বাস্তবতার নিরীক্ষে পাস হোক বাজেট

জনগণের অর্থে জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দেশের ৫৩তম বাজেট পেশ করেছেন। তিনি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্যে এই বাজেট বিদায়ি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। আর টাকার অংকে ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বেশি। বিদায়ি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে হ্রাসের লক্ষ্য রেখে ৬.৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট ঘোষিত হয়েছে। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়ন জোরদার না হলে অভ্যন্তরীণ উৎস তথা ব্যাংকিং সেক্টরে বেসরকারি খাতে ঋণদান সংকুচিত হবে। কেন না, অভ্যন্তরীণ উৎস বিশেষ করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বাজেট অতিরিক্ত ঋণ নিলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাপ্রাপ্তসহ তারল্য সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সুতরাং রাজস্ব আহরণ এবং বৈদেশিক উৎস হতে প্রাক্কলিত অর্থ যথাসময়ে সংগৃহীত না হলে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে। এজন্য রাজস্ব আহরণে এবং ঘাটতি অর্থায়নে বিশেষ করে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নে সাফল্য দেখাতে না পারলে প্রস্তাবিত বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন কঠিন হবে। তাই প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কলাকৌশলসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা অতীতের যে কোনো সময় থেকে বেশি নিতে হবে। ব্যক্তির কাঠামো বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ব্যক্তিগণকে স্বস্তি দিয়ে উচ্চবিত্তদের কর হার বাড়িয়ে আয় বৈষম্য হ্রাস করা হয়েছে বাজেটে। এটি ইতিবাচক। চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে বর্তমান অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, অর্থনীতিতে কার্যকর চাহিদা সৃষ্টি ছাড়াও বেসরকারি খাতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখার স্বার্থে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সহনীয় রাখার স্বার্থে এই বাজেটে ১৯টি পণ্যের সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি প্রত্যাহার, ১৭২টি পণ্যের সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি হ্রাস এবং ৯১টি পণ্যের রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে- যেটি জনজীবনে স্বস্তি দেবে ও জীবনযাত্রা ব্যয় হ্রাসসহ দেশীয় শিল্প সুরক্ষা পাবে।

এছাড়া প্রত্যক্ষ কর, পরোক্ষ কর এবং সার্বিক কর ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ফলে জনগণ মূল্যস্ফীতি ও জীবন যাত্রার ব্যয়ে স্বস্তি আসবে। জনগণকে মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা করে জনকল্যাণের নিমিত্তে বাজেটের বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনিতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি দ্বিগুণ করার প্রস্তাবনাও ইতিবাচক দিক। কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তথা আইসিটি সেক্টরগুলোতে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার এবং সুরক্ষার জন্য বাজেটে কর সুবিধা ও কর অব্যাহতিসহ বিভিন্ন প্রণোদনা প্রস্তাব করা হয়েছে। যার ফলে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান আকৃষ্ট হবে। বাজেট কি তা সাধারণ মানুষ বোঝে না। তারা বুঝে কীভাবে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। মানুষ তুলনামূলক কম অর্থ খরচ করে অধিক পরিমাণ পণ্য কিনে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারবে। কীভাবে দেশের পণ্যের বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। মুদ্রাস্ফীতি কম হবে। দেশের মানুষের প্রত্যাশা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যাতে অন্যায়ভাবে জনগণের অর্থ লুটেপুটে খেতে না পারে। দেশের টাকা যেন দেশের মধ্যে থাকে। আমাদের দেশের টাকা যেন বিদেশে পাচার হয়ে যেতে না পারে। সমাজে দখলদারিত্বের অবসান ঘটে। কেউ যেন অবৈধ উপায়ে অর্থ- বিত্তের মালিক হতে না পারে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা স্থিতিশীল বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন না। আর সে কারণে আগামী বাজেটের প্রতিটি টাকা যেন সুষ্ঠুভাবে শুধু জনগণের কল্যাণে ব্যয় হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

আগামী বাজেট নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা রকম মন্তব্য করছে। ক্ষমতাসীন দল কখনই বাজেট নিয়ে কোনো নেতিবাচক সমালোচনা করে না। বরং যারা সমালোচনা করে ক্ষমতাসীন দল তাদের পাল্লা সমালোচনা করে। একটি সরকার সব কাজ সঠিক করবে, এমনটা ভাবার কোনো যুক্তি নেই। আবার বিরোধীদল বিরোধিতা করার নামে যে সমালোচনা করবে না, সেটাও ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে সরকারকে ঠান্ডা মাথায় দেশের বাস্তব অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় কাটছাঁট করতে হবে। সরকারের মূল লক্ষ্য হবে জনগণের কল্যাণ। কেন না, এই দেশ জনগণের এবং জনগণই দেশের মালিক। দেশের জনগণই ভোট দিয়ে কোনো একটি দলকে ক্ষমতায় বসায়। আর সে কারণে তাদের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেট পাস করতে হবে। কেন না, জনগণের টাকা জনগণের কল্যাণেই ব্যয় করতে হবে। তাহলেই একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র কায়েম হবে।