছিয়েছে। শিক্ষার অভাব, অন্তর্দ্বন্দ্ব, চাটুকারিতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার সবকিছু কুরে কুরে খেয়েছে বাঙালির মস্তিষ্ক। তাই এদের মাথা ভরে গেছে গুবরে পোকায়, সবসময় মাথা থেকে বের হয়েছে গুবরে পোকার মিছিল। বাংলার অশিক্ষিত মুসলমানরা গোঁড়া এবং শিক্ষিত মুসলমানরা ঈর্ষাপরায়ণ। পাছে লোকে কিছু বলে, হবে কি হবে না এরকম ভাব বাঙালির মনে আসন গেড়েছে, ফলাফল যথারীতি শূন্য। বাঙালি মুসলমান আজ পেছনের বেঞ্চে ঘুমায়, ঝিমায়, আর ভুল বকে অনবরত; কিন্তু বুক ফুলিয়ে চলতে চায়। নিজের ভাগে কম পড়লে এরা আকাশ-বাতাস মুখরিত করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয়। এমন ঘুণেধরা বাঙালি মুসলমানের মনে চেতনার দীপশিখা জ্বালিয়ে দিতে যুগে যুগে কিছু মুসলিম সাহিত্যিক এসেছেন ধরায়, জ্বালিয়েছেন মুসলিম মনের মাঝে ইসলামি চেতনার দীপশিখা, কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বোধকরি তাদের ভেতরে এক অনন্য সাধারণ পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘ইসলামের সত্যিকার প্রাণশক্তি, গণশক্তি, সাম্য, সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব ও সমানাধিকার’। বাংলা সাহিত্যে নজরুলের আগমন অনেকটা ধূমকেতুর মতোই অকস্মাৎ। নিম্নে এই মহান কবির সাহিত্য প্রতিভা ও মুসলিম সমাজে ইসলামের আন্তপ্রেরণা জাগিয়ে তোলায় তার অবদান সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

কিছু মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ প্রতিভা নিয়ে জন্মান। শিম গাছের মতো যারা বেড়ে ওঠেন না, বরং খেজুর গাছের মতো শক্ত সমর্থ হয়ে মাউন্ট এভারেস্টের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চান। খেজুর গাছে কাঁটা থাকে তাই ছাগলেও খেজুর গাছকে এড়িয়ে চলে, পাছে কাঁটা বিঁধে যায়! খেজুর গাছের মতো নজরুল মানুষের মনে কাঁটা ফুটিয়ে দিয়ে তার বিবেককে আন্দোলিত করতে চেয়েছিলেন। ফররুখ আহমেদ, গোলাম মোস্তফা, মাওলানা আকরম খাঁ, আবুল মনসুর আহমদ ও কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বাঙালি মুসলমান কবি ও সাহিত্যিকদের ভেতরে পঞ্চরত্ন যারা মুসলিম জাতিসত্তা নিয়ে ভেবেছিলেন, সাহিত্যকর্মের মধ্যে দিয়ে মুসলিম জাগরণকে বেগবান করতে চেয়েছিলেন। যদিওবা অনেক সময় চরমপন্থি কতিপয় মুসলমানের অভিযোগের তীর তাদের দিকে ধেয়ে এসেছে। যেমনভাবে নজরুল একটি অভিভাষণে আক্ষেপ করে বলেছেন- ‘কেউ বলেন, আমার বাণী যবন, কেউ বলেন, কাফের। আমি বলি ও দুটোর কিছুই নয়। আমি মাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি’।

দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো যে, নজরুল একজন অসাম্প্রদায়িক কবি যিনি সাধারণ মানুষের জন্য লিখেছেন, মানবতার গান গেয়েছেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছেন। যার স্বীকৃতিস্বরূপ নজরুলকে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে এনেছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নজরুলকে আজ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে নজরুলের অবস্থান দেখলে মনে হবে যে, আকাশের সবচেয়ে কম দীপ্তিমান তারাটি হলো নজরুল, নিভু নিভু আলোয় কোনোমতে টিকে আছেন। অনেকটা নিজ ঘরে পরবাসী হয়ে।

আমরা নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করেছি সত্য; কিন্তু মনের দিক দিয়ে মেনে নিতে পারিনি কিংবা তাকে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি। নজরুলকে আমরা উচ্চাসনে বসিয়ে দিয়ে তার থেকে মই কেড়ে নিয়েছি। তাইতো তার দশা হয়েছে আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতির মতো, সব কাজ তার নামে হয়; কিন্তু তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাত তুলে মোনাজাত করা ভিন্ন বাড়তি কিছু করার ক্ষমতা পান না। এ যাবৎকাল নজরুলের উপর পিএইচ.ডি করেছেন মাত্র দুইজন গবেষক। একজন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও অন্যজন হলেন করুণাময় গোস্বামী। নজরুলের উপর পঠনপাঠন বেশ কমই হয়েছে বলতে হবে। নজরুল যে বিদ্রোহের গান গেয়েছিলেন সেই বিদ্রোহ আজ রহিত হয়ে গেছে, বাঙালি মুসলমান আজ নির্জীব-অসার। এরা প্রতিবাদ করবে কি, এরা তো জানেই না তাদের প্রতিবাদের বিষয়টি কি!

নজরুল ছিলেন ভীষণভাবে অসাম্প্রদায়িক। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবচেয়ে বড় প্রবক্তা ছিলেন তিনি। অসাম্প্রদায়িক ছিলেন বলেই বাঙালি কিংবা বাংলাদেশি যাই বলি না কেন, মানুষের শ্রদ্ধা অনেকটাই টিকে আছে। সাম্প্রদায়িক হলে তার নাম হারিয়ে যেত অন্ধকার গহবরে। নজরুল অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ তাকে পুরস্কার দিয়েছে ১৬.৪ নম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে কোর্স পদ্ধতিতে অনার্সে ৩২০০ নম্বরের মধ্যে নজরুল সাহিত্য পড়ানো হত মাত্র ৪৫ নম্বর। ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষে সেমিস্টার পদ্ধতিতে মোট ৭৫ নম্বর পড়ানো হয়েছে। কিন্তু ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের নতুন সিলেবাসে ৩০০০ নম্বরের মধ্যে নজরুল সাহিত্যের জন্য বরাদ্দ মাত্র ১৬.৪ নম্বর। নজরুলের নামটা যে সিলেবাস থেকে উঠে যায়নি, এটাই এখন সান্ত¦নার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলো পত্রিকাতে ২০১২ সালের ২৫ মে সাংবাদিক হারুন-আল-রশীদ ‘তিন হাজার নম্বরের মধ্যে নজরুলের জন্য মাত্র ১৬’ শিরোনামে একটা প্রতিবেদন লেখেন। কিন্তু সিলেকশন কমিটির টনক নড়ানোর জন্য তা যথেষ্ট ছিলনা। তার দোষ ছিল একটাই, তিনি সাম্যবাদী চেতনায় প্রচণ্ড রকম অসাম্প্রদায়িক হলেও ইসলামী চেতনার দীপ্ত সুধারস মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে দিতে কোনোরূপ কুণ্ঠাবোধ করেননি। ফলে নজরুল রয়ে গেলেন বাঙালি সমাজে অবহেলিত। এখান থেকেই ফুটে উঠে আমাদের তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতার প্রবক্তাদের আসল চেহারা। দরজার আড়ালে এই জ্ঞানপাপীরা নিজেরাই যে কি পরিমাণ নগ্ন সাম্প্রদায়িক, তার প্রমাণে দ্বিতীয় কোনো উদাহরণের প্রয়োজন আছে কি?

নজরুল যেমন সমাজের বিষফোঁড়াসমূহে সুচ ঢুকিয়ে গুঁতা দিয়েছেন, তেমনি ইসলামি ভাবধারার মর্মমূলে জাতিকে দাঁড় করাতে চেয়েছেন বারংবার। তার অসংখ্য কবিতায় ইসলামি চেতনা ও ঐতিহ্যের ছাপ দৃশ্যমান। বাকশক্তি হারিয়ে ফেলার আগে নজরুল মুসলিম জাতিকে দিয়েছেন অসংখ্য কবিতা, ইসলামি গজল, হামদ, না’ত। যা দিশাহীন নাবিককে দেখিয়েছিল পথ, ভীরুর প্রাণে সঞ্চারিত করেছিল বাঁচার আশা, ঘুমন্ত মানুষকে দিয়েছিল জাগরণের চেতনা। তাইতো নজরুল আজ বাঙালি মুসলিম জাতির চেতনার উৎসে পরিণত হয়েছেন। ‘জিঞ্জির’ কাব্যের একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা হলো ‘ঈদ মোবারক’ যেখানে নজরুল মুসলিম সাম্যের জয়গান গেয়েছেন। ঈদ এমন এক উৎসব যেখানে মুসলিম জামাত সকল বাঁধা, শঠতা ভুলে গিয়ে এক কাতারে শামিল হয়। তিনি বলেন,

ইসলামে বলে, সকলের তরে মোরা সবাই,

সুখ-দুখ সমণ্ডভাগ ক’রে নেব সকলে ভাই।

বড়-ছোট, ধনী-গরিবের ব্যবধান ইসলাম কখনও মেনে নেয় না, বরং ছোট-বড়র মধ্যে এক চমৎকার সহাবস্থান সৃষ্টিতে ইসলাম বদ্ধপরিকর। নজরুল এ বিষয়টিকেই মূল লাইটহাউস ধরে তাঁর কলমের ছোঁয়ায় মুসলিম জাতিকে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য সাহিত্যকর্ম। তিনি বলেন,

আজি ইসলামী-ডঙ্কা গরজে ভরি’ জাহান,

নাহি বড় ছোট-সকল মানুষ এক সমান।

ঈদ হলো মুসলিম জাতির আত্মার মিলন, এই ঈদে ধনী-গরিব সকলের আনন্দ করার অধিকার রয়েছে। ইসলাম শান্তির ডালি নিয়ে গরিব-ধনী সকলের গৃহে আনন্দের প্লাবন বইয়ে দেয়। ধনী যেমন যাকাত দেবে, আর গরিব মুসলিম সেটা গ্রহণ করে সকলে মিলে আনন্দের স্রোতধারায় ভেসে যাবে। নজরুল জাকাতের ইঙ্গিত দিয়ে তাইতো বলেন,

বুক খালি ক’রে আপনারে সাজ দাও যাকাত,

ক’রো না হিসাবী, আজি হিসাবের অঙ্কপাত!

মুসলিমদের করুণ অবস্থা দেখে নজরুল মর্মাহত হয়েছিলেন প্রবলভাবে। একইভাবে মর্মাহত হয়েছিলেন এক আমেরিকান নও-মুসলিম, তিনি বলেছিলেন, ‘মেঘ যেমন সূর্যকে আড়াল করে রাখে, মুসলমানরাও তেমনি ইসলামকে আড়াল করে রেখেছে’। মুসলমানরা আজ মেরুদণ্ডহীন প্রাণীতে পরিণত হয়েছে, এখন তাদের লেজেগোবরে অবস্থা। বিখ্যাত দার্শনিক জর্জ বার্নাড’শকে একবার তার এক খ্রিষ্টান বন্ধু বলেছিলেন যে, ‘আপনি ইসলামের প্রতি যখন এতই অনুরক্ত, তখন ইসলাম গ্রহণ করলেন না কেন?’ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এই ইসলাম গ্রহণ করতে রাজি; কিন্তু কোথায় সেই মুসলিম সমাজ যেখানে প্রকৃত মুসলমান হয়ে আমি বসবাস করতে পারব’? নজরুলও আক্ষেপ কম করেননি, তিনি বলেছিলেন-

‘আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান, কোথা সে মুসলমান। কোথা সে আরিফ, অভেদ যাহার জীবন-মৃত্যু জ্ঞান’। মুসলমানদের মুনাফেকী চরিত্র দেখে নজরুল আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘খালেদ! খালেদ! সবার অধম মরা হিন্দুস্তানী, হিন্দু না মোরা মুসলিম তাহা নিজেরাই নাহি জানি! সকলের শেষে হামাগুঁড়ি দিই, না, না, বসে বসে শুধু মুনাজাত করি, চোখের সুমুখে নিরাশ সাহারা ধূ-ধূ! দাঁড়ায়ে নামাজ পড়িতে পারি না, কোমর গিয়াছে টুটি, সেজদা করিতে ‘বাবাগো’ বলিয়া ধূলিতলে পড়ি লুটি’! পিছন ফিরিয়া দেখি লাল-মুখ আজরাইলের ভাই, আল্লা ভুলিয়া বলি, ‘প্রভু মোর তুমি ছাড়া কেউ নাই’। মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে নিঃশঙ্কচিত্তে নজরুল গেয়েছেন, ‘আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়।

আমার নবী মোহাম্মদ; যাহার তারিফ জগৎময়। আমার কিসের শঙ্কা, কোরআন আমার ডঙ্কা, ইসলাম আমার ধর্ম, মুসলিম আমার পরিচয়। ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি আমার জিহাদণ্ডবাণী।

মুসলিম জাতি যুগের পর যুগ পরাধীন থেকেছে, শোষণের সহজ শিকার হয়েছে ব্রিটিশ বেনিয়াদের কাছে। আর নজরুল উৎসাহ জুগিয়েছেন এইসব পথভোলা মানুষদের, জাতিসত্তা আর সাম্যের গান শুনিয়েছেন বারংবার। তার ভাষায়- ‘ধর্মের পথে শহীদ যাহারা আমরা সেই সে জাতি সাম্য মৈত্রী এনেছি, আমরা বিশ্বে করেছি জ্ঞাতি। শুধু মুসলমানের লাগিয়া আসেনি’ক ইসলাম, সত্য যে চায় আল্লায় মানে মুসলিম তারি নাম। আমীরে ফকিরে ভেদ নাই, সবে ভাই, সব এক সাথী। আমরা সেই সে জাতি’।

ইসলামে নারীর মর্যাদা পুরুষের সমান, এটা নজরুলও প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন তার কবিতায়- ‘নারীকে প্রথম দিয়াছি মুক্তি, নর-সম অধিকার, মানুষের গড়া প্রাচীর ভাঙিয়া করিয়াছি একাকার আঁধার রাতের বোরখা উতারি এনেছি আশার ভাতি- আমরা সেই সে জাতি’।

মুসলিম জাতি দিশা হারিয়ে দিগি¦দিক ছুটে চলেছে শুধু নিজেদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে না জানার কারণে। অলস মুসলিম জাতির হীনমন্যতা, আন্তঃকলহ ও সঠিক আক্বিদা-আমল থেকে বিচ্যুত হয়ে শিরক-বিদাতে লিপ্ত হওয়ার অদ্ভুত মহড়া দেখে ব্যথিত কবি তাই লেখেন- ‘খালেদ’ শিরোনামে এক বিশাল কবিতা। এই কবিতায় তিনি লিখেছেন,

তাওহিদের হায় এ চির সেবক ভুলিয়া গিয়াছো সে তাকবীর-দুর্গা নামের কাছাকাছি প্রায় দরগায় গিয়া লুটাও শীর ওদের যেমন রাম নারায়ণ মোদের তেমন মানিক পীর ওদের চাউল ও কলার সঙ্গে মিশিয়া গিয়াছে মোদের ক্ষীর ওদের শিব ও শিবানির সঙ্গে আলী ফাতেমার মিতালী বেশ হাসানরে করিয়াছি কার্তীক আর হোসেনরে করিয়াছি গজ গনেশ বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে, আমরা তখনও বসে, বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি ফেকা ও হাদিস চষে! হানাফী ওহাবী লা-মজহাবীর + তখনো মেটেনি গোল, এমন সময় আজাজিল এসে + হাঁকিল ‘তলপী তোল’! ভেতরের দিকে যত মরিয়াছি + বাইরের দিকে তত গুনতিতে মোরা বাড়িয়া চলেছি + গরু ছাগলের মতো! নজরুল পবিত্র কালামের মাহাত্ম্য বর্ণনা করে এর ফজিলতের কথা স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। যেমন- কালেমা শাহাদতে আছে খোদার জ্যোতি। ঝিনুকের বুকে লুকিয়ে থাকে যেমন মোতি।। ঐ কলেমা জপে যে ঘুমের আগে,

ঐ কলেমা জপিয়া যে প্রভাতে জাগে, দুখের সংসার সুখময় হয় তার- মুসিবত আসে না কো, হয় না ক্ষতি। নজরুল ভীরু-কাপুরুষ হয়ে পড়া মুসলিম জাতির মাঝে কীভাবে সাহসের সঞ্চার করেছেন তা উপলব্ধি করা যায়, তাঁর একটি গানের মধ্যে- উঠুক তুফান পাপ-দরিয়ায়- আমি কি তায় ভয় করি/ পাক্কা ঈমান-তক্তা দিয়ে /গড়া যে আমার তরী।। দাঁড় এ তরীর নামাজ, রোজা, হজ্ব ও জাকাত, উঠুক না মেঘ, আসুক বিপদণ্ডযত বজ্রপাত, আমি যাব বেহশত-বন্দরেতে এই যে কিশতীতে চড়ি।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটা স্তম্ভ হলো- জাকাত। জাকাত ধনী ও গরিবের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। সমাজের মানুষের মাঝে সাম্য প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে জাকাত প্রদানের কোনো বিকল্প নেই। আজ ধনী যদি তার জাকাত সময়মতো পরিশোধ করত, তাহলে মানুষের দরিদ্রতা অনেকাংশে কমে যেত। মানুষকে জাকাত প্রদানে উৎসাহ দিয়ে ইসলামী রেনেসাঁর কবি নজরুল বলেছেন-

দে জাকাত দে জাকাত, তোরা দে রে জাকাত।

তোর দিল্ খুলবে পরে, অরে আগে খুলুক হাত ॥

দেখ পাক কোরআন, শোন নবীজির ফরমান

ভোগের তরে আসেনি দুনিয়ায় মুসলমান।

তোর একার তরে দেননি খোদা দৌলতের খেলাৎ ॥

তোর দর-দালানে কাঁদে ভুখা হাজারো মুসলিম,

আছে দৌলতের তোর তাদেরও ভাগ-বলেছেন রহীম।

বলেছেন রহমানুর রহীম, বলেছেন রসুলে করীম,

মুসলিম উম্মাহ্ আজ বিভিন্ন দল, মত, ইজম, মতবাদে ক্ষত-বিক্ষত। মুখে মুখে আল্লাহর আধিপত্য স্বীকার করলেও তারা ইসলামের রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ না করে ইসলাম থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে আজ। আজ মুসলিম জাতি রজ্জু ধরেছে আমেরিকার, রাশিয়ার, ব্রিটেনের, কেউ আবার রজ্জু ধরেছে তন্ত্র-মন্ত্র কিংবা মানব রচিত বস্তাপঁচা গলিত মতবাদগুলোকে। ফলে তারা পরিণত হয়েছে এক দুর্দশাগ্রস্ত জাতিতে। তাই কবি দুঃখ করে বলেছেন- জাগে না সে জোশ ল’য়ে আর মুসলমান/করিল জয়, যে তেজ লয়ে দুনিয়া জাহান ॥ নাহি সাচ্চাই সিদ্দিকের,/ উমরের নাহি সে ত্যাগ আর,/ নাহি সে বেলালের ঈমান, নাহি আলীর জুলফিকর,/ নাহি আর সে জেহাদ লাগি বীর শহীদান ॥/ নাহি আর বাজুতে কুওৎ,/ নাহি খালেদ মুসা তারেক,/ নাহি বাদশাহী তখৎ তাউস/ ফকির আজ দুনিয়ার মালেক,/ ইসলাম কেতাবে শুধু, মুসলিম গোরস্থান ॥/

আধুনিক মুসলিমদের নিস্পন্দন ধমনীতে ইসলামী শৌর্য-বীর্যের তপ্ত রক্ত প্রবাহের গতিবেগ সঞ্চারের মহান উদ্দেশ্যে এবং অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে নজরুল লিখেছেন- বাজিছে দামামা, বাঁধরে আমামা/ শির উঁচু করি মুসলমান।/ দাওৎ এসেছে নয়া জমানার/ ভাঙা কিল্লায় ওড়ে নিশান।।/ মুখেতে কলেমা, হাতে তলোয়ার,/ বুকে ইসলামী জোশ দুর্বার,/ হৃদয়ে লইয়া ইশক্ আল্লার/ চল্ আগে চল্ বাজে বিষাণ।/ আবার তিনি বলেছেন-ঘুমাইয়া কাজা করেছি ফজর, তখনো জাগিনি যখন জোহর, হেলা ও খেলায় কেটেছে আসর/ মগরেবের আজ শুনি আজান।/ জামাৎ শামিল হও রে এশা-তে/ এখনো জামাতে আছে স্থান।।/ মুসলিম জাতি আজ ঘুমিয়ে আছে সুপ্ত পুষ্প /কুঁড়ির মতো। এখন সময় তার জেগে ওঠার। প্রবল ইচ্ছাশক্তির টানে নজরুল আহ্বান জানিয়েছেন পিছিয়ে পড়া শেষের বেঞ্চের মুসলিমদের। তিনি বলেন- আনো আলীর শৌর্য, হোসেনের ত্যাগ,/ ওমরের মতো কর্মানুরাগ,/ খালেদের মতো সব অসান্য/ ভেঙে করো একাকার।।/ ইসলামে নাই ছোট বড় আর/ আশরাফ আতরাফ,/ এই ভেদ জ্ঞান নিষ্ঠুর হাতে/ করো মিসমার সাফ।/ চাকর সৃজিতে চাকরি করিতে/ ইসলাম আসে নাই পৃথিবীতে?/ মরিবে ক্ষুধায় কেহ নিরন্ন,/ কারো ঘরে রবে অঢেল অন্ন-/ এ জুলুম সহে নিক ইসলাম,/ সহিবে না আজও আর।।

স্বজাতির প্রতি খেদোক্তি করার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যারা সমালোচনার ঝড় তোলে তাদের বিরুদ্ধেও তিনি কামান দাগতে ভুলেননি। ‘এক আল্লাহ জিন্দাবাদ’ কবিতায় তা অত্যন্ত চমৎকারভাবে প্রকাশ পেয়েছে- /উহারা প্রচার করুক হিংসাবিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ;/ আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।/ উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ,/ আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অবেদ।

উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদী দর্জা চাই;/ নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই!/ ওরা মরিবে না, যুদ্ধ বাঁধিলে ওরা লুকাইবে কচুবনে,/ দন্ত নখরহীন ওরা তবু কোলাহল করে অঙ্গনে।/ ওরা নির্জীব জীব নাড়ে তবু শুধু স্বার্থ ও লোভবশে,/ ওরা জিন, প্রেত, যজ্ঞ, উহারা লালসার পাঁকে মুখ ঘষে।

মোরা বাংলার নব যৌবন, মৃত্যুর সাথে সঞ্ঝরী,

উহাদের ভাবি মাছি পিপীলিকা, মারি না ক তাই দয়া করি।

মানুষের অনাগত কল্যাণে উহারা চির অবিশ্বাসী,

অবিশ্বাসীরাই শয়তানী-চেলা ভ্রান্ত-দ্রষ্টা ভুল-ভাষী।

ওরা বলে, হবে নাস্তিক সব মানুষ, করিবে হানাহানি।

মোরা বলি, হবে আস্তিক, হবে আল্লাহ মানুষে জানাজানি।

উহার?া চাহুক অশান্তি; মোরা চাহিব ক্ষমা ও প্রেম তাহার,

ভূতেরা চাহুক গোর ও শ্মশান, আমরা চাহিব গুলবাহার!

আজি পশ্চিম পৃথিবীতে তাঁর ভীষণ শাস্কি হেরি মানব

ফিরিবে ভোগের পথ ভয়ে, চাহিবে শান্তি কাম্য সব।

হুতুম প্যাঁচার কহিছে কোটরে, হইবে না আর সূর্যোদয়,

কাকে আর টাকে ঠোকরাইবে না, হোক তার নখ চঞ্চু ক্ষয়।

বিশ্বাসী কভু বলে না এ কথা, তারা আলো চাই, চাহে জ্যোতি;

তারা চাহে না ক এই উৎপীড়ন এই অশান্তি দুর্গতি।

দাঙ্গা বাঁধায়ে লুট করে যারা, তারা লোভী, তারা গুন্ডাদল

তার দেখিবে না আল্লাহর পথ চিরনির্ভয় সুনির্মল।

ওরা নিশিদিন মন্দ চায়, ওরা নিশিদিন দ্বন্দ্ব চায়,

ভূতেরা শ্রীহীন ছন্দ চায়, গলিত শবের গন্ধ চায়!

নিত্য সজীব যৌবন যার, এস এস সেই নৌ-জোয়ান

সর্বক্লৈব্য করিয়েছে দূর তোমাদেরই চির আত্মদান !

ওরা কাঁদা ছুড়ে বাধা দেবে ভাবে-ওদের অস্ত্র নিন্দাবাদ,

মোরা ফুল ছড়ে মারিব ওদের, বলিব- ‘আল্লাহ জিন্দাবাদ।’

অনুরূপভাবে মৌলভী তরিকুল আলম কাগজে এক প্রবন্ধ লিখে বললেন, কোরবানিতে অকারণে পশু হত্যা করা হয়, এমন ভয়াবহ রক্তপাতের কোনো মানে নাই। নজরুল তার জওয়াবে লিখলেন ‘কোরবানি’ কবিতা। তাতে তিনি বললেন- ওরে, হত্যা নয়, এ সত্যগ্রহ শক্তির উদ্বোধন,

দুর্বল ভীরু চুপ রহো, ওহো খামখা ক্ষুব্ধ মন।

- এই দিনই মীনা ময়দানে

- পুত্র স্নেহের গর্দানে

- ছুরি হেনে খুন ক্ষরিয়ে নে

রেখেছে আববা ইবরাহীম সে আপনা রুদ্র পণ,

ছি, ছি, কেঁপো না ক্ষুদ্র মন।

এভাবে ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য, আমল-আক্বীদা, শৌর্য-বীর্য নিয়ে অত্যন্ত শক্ত হাতে কলম ধরেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। পরিশেষে, এখানে আমরা একটি পরিসংখ্যান দিয়ে দেখব নজরুল তার সাহিত্য জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কতগুলো ইসলাম কি কি বিষয়ক লেখা লিখেছেন- মোসলেম ভারত’ এ প্রকাশিত তার প্রথম কবিতাটি ছিল ‘শাত-ইল আরব’ (মে, ১৯২০)। ২য় কবিতা ‘খেয়াপারের তরণী’ (জুলাই ১৯২০)। ‘কোরবানি’ ছাপা হয় ১৩২৭-এর ভাদ্রে (আগস্ট, ১৯২০)। ‘মহরম’ ছাপা হয় ১৩২৭-এর আশ্বিনে (সেপ্টেম্বর ১৯২০)।

১৯২২-এর অক্টোবরে নজরুলের যে ‘অগ্নি-বীণা’ কাব্য প্রকাশিত হয় তার ১২টি কবিতার মধ্যে ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহী’, ‘রক্তস্বরধারিণী মা’, ‘আগমনী’, ‘ধূমকেতু’ এই পাঁচটি কবিতা বাদ দিলে দেখা যায় বাকি ৭টি কবিতাই মুসলিম ও ইসলাম সম্পর্কিত (১৯২২)। আরবি ছন্দের কবিতা (১৯২৩)।

১৯২৪-এ প্রকাশিত তার ‘বিষের বাঁশীর প্রথম কবিতা ‘ফাতেহা-ই-দোয়াজ-দহম’ (আবির্ভাব-তিরোভাব) (১৯২৪)। খালেদ’ কবিতা (১৯২৬) ‘উমর ফারুক’ কবিতা সওগাতে প্রকাশিত (১৯২৭)। ‘জিঞ্জির’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ (১৯২৮)। রুবাইয়াত ই হাফিজ প্রকাশ (১৯৩০)। কাব্য আমপারা (১৯৩৩)। ‘জুলফিকার’ ইসলামিক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ (১৯৩২)। মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা’ ও ‘যাবি কে মদিনায়’ নাত এ রসুল প্রকাশ (১৯৩৩)। ‘তওফিক দাও খোদা’ ইসলামী নাত-এ-রাসুল প্রকাশ (১৯৩৪)। মক্তব সাহিত্য প্রকাশ (১৯৩৫)। ফরিদপুর যেলা মুসলিম ছাত্র সম্মিলনীতে ‘বাংলার মুসলিমকে বাঁচাও’ অভিভাষণ পাঠ (১৯৩৬)। সেই রবিউল আউয়ালের চাঁদ’ নাত-এ-রাসুল প্রকাশ (১৯৩৭)। ওরে ও মদিনা বলতে পারিস’ নাত এ-রাসুল প্রকাশ (১৯৩৮)। দীওয়ান-ই-হাফিজ’-এর ৯টি গজল অনুবাদ এবং নির্ঝর’ কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ (১৯৩৯)। নতুন চাঁদ (১৯৩৯)। খোদার রহম চাহ যদি নবিজীরে ধর’ নাত-এ-রাসুল প্রকাশ (১৯৪০)। ‘মরুভাস্কর’ ( অসুস্থ হবার পরে প্রকাশিত, রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম (১৯৫৮)। নজরুল বাংলা ভাষায় সর্বাধিক ‘হামদণ্ডনাত’-এর রচয়িতা।

গ্রামোফোন কোম্পানী থেকে নজরুলের হামদণ্ডনাত যখন বের হতো, তখন মাঝেমধ্যে রেকর্ডের ওপর ‘পীর-কবি নজরুল’ লেখা থাকত।

বাংলা ভাষায় যারা হামদণ্ডনাত রচনা করে গেছেন, তাদের মধ্যে একই সঙ্গে হিন্দু এবং ইসলাম ধর্ম উভয় বিষয়ে পারদর্শী কেউ ছিল না, একমাত্র ব্যতিক্রম নজরুল। একাধিক আরবি-ছন্দ নিয়ে নজরুলের অসংখ্য কবিতা আছে, বাংলা ভাষার আরো এক প্রতিভাবান কবি ফররুখ আহমদ এ বিষয়ে কারিশমা দেখাতে পারেননি। ইরানের কবি হাফিজ আর ওমর খৈয়ামের যতজন ‘কবি’ অনুবাদক আছেন তার মধ্যে নজরুল একমাত্র মূল ফারসী থেকে অনুবাদ করেছেন, বাকি সবাই ইংরেজি থেকে। ‘ফারসী’ এবং ‘আরবী’তে নজরুল-এর জ্ঞান ছিল পান্ডিত্যের পর্যায়ে। গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে ‘ইসলামি গান’ নজরুলের পূর্বে আর কেউ গায়নি। সাহিত্যিক জীবনের প্রথম (১৯২০-১৯৪১) থেকে শেষ পর্যন্ত নজরুল অজস্র ধারায় ইসলামবিষয়ক লেখা লিখে গিয়েছেন উপরের পরিসংখ্যান সেটাই প্রমাণ করে। পরিশেষে, এতটুকুই বলা যায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যেমনভাবে অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্যবাদ আর বিদ্রোহের জন্য বাংলার আপামর জনসাধারণের হৃদয়পটে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, তেমনি ইসলামের বিজয়ডঙ্কা উচ্চারণে তাঁর বলিষ্ঠ শব্দস্রোত মুসলিম সমাজকে আন্দোলিত করেছে। প্রথম জীবনে ধর্মের সাথে তেমন সম্পর্ক না থাকলেও শেষ জীবনে তিনি ধর্মের প্রতি তিনি গভীরভাবে অনুরাগী হয়ে উঠেছিলেন। এ কথা সত্য যে তৎকালীন ছুফীবাদী পরিবেশ এবং মুসলিম সমাজে প্রচলিত হাযারো কুসংস্কার তার সাহিত্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছুফীবাদী দর্শন ও শিরকি প্রভাব যুক্ত করেছে। তবে এর দায় তার নয়, বরং তৎকালীন মুশরিক ও বিদআতী ধর্মনেতারা। বলা বাহুল্য, সারাজীবন অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে গেলেও নজরুলের শেষ জীবনের ধর্মানুরাগ তাকে পরবর্তীকালের তথাকথিত সুশীল বুদ্ধিজীবিদের কাছে বিরাগভাজন ও অপাঙক্তেয় করেছে। যার ফলশ্রুতিতে আজ ‘জাতীয় কবি’ হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর প্রাপ্য সম্মান পান না, যেমনটি পেয়ে এসেছেন কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার প্রতি এই অবহেলার একমাত্র কারণ তিনি অসাম্প্রদায়িকতাবাদের প্রচারক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপাদমস্তক ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে উঠতে পারেননি, ইসলামী চেতনা ও আদর্শকে তিনি পুরোপুরিভাবে বিসর্জন দিতে পারেননি।