ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডায়াবেটিক রাইচ উদ্ভাবন

রোগীর প্রশান্তির সঙ্গে মিলবে পারিবারিক স্বস্তি
ডায়াবেটিক রাইচ উদ্ভাবন

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ব্রি ধান ১০৫ উদ্ভাবন করেছেন। এ ধানে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) মান ৫৫। তাই লো জিআই মানসম্পন্ন এ রাইচকে ডায়াবেটিক রাইচ বলা যায়। ডায়াবেটিস রোগীরা এ ধানের চালের ভাত নিরাপদ মনে করে পেটভরে খেতে পারবেন। লো জিআই সম্পন্ন এ ধানের চালের ভাত খেলে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করা খুব কম যাবে। ব্রি’র প্রধান কার্যালয়ে পুষ্টি গবেষণা বিভাগের পরীক্ষায় ব্রি ধান-১০৫-এর পুষ্টিমান নির্ণয় করে এ তথ্য জানিয়েছে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এছাড়া এ ধান ভবিষ্যতে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে দাবি কৃষি বিজ্ঞানীদের। চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায় ৮ দশমিক ৭ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান ১০৫ প্রথম আবাদেই সাফল্য মিলেছে। হেক্টর প্রতি কৃষক ৬.৫ টন থেকে ৭.৫ টন ফলন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। ওই কর্মকর্তা বলেন, এটি বোরো মৌসুমের ধান হলেও আমন মৌসুমে বীজ হিসেবে চাষাবাদ করা হয়। এতে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। নতুন উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে ব্রি-১০৫ বোরো মৌসুমের একটি কম জিআই সম্পন্ন ডায়াবেটিক ধান। প্রচলিত ধানগুলোতে জিআই এর মান ৬৫ থেকে ৭৫। কিন্তু ব্রি-১০৫ ধানে জিআই এর মান ৫৫। এ চালের ভাত খেলে রক্তে শর্করা কম নামবে। এ ধানের বৈশিষ্ট্য হলো মাঝারি লম্বা ও চিকন দানা। কম জিআই হওয়ার কারণে এটি ডায়াবেটিক চাল হিসেবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে। এ জাতের দানার আকার ও আকৃতি মাঝারি সরু ও রং সোনালি। রান্না করা ভাত ঝরঝরে এবং সুস্বাদু। তাই এ ধানের আবাদ করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন।

ডায়াবেটিস রাইসের পর্যাপ্ত বীজ পেলে এ ধানের চাষাবাদ সম্প্রসারণ করা হবে। এতে ডায়বেটিস রোগীরা উপকৃত হবেন। তারা একটু বেশি ভাত খেতে পারবেন। এ জাতের ধানের গাছ আকারে বড়। তাই খড় গো-খাদ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। ডায়বেটিস রোগী এধানের চালের ভাত খেতে পরেন। তাই অনেকই এ ধান চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। নতুন এ জাতের ধান চাষে সেচ ও সার কম লাগে। উৎপাদন খরচ সাশ্রয়ী এবং বাম্পার ফলন পাওয়া যায়। এ কারণে এ জাতের ধানচাষ লাভজনক। বাজারে এ ধানের চাহিদা রয়েছে। তাই আগামীতে ডায়াবেটিক রাইস চাষ সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। মাছে ভাতে বাঙালি। ভাত মানুষের অন্যতম প্রধান খাবার। তবে ডায়বেটিস রোগীরা চিকিৎসকদের পরামর্শে পরিমিত ভাত খান। দিনে একবেলা পরিমিত ভাত খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় ডায়বেটিস রোগীদের। ফলে তারা পেটে ক্ষুধা নিয়েই খাবারের টেবিল ছাড়েন। এটা কম আফসোসোর বিষয় নয়। পেট ভরে না হোক, অন্তত তৃপ্তি সহকারে ভাত খাওয়ার সুভাগ্য ডায়বেটিস রোগীদের হয় না। তাই ভালো তরকারি থাকা সত্ত্বেও তারা বাড়তি একটু ভাতা গ্রহণ করতে পারে না। নতুন জাতের এই ধানের আবাদ ছড়িয়ে পড়লে ডায়াবেটিস রোগীরা এই চালের ভাত খেতে পারবেন।

ডায়বেটিস রোগীরা সাধারণত মিষ্টিজাতীয় খাবারও খুবই সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করেন। একাধারে কম ভাত গ্রহণ, অপরদিকে কম মিষ্টি খাওয়ার কঠিন অনুশীলন ডায়বেটিস রোগীদের করতে হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে লোভনীয় খাবার হচ্ছে মিষ্টি। সেই মিষ্টি খুবই সীমিত পরিসরে গ্রহণ করার সুযোগ পান ডায়াবেটিস রোগীরা। তার ওপর যদি ভাত খাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ থাকে, তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জীবন অনেকটা পানসে হয়ে যায়। সে কারণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় অন্তত এই ধরনের ধানের আবাদ করা দরকার। এতে করে ডায়াবেটিস রোগীরা অনেকটা প্রশান্তি লাভ করবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা শুধু ডায়াবেটিক রাইচ উদ্ভাবন করেননি। তারা খরা ও বন্যা সহিঞ্চু ধান উদ্ভাবনের মতো সাফল্য অর্জন করেছেন। বাংলাদেশের জলবায়ু বিচার বিশ্লেষণ করে আমাদের দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবন করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের মাটি থাকে। আর সেই মাটিতে চাষাবাদ করা যেতে পারে, এমন ধান কৃষি বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করে এরইমধ্যে বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন। তবে ডায়াবেটিক রাইচ উদ্ভাবন নিসন্দেহে একটি যুগান্তকারি পদক্ষেপ। তবে এই ধানের আবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। কেন না, আমাদের দেশের সর্বত্র ডায়াবেটিক রোগী বসবাস করেন। তারা যদি পেটভরে ভাত খেতে পারেন, তবে শুধু ডায়াবেটিক রোগীরাই নয়। তাদের পরিবার পরিজনও আত্মতৃপ্তি লাভ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত