ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ক্ষতের খতিয়ান দ্বিগুণ হয়েই ঘাতকের কপালে জোটে!

রাজু আহমেদ
ক্ষতের খতিয়ান দ্বিগুণ হয়েই ঘাতকের কপালে জোটে!

কেউ আঘাত দিলেই প্রতিশোধের নেশায় পাগল হয়ে উঠি! কখন এর জোরদার জবাব দেওয়া যায় সেই মওকা খুঁজি! আচ্ছা, ছেড়ে দিলে কেমন হয়? ভুলে গেলে ক্ষতি হয়? বিশ্বাস করুন, আপনি প্রতিশোধ নিলে যে ক্ষতি হতো, তার চেয়ে অধিক শিক্ষা সে অন্যকোনো ক্ষেত্র থেকে পাবে। কাউকে ঠকানো, আঘাত করা, ব্যথা দেওয়া, অপমান করা কিংবা তাচ্ছিল্য করা- এসব বিনিয়োগ। কাউকে বঞ্চিত করা কিংবা কারো বিশ্বাস ভঙ্গ করার পাপ মাফ করার এখতিয়ার খোদাও একচ্ছত্রভাবে তাঁর কাছে রাখেননি। বান্দার হকের সাথে যা কিছু জড়িত, তা ক্ষতিগ্রস্ত কর্তৃক ক্ষমা না হলে খোদাও মাফ করবেন না- স্পষ্ট ঘোষণা আছে। কাজেই কারো অধিকার হরণ করলে, কারো ন্যায্যতা অসম্পূর্ণ রাখলে তার বিনিময় সুদসহ ফেরত আসবে। নিশ্চয়ই তা মঙ্গলজনক কিছু না!

কোথাও কারো ক্ষতি করে এসেছেন অথচ দুজনেই ভুলে গেছেন কিন্তু ক্ষতি ভুলে যায়নি। জীবনে এমন বিপর্যয় নেমে আসবে, এমন দুর্বিপাকে জড়াবেন, যা আকাঙ্ক্ষিত ছিল না অথচ পূর্ব পাপের ফল ভোগ করতেই হবে। সুতরাং, ক্ষতিগ্রস্ত যদি শোধ নাও তোলে, মেনে যায় তাও দীর্ঘশ্বাসের অভিশাপ হানিকারকে তাড়িয়ে বেড়াবে। সৌভাগ্য রুখে দেবে, আলো নির্বাপিত করে রাখবে। ঠকিয়েছে অথচ সে ঠকেনি, ব্যথা দিয়েছে অথচ ব্যথা পায়নি কিংবা অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে অথচ শান্তিতে থেকেছে- এমনটি সাধারণত ঘটে না। এই পৃথিবীর যিনি পরিচালক তিনি অনন্য সাধারণ সূত্রে জগৎ-সংসার পরিচালনা করেন, যার জন্য ক্ষতের খতিয়ান দ্বিগুণ হয়েই ঘাতকের কপালে জোটে। কেউ রেহাই পায় না। সুখ নাই কেন, বরকত পাই না কেন কিংবা ভালো মানুষ নাই কেন- এমন অভিযোগে দিনের অধিকাংশ ফুরিয়ে ফেলি। অথচ আমার নিজের বিচার একবারও করি না। পাওয়ার সময় ষোলআনা আর দেওয়ার সময় ফুটো পয়সা নীতিতে স্বভাবের রীতি বানিয়ে ফেলেছি। কার কীভাবে ক্ষতি করা যায়, কার অগ্রগতি-সম্মৃদ্ধি রুখে দেওয়া যায়- এহেন কুচিন্তায় দিন অতিবাহিত করি। আড়ালে অন্যের সমালোচনার আসর জমাই! কারো বিপদ শুনলে সুখে গদগদ হই। এরপর নিজে পরীক্ষায় পড়ি। তখন ভাগ্যকে দোষারোপ করি। নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভাগ্যের দোষ আর অন্যকারো ক্ষতির কথা শুনলে তা পাপের শাস্তি বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করি। কাজী নজরুলের ভাষায়, ‘আমরা সবাই পাপী, আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি!’- এটা আমাদের জীবনদর্শন হয়ে দাঁড়ায়। যারা কারো ক্ষতি করেছে, তাদের সাময়িক চাকচিক্য দেখে দুঃখ পাওয়ার কারণ নাই। ওসব মরীচিকা। আড়ালে তাদেরও দুঃখ ভারি। কারো ক্ষতি করে, কাউকে পদানত করে কিংবা কারো চোখের জলের কারণ হয়ে চূড়ান্তভাবে কেউ কখনোই ভালো থাকতে পারে না। কোনো অভিযোগ-অনুযোগ কিংবা আক্রমণ ছাড়াই দীর্ঘশ্বাস পাপের প্রায়শ্চিত্ত সুদণ্ডআসলে তুলে লয়। যার হক অরক্ষিত হয়েছে, যার বিশ্বাসের অমর্যাদা হয়েছে, তা মাল মালিকের দরবারে নালিশ জানায়। কারো অন্যায়ের ফর্দ যখন লম্বা ফিরিস্তি হয়, তখন অধঃপতন ঘনিয়ে আসে। ঘোরতর বিপদের সামনে দাঁড়ায়! নিজেই নিজের বিনাশের কারণ হয়ে ওঠে। নিজেই নিজেকে অমর্যাদা-অপমানের পথে ঠেলে দেয়। যারা ধৈর্য ধারণ করেছে, তারা কামনার চেয়েও উত্তম ফলাফল লাভ করেছে। কিছু অভিযোগ, কতিপয় অপমান এবং কতক ব্যথা ইগনোর করতে হবে। তাৎক্ষণিক রি-অ্যাকশনে হিতে বিপরীত ফলাফল ঘটাতে পারে। প্রকৃতির যে ভারসাম্য নীতি, তাতে যা বিনিয়োগ করবেন, তা দ্বিগুণ হয়ে ফেরত আসবে। সেটা ভালো হলে ভালো পাবেন আর মন্দ হলে জীবনের ছন্দ কেটে দেবে। কারো জন্য শুভের প্রার্থনা করলে নিজের দিকেও সেটার কল্যাণ ফেরত আসবে। আবার কারো ক্ষতি করার, কাউকে বিপদে ফেলার কিংবা কারো এগিয়ে চলার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে সেসবের অকল্যাণও নিজের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত