ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ

মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ার
পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ

পরিবেশ রক্ষায় গাছপালার ভূমিকা অপরিসীম। প্রত্যেকটি প্রাণীই প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষভাবে বৃক্ষ বা উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। এক কথায় বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবীতে জীবজগৎ অকল্পনীয় ব্যাপার। আর এই পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষের গুরুত্ব ব্যাপক তা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বৃক্ষ বাতাসে বিভিন্ন গ্যাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেশি হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, কারণ ওই গ্যাস তাপ শোষণ করে রাখে। বর্তমানে গ্রিন হাউস ইফেক্ট নামে যা সুপরিচিত। বৃক্ষ বাতাস থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে গ্রিন হাউস ইফেক্টের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অপরদিকে বাতাসে অক্সিজেন যোগ করে বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত বজায় রাখতে সাহায্য করে। এভাবে বৃক্ষ বায়ুদূষণ কম করে বাতাস বিশুদ্ধ রাখে। বৃক্ষ বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। বৃক্ষের অভাবে উর্বর উৎপাদশীল মাটি ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হয়। মাটির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য দরকার বৃষ্টিপাত।

বৃষ্টিপাত ঘটাতে আবশ্যক গাছপালা। শুধু তাই নয়, ভূমিক্ষয় রোধে গাছের ভূমিকা অনেক। বৃষ্টির প্রচণ্ড গতি ও শক্তিকে প্রশমিত করে ভূমিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করে। গাছপালার শিকড় মাটিকে আঁকড়ে বেঁধে তার ক্ষয়রোধ করে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে গাছপালা অপরিহার্য। অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা গাছই করে থাকে। গাছপালা থেকে মানুষ খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি, গৃহ নির্মাণ ইত্যাদি তো পেয়েই থাকে। অন্যদিকে গাছপালা পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে মানুষের মনে আনন্দ দান করে। পরিবেশ দূষণ কমিয়ে এবং পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে উদ্ভিদ মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ের উন্নতিতে সবচেয়ে সহায়ক স্বাস্থ্য ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে আমরা যে পরিবেশ সংকটে ভুগছি, তার জন্য আমরাই দায়ী।

তাই এ সংকট থেকে মুক্তির জন্য প্রত্যেকেরই কিছু করণীয় আছে। নগরায়ন, শিল্পায়ন, কৃষির আধুনিকীকরণ ইত্যাদির ফলে পরিবেশ সংকট বেড়েই চলেছে। অথচ শিল্পায়ন-নগরাণের গতি থামানো বা কমানো মোটেই সম্ভব নয়। তাই দরকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা। এ ক্ষেত্রে বৃক্ষ সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। উদ্ভিদের সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রত্যেক মানুষই কিছু অবদান রাখতে পারে। তাই প্রত্যেকের উচিত প্রতি বছর বৃক্ষরোপণের মৌসুমে বাড়ির আশপাশে কিংবা খোলা জায়গায় সাধ্যমতো গাছ লাগানো।

তবেই পরিবেশ ভালো থাকবে। ভালো থাকবে আমাদের জীবন ও স্বাস্থ্য। যদিও বাস্তবতা জনসংখ্যার চাপে বনভূমির পরিমাণ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বনভূমির পরিমাণ কমে আসায় এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে আবহাওয়ায়। বৃক্ষ নিধনের ফলে বাতাস দূষিত হচ্ছে, ক্ষয় হচ্ছে মাটি। পরিবেশ আজ সংকটের মুখোমুখি। পর্যান্ত বনভূমি না থাকায় অনাবৃষ্টি দেখা দিচ্ছে। ফলে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। বিলীন হয়ে যাচ্ছে অতুলনীয় সবুজ সৌন্দর্য । মানুষ ও প্রাণীর অস্তিত্বের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সবুজ বৃক্ষরাজি ও বনায়নের গুরত্ব অপরিসীম। বনাঞ্চল একদিকে নিসর্গে শোভা বাড়ায়, অন্যদিকে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালন করছে। বনভূমি বায়ুমন্ডলকে বিশুদ্ধ ও শীতল রাখতে সাহায্য করে। যেখানে গাছপালা ও বনভূমি বেশি, সেখানে ভালো বৃষ্টিপাত হয়। ফলে ভূমিতে পানির পরিমাণ বাড়ে, চাষাবাদ ও ফসল ভালো হয়। তাছাড়া গাছপালা মাটির উর্বরতা বাড়ায়, ভূমির ক্ষয়রোধ করে। ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যা প্রতিরোধেও গাছপালা সহায়তা করে।

বাংলাদেশে রয়েছে বনায়নের বিপুল সম্ভবনা। এ সম্ভবনা সবাইকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে হবে। পরিকল্পিত একটি বাগানেই হতে পারে আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আয়ের উৎস। এই ধ্যান-ধারণা সবার মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ গড়ে তুলতে হলে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী গড়তে গাছ নিধন নয়, সৃজনই হোক সবার লক্ষ্য যা জরুরি। প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের প্রতি সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে গুরুত্ব দিতে হবে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাসযোগ্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে সবাইকে বৃক্ষপ্রেমিক হতে হবে, যা এই মুহূর্তে অধিক জরুরি বলে মনে করি। প্রয়োজন শুধু সবার সদিচ্ছা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত