ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঝরে পড়া রোধে স্কুল ফিডিং

সকল স্কুলে চালু হোক এ মহতী উদ্যোগ
ঝরে পড়া রোধে স্কুল ফিডিং

দেশের ১৫০টি উপজেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম’ চালুর লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে আসন্ন অর্থবছরের বাজেট পেশকালে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। খবরটি খুবই আশাপদ। ‘দারিদ্র্য-পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ১০৪টি উপজেলায় ১৫ হাজার ৪৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৭ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য চলমান স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শেষ হলেও এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ১৫০টি উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম’ চালুর লক্ষ্যে একটি প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রাক-প্রাথমিকে শিশুদের ধরে রাখতে হলে ‘?স্কুল ফিডিং’ ম্যাজিকের মতো কাজ করে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও স্কুল ফিডিং কর্মসূচির উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- এগুলো এটি একদিকে শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে, অন্যদিকে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করছে। তারা প্রাথমিক শিক্ষায় প্রবেশের আগেই আনন্দদায়ক নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিদ্যালয় ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। দেশের বিপুল পরিমাণ শিশু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যেতে পারে না, পারলেও পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারে না ক্ষুধার কারণে। শিশুরা সকালে বিদ্যালয়ে আসার পর দুপুরের দিকে ক্ষুধার কারণে পড়ালেখায় অনেকটা মনোযোগী হতে পারে না। স্কুল ফিডিংয়ের পুষ্টিকর খাবার কর্মসূচি শিশুদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পুষ্টিকর বিস্কুট, মিড ডে মিল কিংবা যে নামেই ডাকা হোক না কেন, শিশুরা যদি দুপুরে একটু খাবার পায়, তাহলে তাদের স্বাস্থ্যের উপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ যে কয়টি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে তার একটি হচ্ছে- প্রাথমিক স্তরে শিশুদের ভর্তির হার সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত করা। এ অর্জন বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে নতুন পরিচিতি দিয়েছে।

উপবৃত্তি ও সরকারের স্কুল ফিডিং কর্মসূচির ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় নিট ভর্তির হার ২০০৯ সালের ৯০ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৯৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার ছিল ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে নেমে এসেছে। কেন না, স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায় দেশের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় বিস্কুট বিতরণ কর্মসূচি চালু করা হয় ২০১০ সাল থেকে। মিড-ডে মিলের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ, শিশুদের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ, বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তি, নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতির মাধ্যমে শিখন ঘাটতি রোধ করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে বড় ধরনের অগ্রগতি সাধিত হবে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তি ও উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে চালু করা হয়েছিল স্কুল ফিডিং কর্মসূচি। প্রতিটি প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা দুপুরের খাবার নিশ্চিত করা হলে স্কুলে লেখাপড়ার পরিবেশ আরো বেশি উন্নত হবে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে অর্থের উৎস হিসেবে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন ও দাতা সংস্থা ও দানশীল ব্যক্তিরা এগিয়ে আসতে পারেন। দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নের মূলভিত্তি হচ্ছে- শিশু জনগোষ্ঠী, যারা প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে লেখাপড়া করছে। তাদের খাদ্যসহায়তা দেয়া হলে পুষ্টিহীনতা দূর হবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত সেল এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণে উপদেষ্টা কমিটির গুরুত্ব অনেক বেশি। শুধু দুপুরের খাবার নিশ্চিত নয়, বিভিন্ন রোগের টিকা, ভিটামিন এ ট্যাবলেট, কৃমিনাশক ওষুধ, রোগ প্রতিরোধ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপদ পানি পানের বিষয়েও সচেতন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। খাদ্যনিরাপত্তাহীন এলাকার প্রাইমারি স্কুলগুলোয় ছাত্রভর্তি ও উপস্থিতির হার বৃদ্ধির পাশাপাশি পুষ্টির মান বাড়ানোর মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও শিক্ষাগ্রহণের সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।

১৯৯০ সালে থাইল্যান্ডের জমতিয়েনে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলনে বাংলাদেশ ‘সবার জন্য শিক্ষা’ কর্মসূচিতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করার পর থেকেই মূলত প্রাথমিক শিক্ষায় সব শিশু ভর্তির বিষয়টি গুরুত্ব পেতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৬-১০ বছর বয়সি সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করা হয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনগুলোও এ কাজে এগিয়ে আসে। প্রথমদিকে প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের ভর্তির বিষয়টি সরকারের মূল ফোকাসে থাকলেও এ হার সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছার পর সরকার প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিসহ অন্য কিছু বিষয়ে মনোযোগ দিতে শুরু করে। ভর্তির ক্ষেত্রে সাফল্য এলেও শিক্ষার গুণগত মান ও ভর্তিকৃত সব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাসম্পন্ন নিশ্চিত করা নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়। গবেষণা থেকে দেখা গেছে, প্রথমশ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিশুদের প্রায় অর্ধেক পঞ্চম শ্রেণি পাস করে। তার অর্থ হচ্ছে অর্ধেক শিশুই মাঝপথে কোনো না কোনো শ্রেণিতে ঝরে পড়ছে। গবেষণা থেকে এটাও দেখা গেছে যে, পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর শিশুরা তৃতীয় শ্রেণির যোগ্যতা অর্জন করেছে, মাত্র ২ শতাংশ শিশু পঞ্চম শ্রেণির উপযোগী সব যোগ্যতা অর্জন করতে পারছে। স্কুল ফিডিং কর্মসূচি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় একদিকে শিশুর উপস্থিতি ও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ তৈরি হবে, তেমনি তা পড়ালেখার গুণগত মান বৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রাক-প্রাথমিকে শিশুদের ধরে রাখতে হলে ‘স্কুল ফিডিং’ ম্যাজিকের মতো কাজ করে। সরকারের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও স্কুল ফিডিং কর্মসূচির উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- এগুলো একাধারে শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে, অন্যদিকে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করছে। দেশের বিপুল পরিমাণ শিশু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যেতে পারে না, পারলেও পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারে না খাবারের অভাবে। পুষ্টিকর খাবার বা বিস্কুট শিশুর স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ যে কয়টি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে, তার একটি হচ্ছে- প্রাথমিক স্তরে শিশুদের ভর্তির হার সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত করা। এ অর্জন বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে নতুন আঙিকে পরিচিতি দিয়েছে। প্রাথমিক স্তরে শিশুভর্তি বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কথাবার্তা উঠলে বাংলাদেশ সেখানে উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর পেছনে অন্যান্য যেবিষয় কাজ করেছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- শিশুদের জন্য উপবৃত্তি ও সরকারের স্কুল ফিডিং কর্মসূচি। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই মহতী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হোক- সেটাই সবার কামনা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত