ঢাকা ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যাংক খাতে সুশাসন জরুরি

রেজাউল করিম খোকন
ব্যাংক খাতে সুশাসন জরুরি

দেশের সাধারণ মানুষ ব্যাংক খাত নিয়ে দুশ্চিন্তায়। ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ী ও ব্যাংক মালিকরা মিলে নিচ্ছেন। তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ডলারের দামসহ নানা সিদ্ধান্ত নিয়েও তা যথাযথাভাবে কার্যকর করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংক খাতের ওপর জনগণের আস্থা কমছে। কারণ, ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্যের ক্রমাগত অবনতি হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এখন গ্রামের সাধারণ মানুষও ব্যাংক খাত নিয়ে চিন্তিত। এ জন্য সবকিছুর মধ্যে স্বচ্ছতা থাকা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন দুষ্টের দমন সৃষ্টের পালন না করে, সৃষ্টের দমন ও দুষ্টের পালন করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যবসায়ী ও ব্যাংক পরিচালকরা মিলে যৌথভাবে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক, সমবায় প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সকালে এক রকম নিয়ম করে, বিকালে আবার আরেকজনের কথা শুনে তা পরিবর্তন করে। ব্যাংকে আমানত রেখে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। গত ২ বছরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার যেভাবে বেড়েছে, সেই তুলনায় ব্যাংক আমানতের সুদহার বাড়েনি। পরিণামে ব্যাংকে টাকা রেখে মানুষ মুনাফা তো পাচ্ছেই না, উল্টো ক্ষতি হচ্ছে তাদের। ব্যাংকিং খাত নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। তারা ব্যাংক আমানতের সুদহারের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার সমন্বয় করে দেখিয়েছে, ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর থেকে ব্যাংকে টাকা রেখে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। অর্থাৎ প্রায় ৪ বছরে ধরে ব্যাংকে আমানত রেখে মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ব্যাংকে আমানত রেখে সর্বশেষ মুনাফা পাওয়া গেছে সে বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। পরের মাস মার্চে আমানতের প্রকৃত সুদহার ছিল শূন্য।

সিপিডির হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংক আমানতের প্রকৃত সুদহার ছিল শূন্য দশমিক এক শতাংশ। মার্চে তা শূন্যের কোঠায় নামার পর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রকৃত সুদহার ঋণাত্মক। ২০২২ সালের আগস্ট ও ২০২৩ সালের মে মাসে তা সর্বোচ্চ মাইনাস ৫ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত নেমেছিল। এরপর মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে তা সব সময় ওঠানামা করেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তা ছিল মাইনাস ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। সুদহার ছয়-নয় করার পর ঋণের সুদহারের পাশাপাশি আমানতের সুদহারও কমে গিয়েছিল। কিন্তু মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৮ আগস্ট মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে মেয়াদি আমানতের সুদহার নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন বলা হয়, আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হবে না। কিন্তু অনেক ব্যাংকই তা দিতে পারেনি। এরপর ঋণের সুদহারের সীমা তুলে নেওয়া হয় এবং তার প্রতিক্রিয়ায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আমানতের সুদহারের সীমাও তুলে নেওয়া হয়। এরপর ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহারও বাড়িয়েছে। এখন আবার অনেক ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করতে সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে মাত্র ২ শতাংশ টাকা জমা দিয়েই ঋণ পুনঃতপশিলে করা যাচ্ছে। আমার সময় প্রথমবার পুনঃতপশিলে ১০ শতাংশ, দ্বিতীয়বারে ২০ শতাংশ ও তৃতীয় বার পুনঃতপশিলে ৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। তাই লোকজন ভয়ে তখন এ পরিস্থিতিতে যেত না। এখন সবাই মহাআনন্দে এ পথে পা বাড়াচ্ছে।

মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও ব্যাংক খাত তদারকি একই প্রতিষ্ঠান করবে নাকি পৃথক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। যে ৪ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ হয়েছে, তার ৩০-৪০ শতাংশ জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া। ফারমার্স ব্যাংক ‘নাই’ হয়ে গেল, পদ্মা করেও টিকল না। বেসিক ব্যাংক চেয়ারম্যানকে ধরা হয় না। পি কে হালদার দেশে নয়, পাশের দেশে ধরা পড়েছে । এর মাধ্যমে অপশাসন চর্চা করা হচ্ছে। এক ব্যক্তির হাতে অনেকগুলো ব্যাংক। তাতে তার হাতে ব্যাংক খাত জিম্মি হয়ে পড়েছে, এটি কারও অজানা নয়। বেসরকারি ব্যাংকে জমিদারি প্রথা চালু হয়েছে। ব্যাংকের কারণে আর্থিক খাতের ওপর আস্থা শূন্যের কোটায় চলে গেছে। এক-দুটি ব্যাংক এখন ভালো আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন আছে এটি বোঝাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করা হোক। ক্ষমতা কাঠামো থেকে দুষ্ট লোকদের প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা হোক। এ ছাড়া তথ্য লুকানোর সংস্কৃতি বন্ধ করা হলে ব্যাংক খাত ঠিক হয়ে যাবে। অনেকদিন ধরে ব্যাংক খাতের খারাপ অবস্থার কথা বলা হচ্ছে। হঠাৎ শোনা গেল, ১০টি ব্যাংক একীভূত করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাহলে এত দিন কী করছিল? নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। বেসিক ব্যাংক নিয়ে কত দিন ধরে কথা হচ্ছে। এসবের দায়িত্ব কেন জনগণ নেবে? এখন সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এএমসি) নিয়ে কথা হচ্ছে। কেন জনগণের করের টাকা সেখানে দেওয়া হবে। এএমসি হবে একটা কৃষ্ণগহ্বর, যা পুরো ব্যাংক খাতকে ধ্বংস করে দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ বলে দিল কোনো ব্যাংক কার সঙ্গে একীভূত হবে। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে এটি বলা হচ্ছে? যারা ৪-৫ হাজার কোটি টাকা করে লুট করল, তাদের কী হবে- সেটি কেন বলা হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ডলারের দাম ৮৪ টাকায় ধরে রাখা হলো। সেটা এখন বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু আমদানি করতে গেলে ১২০ টাকার নিচে ডলার মিলছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ জন্য আজ ব্যাংক খাতের এই পরিস্থিতি। ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের টাকা তুলে নেওয়ার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে মুদ্রা সরবরাহও বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ কমাতে নানা উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে সেটির কার্যকারিতা কম। মুদ্রার সরবরাহ কমার চেয়ে বাজারে উল্টো সরবরাহ বেড়ে গেছে। বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে সার ও বিদ্যুতের পাওনা বাবদ বিভিন্ন ব্যাংককে দেওয়া সরকারের বন্ড সুবিধা। টাকা দিয়ে পাওনা পরিশোধ করতে না পেরে বিভিন্ন ব্যাংকের বিপরীতে বন্ড ইস্যু করেছে সরকার। ব্যাংকগুলো এই বন্ড জমা রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করছে। এতে বাড়ছে মুদ্রা সরবরাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কিছুটা কমে আসছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ ও সারের ভর্তুকির পাওনা পরিশোধে ইস্যু করা বন্ডের বিপরীতে গত কয়েক মাসে ব্যাংকগুলোকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে ব্যাংক খাতে ছাপানো টাকার স্থিতি (রিজার্ভ মানি) ছিল ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকায়। আর মার্চে রিজার্ভ মানির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও সারের পাওনা মেটাতে ব্যাংকগুলোকে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার বন্ড দিয়েছে সরকার। এর প্রায় পুরোটাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়ে ১৮০ দিন মেয়াদে সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে ব্যাংকগুলো। ধারের মেয়াদ শেষ হলে বন্ডের মেয়াদ থাকা পর্যন্ত আবারো ১৮০ দিনের জন্য টাকা নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। সরকারের ইস্যু করা বন্ডের মেয়াদ আট থেকে ১০ বছরের। সাধারণত বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়লে মূল্যস্ফীতিও বাড়ে। তবে মার্চ পর্যন্ত যে মুদ্রা সরবরাহ হয়েছে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির প্রক্ষেপণের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ আরো বেড়ে গেছে। গত মার্চ শেষে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকায়। ফেব্রুয়ারিতে যার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। বেশ কিছু কারণে মার্চে মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ওই মাসটি ছিল রোজার মাস। এ সময় মানুষের টাকার চাহিদা বাড়ে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থায়ও চিড় ধরেছে। মার্চে বেশ কিছু ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এ খবরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নেন আমানতকারীরা। ফলে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার পর যা আর ব্যাংকে ফেরত আসে না, তা-ই ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা হিসেবে পরিচিত। এই টাকা মানুষ হয় দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে, নয়তো বেশি লাভের আশায় ব্যাংকের বাইরে বিভিন্ন সমিতি, জমি, ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করেন। আবার কেউ কেউ টাকা তুলে ঘরেও রেখে দেন। নির্বাচনের আগে গত ডিসেম্বরে নগদ টাকার লেনদেন বেড়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক মানুষ সঞ্চয় ভাঙাচ্ছেন। আবার সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো থেকে আতঙ্কিত হয়েও অনেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এ কারণে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়ে গেছে। তবে এসব অর্থ কিছুদিন পর আবার বিভিন্ন হাত ঘুরে ব্যাংকে ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশ এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। অর্থাৎ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এখান থেকে উচ্চ আয়ের দেশ হতে গেলে বৈষম্য কমানো দরকার। মধ্যম আয়ের সীমা অনেক বেশি। সে জন্য নিম্নমধ্যম, মধ্যম বা উচ্চমধ্যম এসব শ্রেণি নিয়ে আলোচনা না করে মূল যে বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত সেটি হলো, বাংলাদেশ উচ্চ আয়ের দেশ হতে পারবে কি না, সেদিকে। যেসব দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, সেই সব দেশের সবাই যে উচ্চ আয়ের দেশ হতে পেরেছে, তা নয়। উচ্চ আয়ের দেশ হতে হলে উচ্চ সঞ্চয়, বিনিয়োগ, দক্ষ মানবশক্তি, সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান ও বাজারের প্রতিযোগিতা লাগবে। পুঁজি ব্যবহারের দক্ষতা দরকার। এ ছাড়া উৎপাদনশীলতা বাড়াতে না পারলে মধ্যম আয়ের ফাঁদেও আটকে যেতে হবে। সেই সঙ্গে আয় অসমতা থাকলে এবং সমতা ও ন্যায্যতার অভাব থাকলে সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হবে না; তখন মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে যেতে হবে। বৈষম্য বাড়ছে সত্য; কিন্তু দেখতে হবে, সমাজের মানুষ বৈষম্যের বিষয়ে কতটা অসহিষ্ণু হচ্ছে। অসমতা দূর হলেই যে উন্নয়নের পালে হাওয়া লাগবে, সেটি ঠিক প্রমাণিত নয়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে আত্মোন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এমনকি সে জন্য যে সবাইকে উচ্চশিক্ষিত হতে হবে, সেটিও নয়। ইউরোপ-আমেরিকার ৬০-৭০ শতাংশ মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেননি। মানবসম্পদের উন্নয়ন বলতে সবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নয়, বরং শক্তিশালী মৌলিক শিক্ষা থাকলেই তা সম্ভব। বিশ্বের অনেক কর্তৃত্ববাদী দেশ সুশাসনে গুরুত্ব দিয়েছে। চীনের মতো দেশে মেধায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আক্ষেপ, আজকের বাংলাদেশে মোসাহেবি হলো একমাত্র যোগ্যতা। যে বা যারা মোসাহেবি করতে পারে, তারাই এগিয়ে যায়। এ ছাড়া চীনে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী। অর্থাৎ কর্তৃত্ববাদী দেশেও ক্ষমতার এক ধরনের ভারসাম্য আছে; বাংলাদেশে এই ভারসাম্য নেই এখন। দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। দেশে এখন নিয়মনীতির বাইরে অনেক কিছুই হচ্ছে। বিক্ষিপ্তভাবে সংস্কার না করে ব্যাংক খাতের কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। এ জন্য সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। দেশে স্বজনতোষী পুঁজিবাদের মাধ্যমে অভিজাত ব্যক্তিরা তাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করছে। ব্যাংকে অনেক শেয়ারহোল্ডার থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করে একজনই। একজনের প্রভাবের কারণে ব্যাংকগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অলিগার্করা (ধনী প্রভাবশালী গোষ্ঠী) এখন সব জায়গা নিয়ন্ত্রণ করছে। পুরো ব্যাংক খাত ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে গেছে। ব্যাংকিং খাত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত। ব্যবসায়ী, ব্যাংক ও সরকারের প্রভাবশালীরা মিলে জোট করেছেন। এসব বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা না করলে প্রকৃত সমাধান হবে না। ব্যাংক খাতকে ঠিক করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে। অর্থনীতি বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য থাকা দরকার। এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজা উচিত নয়।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও কলাম লেখক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত