প্রতিদিন দুধ পানে সুস্থ সবল জীবন গড়ি

অলোক আচার্য

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একটি শিল্প হলো দুগ্ধ শিল্প। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির একটি বড় অংশ হলো দুগ্ধশিল্প। পুষ্টিরও অন্যতম বড় উৎস হলো দুধ। পৃথিবীর সেরা পুষ্টিদায়ক খাবারের নাম দুধ। দুধে থাকা ল্যাকটোজ মানুষের দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বাড়াতে সহায়ক। গরুর দুধ নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। গরুর দুধে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ যেমন- ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কোবাল্ট, কপার, জিংক, আয়োডিন ও সেলিনিয়াম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দুধ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। আমাদের দেশে দুধের মূল উৎস হলো গাভী। এছাড়াও ছাগল, মহিষ থেকেও দুধ আরোহণ করা হয়। তবে এখানে গরুর দুধই প্রধান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক গড়ে ২৫০ মিলিলিটার দুধ প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষ ২০৮ মিলিলিটার পাচ্ছে। দেশে এখন উৎপাদন ঘাটতি ২৫ লাখ ৯৪ হাজার টন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশে দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ভোলা জেলা। এবং দ্বিতীয় বৃহৎ দুগ্ধ উৎপাদনকারী জেলা পাবনা। পাবনায় বছরে সাড়ে ৪ লাখ টন দুধ উৎপাদন হয়। পাবনায় ডেইরি খামারি রয়েছেন ১০ হাজারের মতো। প্রতিদিনের পুষ্টির একটি অংশ পূরণ করে দুধ। তাছাড়া বাঙালির রসনা বিলাসের সাথে ঐতিহ্যগতভাবেই দুধের একটি সম্পর্ক রয়েছে। পিঠা, পুলির আয়োজনে দুধের বিকল্প নেই। দুধ উৎপাদনও গত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন নতুন জাতের গরু পালনের ফলে প্রসারিত হয়েছে দেশের দুগ্ধ শিল্প। স্বাধীনতার পর দেশে তরল দুধের উৎপাদন বেড়েছে ১৩ গুণ। আর গত ১১ বছরে দেশে দুধের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে চারগুণ। তারপরও দেশে দুধের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। এই ঘাটতি পূরণ করাই এখন বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭১-৭২ অর্থ বছরে দুধ উৎপাদন ছিল ১০ লাখ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দুধ উৎপাদন হয়েছে ১৪০ দশমিক ৬৮ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দুধ উৎপাদন ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে জনপ্রতি দৈনিক ২৫০ মিলি. হিসেবে দেশে দুধের চাহিদা ১৫৮ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন। এ হিসেবে দুধের ঘাটতি রয়েছে ২৫ দশমিক ৯৪ লাখ মেট্রিক টন। প্রাণী সম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৩.৭০ লাখ টন। বহু চ্যালেঞ্জ পার করে দুগ্ধশিল্প বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছে।

২০১০-১১ অর্থবছরে দাঁড়ায় ২৯.৫০ লাখ টন, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৪.৬০ লাখ টন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫০.৭০ লাখ টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬০.৯২ লাখ টন, ২০১৫-১৬ তে ৭২.৭৫ লাখ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯৪.১ লাখ টন, ২০১৮-১৯ তে ৯৯.২৩ লাখ টন এবং ২০১৯-২০ তে ১ কোটি ৬.৮০ লাখ টন দুধ উৎপাদন হয়। এক তথ্যে দেখা যায়, দেশে দুধের বার্ষিক চাহিদা ১৫২ লাখ মেট্রিক টন, যার বিপরীতে উৎপাদন ১০৬ দশমিক ৮ লাখ মেট্রিক টন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩১ সালে ২০০ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০৪১ সালে ৩০০ লাখ মেট্রিক টন নির্ধারিত আছে। অর্থাৎ দেশ দুধ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বেশ কয়েক বছর ধরে ছাগলের দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে মোট দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ২৩তম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ দুধ উৎপাদন হয় এশিয়ায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাজারে দুধের দামের সাথে গাভী পরিচালনা ব্যয়ের পার্থক্য বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ক্ষুদ্র খামারী বা যাদের একটি, দুটি গাভী রয়েছে তারা উৎসাহ হারাচ্ছে। এছাড়া বাজারজাতকরণের অপর্যাপ্ত সুবিধার কারণেও দুধের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গো-খামারীরা। মূলত বাড়তি দামই এখন মাথাব্যথার কারণ। বাজার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে এক লিটার পাস্তুরিত তরল দুধের দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। কিন্তু এখন সেটা ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। ডেইরি খাত শক্ত অবস্থানে ধরে রাখতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।