ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আত্মনির্ভরশীল দেশ গঠনে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি

রূপম চক্রবর্ত্তী
আত্মনির্ভরশীল দেশ গঠনে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি

কলকাতা থেকে এক বন্ধু আলুর বাজার দর সম্পর্কে আমাকে জানালেন। আলু আমরা আমদানি করি না অথচ দেশেই উৎপাদিত এই আলু নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি সত্যি দুর্ভাগ্যজনক। অনেকদিন ধরে চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে আছে। কিছু কিছু জিনিসপত্রের দাম দিন দিন যে হারে বেড়ে যাচ্ছে, তাতে আগামীতে কী হবে সেটি অবশ্যই একটু একটু বুঝতে পারছি। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপ আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের যে অবস্থাটা, সেটি একবার বিবেচনা করে দেখুন সেখানে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সাশ্রয় এবং সঞ্চয় আগে থেকেই রাখতে হবে নইলে বিশ্বব্যাপী একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে আমাদের সাড়া দিতে হবে। এখন থেকেই প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ শুরু করে দেওয়া। দেশপ্রেম নিয়ে যদি এগিয়ে চলি অবশ্যই আমরা সকল বাধা দূর করতে পারব। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের গ্রামের অনেক পরিবারে চাষের ব্যবস্থা ছিল। ধান কাটার মৌসুমে অনেক বাড়িতে আনন্দ লেগেই থাকত।

এখন গ্রামে যখন যাই, সেই ছোটবেলার ধানের গন্ধ পাওয়া যায় না। গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ এই প্রবাদটি আর আমাদের দেশে অনেক জায়গায় কার্যকর হচ্ছে না। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে দেশের অনেক গোলাশূন্য হয়ে আছে। এখন চাল বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। যে চাল আপনি কয়েক বছর আগে ৪০ টাকা দিয়ে কিনেছেন সে চাল এখন ৭০ টাকা দিয়ে কিনছেন। সার, কীটনাশক, সেচ খরচ, শ্রমিক যে হারে বেড়েছে, সেই হারে বাড়েনি ফসলের দাম। ফলে লাভের মুখ দেখতে ব্যর্থ হচ্ছে কৃষকরা। আবার যখন কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয় তখন ফসলের দাম বাড়ে; কিন্তু সে সময় কৃষকের গোলা থাকে বলতে গেলে শূন্য। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দিন দিন কমছে আমাদের ফসলি জমি ও ফসল। অথচ একসময় আমাদের মাতৃভূমি সোনার বাংলার খেত-খামার সোনালি ফসলে পরিপূর্ণ থাকত। আবাদি জমি ভাগ হয়, বাড়িঘর তোলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জমি কমে, ধানের ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমে। এদিকে, কৃষিজমি কমা মানেই কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়া।

আর সেক্ষেত্রে উৎপাদন কমে গেলে দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যপারটি সরকারের জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। জমি কমছে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন কমবে। কিন্তু যদি উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায়, কম জমিতে, কম সময়ে বেশি ফসল ফলানো যায় তাহলে অবশ্যই অনেক ভালো হবে। গ্রামের কৃষিজমি দ্রুত অকৃষি খাতে যাচ্ছে। সংরক্ষিত ভূমি বলতে কিছু নেই। তবে জলাধার, বন, পাড়ার রক্ষায় আইন ও নীতিমালা থাকলে সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবে এর তোয়াক্কা করছেন না কেউ। ভূমিদস্যুদের কাছে এসব আইন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা অসহায়! নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন জমি কমার মূল কারণ। দ্রুত ভূমি রক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ না করলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে প্রতিবছর দেশের ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর চাষাবাদযোগ্য জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৭৬২ মিলিয়ন হেক্টর। গত ৩৮ বছরের এ জমির পরিমাণ কমেছে ১ দশমিক ২৪২ মিলিয়ন হেক্টর। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য কৃষিজমি অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে। শিল্পায়ন ও আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য কী প্রকারের ভূমি ব্যবহার করা দরকার, সে বিষয় নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ কৃষি পরিসংখ্যান ২০২২ অনুযায়ী মোট আবাদযোগ্য জমি ২ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৯৩৪ একর বা ৮৮ দশমিক ২৯ লাখ হেক্টর। প্রতিবছর হাজার হাজার একর আবাদি জমি হারাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত