কারো অন্যায়েও অশ্লীল শব্দের বন্যায় ভাসাবেন না!

রাজু আহমেদ

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মন্দ মানুষ হলেও প্রিয়জনকে কখনোই ভাষা প্রয়োগের অন্ধকার রূপটি দেখাবেন না! সঙ্গীকে খারাপ ভাষায় গালাগালি করা, তাঁর বাবা-মা তুলে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করা কিংবা সন্তানকে কখনোই বাজে ভাষায় বকাবকি করবেন না। জীবনে আর কোথাও শোধরাতে পারেন কিংবা না পারেন শব্দ চয়নে আপনাকে শোধরাতেই হবে। কেউ যদি তার শব্দণ্ডবাক্যে মানুষ হয়ে না ওঠে সে জীবনের অনেকক্ষেত্রেই আর মানুষ হয়ে উঠতে পারে না। একটা আপত্তিকর শব্দ একজন থেকে আরেকজনকে কতদূরে ঠেলে দিতে পারে তা আপনি হয়তো আন্দাজ করতেও পারছেন না! একজনের ভুলে তাঁর বাবা-মাকে নিয়ে আসা, শব্দ চয়নে অসংযত হওয়া এসব খুনোখুনি বাঁধাতে পারে। মনে মনে শত্রুতা দাঁড় করাতে পারে। জীবনের পাঠে পাঠে তিক্ততা বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনি কী এবং কে- তার অনেকটাই আপনার ভাষার প্রয়োগ থেকে আন্দাজ করা যায়। অশ্লীল শব্দ চরিত্রের অন্ধকার পাশকেই প্রতিনিধিত্ব করে। এই যে মনে স্থান পাওয়া, সম্মান-স্নেহে বাঁচা এসব ভাষার প্রয়োগে নির্ধারিত হয়। মধুর ভাষায় সম্পর্ক বঁধুর হয়। বকাবকি, রাগ-অভিমানে চিল্লাপাল্লা এসব যাপিত জীবনের অংশ বটে। কিন্তু সেখানে ভাষার প্রকাশ কেমন, শব্দের গঠন কেমন? এসব আপনার ব্যক্তিত্বকে নির্দেশ করে। অশ্লীলতা কোনোভাবেই প্রশংসিত গুণ নয়! যার সঙ্গে যা শত্রুতা, দূরত্ব এবং মনের অমিল তা গালাগালি আর বাজে শব্দের ঝনঝনানিতেই সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষোভের অনল, অভিমানের গরল এই শব্দের অন্ধকার দিকেরই সৃষ্টি। কাজেই শব্দ কণ্ঠনালী থেকে উচ্চারিত হলেও তা বিবেক দিয়ে জন্ম দিতে হবে! যে ভাষায় অশ্লীলতা পোষণ করে সে নিজের মধ্যে মুনাফেকির আলামত বহন করে। অনেক ছদ্মবেশি ভন্ডসাধুকে দেখেছি, যারা সমাজে সাধু সাধু শব্দ ব্যবহার করে, তবে ঘরে স্বামী-স্ত্রী কিংবা সন্তানদের অসুন্দর শব্দে সম্বোধন করে কিংবা অধীনের আচরণে ত্রুটি হলেই বাপ-মা তুলে গালাগাল করে! আপত্তিকর শব্দ দিয়ে জব্দ করা যায়, ভয় আদায় করাও যায়, তবে মানুষের মন জয়ের জন্য শব্দের সবচেয়ে সুন্দর রূপের ব্যবহার জানতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপত্তিকর শব্দ মানুষের ভদ্রতা মাপতে সাহায্য করে! একজন মানুষের মুখের ভাষা খারাপ, আর সে ভালো মানুষ হিসেবে দাবি করে- এটা কস্মিনকালেও বিশ্বাসযোগ্য হবে না। যার মুখ খারাপ তার আর কিছুই ভালো না! কোনো ধর্ম, কোনো সভ্য সমাজ কিংবা কোনো গুণী মানুষ তার ভাষাকে দুর্গন্ধতে জড়ায় না কিংবা জিহ্বা দিয়ে কদর্যতা ছড়ায় না।

কাজ আদায়ের জন্য, অধিকার লাভের জন্য কখনো কখনো কঠোর হতেই হবে! প্রিয়জনকে অপ্রয়োজন বোঝাতে তাঁর সঙ্গে দ্বিমত হতেই পারে কিংবা সন্তান-স্বজনের মঙ্গলের জন্য দু’পাঁচ কথা শোনানো লাগতে পারে! সহকর্মীকে অনুগত রাখতে এবং দায়িত্ব আদায় করতে গলা চড়া করা লাগতেই পারে। তবে সে কথাতেও মাধুর্য থাকুক। প্রিয়জন শব্দের আঘাতে যদি মনে ব্যথা পায়, আপত্তিকর অশ্লীল শব্দ যদি পরিবেশ দূষিত করে, তবে তেমন শব্দ মনের মধ্যে ঘুরপাক খেলেও দমিয়ে নিতে হবে! শব্দের অশ্লীলতা প্রকাশ-প্রচারের মধ্যে আলোকিত ব্যক্তি উৎসবের সুধা থাকে না বরং অরুচিকর ও অপছন্দনীয় আবেশের জন্ম দেয়। যা মানুষে মানুষে শত্রুতা বাড়ায়। আমরা রোজ কত মানুষের সঙ্গে কত কত কথা বলি! এই কথার মাধ্যমেই তো পরস্পর সম্পর্কে জড়াই! বন্ধু হই, জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসি এবং মায়ায় জড়াই। এই যে একজন মানুষ আরেকটা মানুষের সঙ্গে সারাজীবন থাকার চুক্তিতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির নানা অভিযোগ-অনুযোগের মধ্যেও ঘুরতে ঘুরতে ও ডুবতে ডুবতে কাটিয়ে দেয়, তাও তো ওই কথার মায়ায় এবং বিশ্বাসের ক্ষমতায়! সেই কথা যদি অশ্লীল হয়, তবে মায়া কাটতে সময় লাগবে না! বোবাও একসময় বাজে কথার পাল্টা আঘাত দিতে শিখে যায়! কাউকে দু’বার আপত্তিকর ভাষায় কথা শোনালে সে তৃতীয়বার পাল্টা প্রতি উত্তর করবে না- এমন গ্যারান্টি নেই! বরং অশ্লীল শব্দের জবাব ঘোরতর অশ্লীলতা মেপেই বাড়ে! হাতে-বিঘাতে রোজ রোজ শত্রুতা বাড়ে!

যে সন্তানকে কুভাষায় গালাগাল করেন, সেই সন্তান ওসব ধারণ করেই একদিন পাল্টাপাল্টি করবে! সন্তান যত অন্যায় করুক, তাদের অশ্লীল ভাষার বন্যায় ভাসাবেন না। গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে একবারও আপত্তিকর শব্দ উচ্চারণ করবেন না এবং মনও তেমন শব্দ তৈরি করুক- সেই সুযোগ দেবেন না। জিহ্বা আপনার ইবাদতের হাতিয়ার। ভাষার মাধ্যমে সেটা যাতে আপনাকে পুণ্যবান করতে সহায়তা করে, সেই চেষ্টা অব্যাহত হোক। মন্দ মানুষের ভাষাই শুধু নোংরা ও কুরুচীপূর্ণ হয়। আপনার চরিত্র, আপনার বাচনিক সৌন্দর্য এবং আপনার সামগ্রিক মাধুর্য শব্দের সুন্দর অবয়ব গঠনের মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। শত্রুকেও গালি দেবেন না।