ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অর্জন পরিমাপের ক্ষুদ্রতম মানদ- সম্পদ বৃহত্তর প্রশংসা!

রাজু আহমেদ
অর্জন পরিমাপের ক্ষুদ্রতম মানদ- সম্পদ বৃহত্তর প্রশংসা!

সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের দোয়া অবশ্যই কবুল হবে- ধর্মবেত্তাগণ এই বাক্য ফলাও করে প্রচার করে থেমে আছেন! অথচ এতে সামান্য যে শর্তটুকু সংযোজিত আছে সেটুকু তারা বলতে নারাজ! তাতে যে তাদের মর্তবাও কমবে। যে বাবা ঘুষ খায়, মন্দে লিপ্ত কিংবা প্রাপ্ত দায়িত্বে ফাঁকি দেয় সেই বাবার সন্তানের নামে দোয়া যে অভিশাপ- তা আর বলা হয়নি। যে মা বিপথগামী, আত্মীয়স্বজন থেকে সংসারকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন কিংবা স্বামী-সংসারের জন্য নিপীড়নকারী সে মায়ের দোয়াও সন্তানের জন্য অকল্যাণকামী- তা প্রচার করা হয়নি।

যত মন্দ কাজ আছে তার মধ্যে নিজেদের বন্ধক রেখে সন্তানের জন্য হাজার রকম পন্থায় কল্যাণকামী হলেও কল্যাণ ধরা দেবে না। মন্দ কাজে অন্ধ থাকা বাবা-মায়ের দোয়া আকাশের ঠিক ঠিকানায় পৌঁছে না। যাদের নৈতিকতাণ্ডমানবিকতা ধ্বংস হয়ে গেছে তারা তাদের পূর্বতনের ছায়া পেয়েছে এবং পরবর্তীদের জন্য অভিশাপ রেখে যাচ্ছে। আজকাল মন্দের দাপট এতো বেশি যে, ভালোর সাথে মন্দ মিশলে ভালোটিরও রূপ-রঙ বদলে ফেলে। খুব কম ক্ষত্রেই ভালোর সাহচর্যে মন্দটিও সুন্দর হচ্ছে! জমানা পাল্টে গেছে! আমরাই পাল্টিয়েছি! তবে আশাব্যঞ্জক কিছুতে পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি। এই ব্যর্থতার দায় আমাদের কম নয়। কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত এই সামগ্রিক পরিস্থিতিকে ফুটিয়ে তুলেছেন তার উটপাখি কবিতায়। কবির কবিতায়-

“আমি জানি এই ধ্বংসের দায়ভাগে

আমরা দুজনে সমান অংশীদার

অপরে পাওনা আদায় করেছে আগে,

আমাদের ‘পরে দেনা শোধবার ভার।”

যে বাবা-মা দুর্নীতির সাথে জড়িত, অবৈধভাবে অর্থ কামাই করে কিংবা অনৈতিক পন্থায় ক্ষমতাধর তাদের সন্তান কিশোর গ্যাংয়ের লিডার হবে, নেশায় জর্জরিত হবে কিংবা মেয়েদের নিরাপত্তার হুমকি হবে- এটাই তো বরং স্বাভাবিক। বাবা-মায়ের চরিত্রের বৃহদাংশ সন্তানের কর্মকাণ্ডে পতিত হয়। আজ তরুণদের বিপথে যাওয়ার জন্য সমাজকে দায়ী করা হচ্ছে, নেশার মচ্ছবে ছেলেমেয়েদের ধ্বংসের জন্য শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে এবং চারিত্রিক অবনতির জন্য সময়কে দায়ী করা হচ্ছে! দায়টা আসলে কার? এই তরুণ-তরুণীদের বাবা-মায়েরা ক্ষমতার নামে, টাকা-কড়ি কামাইয়ের নামে কিংবা সেবা দেওয়ার নামে সমাজে কোন রীতি জাহির করেছে? কোন শ্রেণির পেশাজীবীদের সন্তান বেশি বিপথগামী সেই ক্লারিফিকেশনে যাচ্ছি না তবে একজন ভালো বাবা-মায়ের সন্তান মন্দ পথে হেঁটেছে এই দৃষ্টান্তও আছে তবে তা অতি নগণ্য। মন্দ লোকের সন্তানরাই মন্দ কাজের মধ্যে জীবনের ছন্দ খোঁজে! রক্ত এমন এক তরল যা পূর্ববর্তীর চলে যাওয়া সরলরেখা ও বক্ররেখাকে নিখুঁতভাবেই অনুসরণ করে।

যে মানুষের আয়ের সাথে অন্যের অধিকার হারানোর হাহাকার মিশ্রিত হয়েছে, যে লোকের পদচারণায় অন্যকেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিংবা যে অন্যের বিশ্বাস হত্যা করে হেসেছে তার সন্তানের ওপর এসবের ছাপ-ছায়া থাকবে না- এটা ভাবাও অবান্তর। যে খাদ্যে হারামের কণা মিশেছে, ভোগের যে সামগ্রীতে অন্যকে ঠকানোর অভিশাপ মিশেছে সেই রসে কষে বেড়ে ওঠা সন্তান অভিভাবকদের শান্তিতে রাখবে এটা ঘটলেই বরং ব্যতিক্রম হবে। পাপের সন্তান পাপের সাম্রাজ্যকে বিস্তৃত করবে। যে সন্তান বাবা-মায়ের ভণ্ডামি দেখেছে, তাদের চারিত্রিক দ্বি-চারিতা থেকে শিখেছে তাদের সন্তান সুখের পালক হবে সে আশা দুরাশার। বরং দুরাচার অভিভাবকদের পাপ ছাপিয়ে গিয়ে সন্তান আরও অধিক গরল হবে। খারাবির এমন কোনো শাখা-প্রশাখা থাকবে না যাতে সেই সন্তান বিস্তৃত হবে না। মদ, নারী এবং নেশায় জীবন জড়াবে। সুদ, ঘুষ এবং অনৈতিকতায় ডালপালা মেলবে। বাবা-মায়ের অবাধ্যতায় সমাজ-সংসার ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে রাখবে। নিজেরাও শান্তির দেখা পাবে না এবং বাব-মাকেও চির অশান্তিতে ডুবিয়ে মারবে।

ভালো বাবা-মায়েদের দোয়া সন্তানদের জন্য কল্যাণকামী। যারা অন্যায় করে না এবং বখে যাওয়া সময়ের সাথে মিতালি গড়ে না তাদের সন্তান সুসন্তান হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত