যুবসমাজই দেশকে এগিয়ে নিতে পারে সমৃদ্ধির পথে

রায়হান আহমেদ তপাদার

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের দেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ- কোনো ক্ষেত্রেই যুবদের অবদান ভোলার নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুবসমাজ দেশ স্বাধীন করতে জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যুবদের যোগদানে আন্দোলন হয়েছিল আরো বেগবান। দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে তাদের ভূমিকাও ছিল মুখ্য। যুবকরাই দেশকে এগিয়ে নিতে পারে সমৃদ্ধির পথে। যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামে সর্বাগ্রে থেকে নেতৃত্ব দেয় যুবসমাজ। দারিদ্র্যবিমোচন ও দেশের স্থায়ী উন্নয়নে যুবসমাজের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ জরুরি। কারণ যুবরাই জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুবসমাজকে পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ডে আত্মনিয়োগ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু আজীবন শোষিত বঞ্চিত মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন বলেই দেশে গড়ে উঠেছিল কর্মঠ যুবসমাজ। আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পাবে না, যদি দেশের যুবক শ্রেণিকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে না পারি।

দেশে ৯০০টি যুব সংগঠনের মধ্যে ৪৫৮টি নারী সংগঠনসহ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের সংগঠনকেও অনুদান দেওয়া হচ্ছে, যা একটি অনন্য উদ্যোগ। পাঁচ কোটি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর এই মানবসম্পদকে এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে, যেন নারী-পুরুষ একত্রে অগ্রসর হতে পারে। তাহলেই স্মার্ট বাংলাদেশের সম্পূর্ণ সুবিধা পাওয়া যাবে। বলাবাহুল্য, তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের কর্মণ্ডউপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তবে আমাদের দেশে সে ধরনের পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। এটি সত্য যে, বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার একটি প্রশংসনীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, যদিও এ অর্জন দেশের বেকারত্বের হার তেমন হ্রাস করতে পারেনি। এর মূল কারণ হলো, দেশের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। যুবদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্সও সরবরাহ করতে হবে।

এমন একটি জাতীয় পরিকল্পনা থাকা উচিত, যাতে একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে কাজ বা উদ্যোক্তা হওয়ার মতো পরিবেশ পায়। কর্মধর্মী শিক্ষা পরিকল্পনা তরুণদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং কর্মের ব্যবস্থা করতে সহায়ক হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা। একইভাবে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রশিক্ষণের পর উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী তরুণদের জন্য ব্যাংকঋণ, আর্থিক সহায়তা এবং প্রশাসনিক সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারেও আন্তরিক হতে হবে। দেশে শিক্ষিতের হার শতকরা ৭০ শতাংশের মতো হলেও মোট জনশক্তির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই বেকার। যাদের অধিকাংশই শিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত, কিংবা অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে লক্ষাধিক, যাদের বেশির ভাগের কর্মসংস্থান হয় না। ফলে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও।

পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এমনিতেই বিশ্ব মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার প্রেক্ষাপটে সারাবিশ্বেই কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে। দেশে কর্মসংস্থান যে হারে বাড়ছিল তা হ্রাস পেয়েছে নানা কারণে। তাই অনেকে শ্রম বেচতে বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা অস্থিরতার কুফল যেসব দেশ ভোগ করছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। সারাবিশ্বে প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি নাগরিক কর্মসংস্থানের কারণে বসবাস করছে। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায়ই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক। তাই বলা যায়, সার্বিক পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়। পরিস্থিতির অবনতি রোধে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ কোনোটাই মূলত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে বৃহৎ এই জনগোষ্ঠী সম্পদ নয়, রাষ্ট্রের বোঝা হিসেবেই ভাবা হচ্ছে।

কিন্তু এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া সঠিক হবে না। তাই অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নিজেদের সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশেই কর্মসংস্থানের পথ খুঁজতে হবে। সময়টি তথ্যপ্রযুক্তির। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন এ দেশের যুবকরা। অনেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজের ক্ষেত্র গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে। ফলে সমাজে সম্ভাবনার ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। আসলে যুবসমাজই হচ্ছে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক, বাংলাদেশ গড়ার প্রধান চালিকাশক্তি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়তে দেশের এই বিশাল শক্তির উপযুক্ত ব্যবহার হওয়া দরকার। এরাই নিজেদের মেধা ও মনন শক্তি ব্যবহার করে নির্ধারণ করবে, দেশের আগামী দিনের চলার পথ। সত্তর দশকের ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ তলাবিহীন ঝুড়ি, নব্বই দশকের বিশ্ব পরিমণ্ডলে তুলনামূলক অচেনা বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী এক বিস্ময়ের নাম। উন্নয়ন নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা মানুষের কপালে ভাঁজ ফেলে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সম্ভাবনার দিগন্তে সাফল্যের পতাকা উড়িয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে তরুণ জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে। বাংলাদেশের সামনেও সোনালি ভবিষ্যৎ হাতছানি দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফল হবে কি না তা নির্ভর করছে সৃষ্ট সুযোগ কতটা কাজে লাগানো যাবে তার ওপর। বাংলাদেশের জন্য এ মুহূর্তে সমস্যা হলো জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ বেকার। যুব জনগোষ্ঠীর একটি অংশ অভিভাবকদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। যুবসমাজের কর্মসংস্থানের যথাযথ পদক্ষেপ যেমন দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে, তেমনি এ ক্ষেত্রের ব্যর্থতা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশের সোনালি ভবিষ্যতের স্বার্থেই কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গতি আনার উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া সঠিক হবে না।