বাঁধ যদি ভেঙেই যায় দিয়ে কি লাভ

সরকারি অর্থের অপচয় রোধ করা দরকার

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপড়ে পড়েছে বহু গাছ, বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি। ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের খেত। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঝড়ের ফলে ভারি বৃষ্টিতে প্লাবিত হয় উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল। ভেঙেছে বেড়িবাঁধগুলো। যেসব বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে সেগুলো কীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে সে ব্যাপারে প্রশ্ন থাকতেই পারে। বাঁধ যদি ভেঙেই যায় তাহলে এই বাঁধ দিয়ে কি লাভ। বাঁধ ভাঙতে পারে এমন চিন্তা চেতনা তো পানি উন্নয়ন বোর্ডের থাকা দরকার। কোনো পরিকল্পনা কিংবা সমীক্ষা ছাড়া বাঁধ নির্মাণ করা হলে সেগুলোতে ভেঙে যাবে এটাই স্বাভাবিক। সরকারি কাজের ক্ষেত্রে এই ধরনের গাফলতি কেন যেন হরহামেশা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট আমাদের এই স্বাধীন দেশের সরকারি হলেও সেভাবেই বাঁধ তৈরি করতে হবে। বাঁধ তেরি করার পর সেটি যদি ভেঙে গিয়ে যানমালের ব্যাপক ক্ষয়কতি হয় তাহলে সেটি নির্মাণ করার অর্থ হচ্ছে সরকারি টাকার অপচয়। অনেক বাড়িঘর ও গাছপালা ভেঙে গেছে। গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় অনেক সড়কে। ঘূর্ণিঝড় রিমালে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে কেবল প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলই প্লাবিত হয়নি, তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও ফসলি জমি। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে কেবল খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রার অন্তত ৩৬ স্থানে বাঁধে ভাঙন ধরেছে। লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধ উপচে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকছে। রিমেলের প্রচণ্ডতা কমে যাওয়ার পর এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে এরইমধ্যে বাঁধ রক্ষার কাজ করে দিয়েছেন। এলাকার মানুষ মেরামত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কখনো কখনো ঝড়ের তীব্রতা থাকে অনেক বেশি। অথচ বেড়িবাঁধের অবস্থা থাকে নড়বড়ে। নদীর ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে। জোয়ারের পানি অনেক সময় ভাটায় কমে না। যে কারণে পানির চাপ বেশি থাকে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে নদী ভাঙছে। নদীর ভাঙন রোধের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সেই সঙ্গে নেই পর্যাপ্ত বেড়িবাঁধ। উপকূলীয় জেলাগুলোর নদীর তীরের লাখো মানুষ প্রতি বছর বন্যা ও ঝড়ের কবলে পড়ে। প্রতিবছরই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর ভাঙন রোধ আর জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ কার্যকর পদপেক্ষ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসলেও তা অনেকটা ফাইলবন্দি থাকছে। সমুদ্রের উপকূলবর্তী অনেক এলাকা নদীবেষ্টিত হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে প্রতি বছর বহু প্রাণহানির ঘটে। সেইসঙ্গে সম্পদ হারিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়। কিন্তু দুর্যোগ মোকাবিলায় নদীতীরের মানুষের জন্য টেকসই ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে বাঁধ না থাকায় উপকূলবাসী যুগ যুগ ধরে বন্যা ও ঝড়ে ভাসছে। আকাশে মেঘ দেখলেই তাদের মনের ভেতরটা কামড় দিয়ে ওঠে। নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ। নদীর ভয়ানক গ্রাসে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। তারপরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় এলাকাবাসী দিন দিন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে নদীতীরের বাসিন্দারা। উপকূলের বেড়িবাঁধগুলো নিম্নমানের হওয়ায় সিডর ও আইলাসহ বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে সেই বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। বাধ ভাঙন মেরামত করার ক্ষেত্রে কার্যত কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। মেরামত বা নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে না। নদীতীরের মানুষদের নানা কষ্ট। বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে তাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। বেড়িবাঁধ না থাকায় সামান্য জোয়ারেই পানি ওঠে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচিত বেড়িবাঁধগুলো সঠিকভাবে মেরামত করা। যেখানে বেড়িবাঁধ দরকার সেখানে নতুন করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা। বাঁধ নির্মাণের জন্য যখনই দাবি উঠে তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের কর্মকর্তারা বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে জানান মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এই প্রকল্প পাস হলে কাজ করা যাবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ে কোনো প্রস্তাব পাঠানো হলে তা পাস হয়ে আসা অনেক বিড়ম্বনার কাজ। লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের কবলে পড়লে প্রকল্প পাস হতে বছরের পর বছর সময় কেটে যাবে। কিন্তু এ অবস্থার সৃষ্টি হওয়া উচিত হবে না। সাধারণ মানুষের সেবা করাই সরকারি কর্মচারীদের ধর্ম হওয়া উচিত। জনগণের জন্য সেবা করার মধ্য দিয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। মানুষ আত্মতৃপ্তি বোধ করে। আর জনগণও খুশি হয়। কেননা তাদের করের টাকায় একজন সরকারি কর্মচারীর বেতন-ভাতা হয়। সরকারকে কর দেব অথচ সেবা মিলবে না সেটা তো কোনো সভ্য সমাজের কল্পনা হতে পারে না।