ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধস

প্রাণহানি প্রতিরোধে দরকার কঠোর পদক্ষেপ
বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধস

সিলেট মহানগরে মেজরটিলার চামেলীবাগ আবাসিক এলাকায় টিলা ধসে চাপা পড়া তিনজন মারা গেছে। গত সোমবার সকাল ৬টার দিকে বিকট শব্দে টিলা ধসে পড়লে দুই পরিবারের পাঁচজন চাপা পড়ে। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সিটি করপোরেশনের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান শুরু করলে যুক্ত হয় সেনাবাহিনী। এর মধ্যে এক পরিবারের দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। অবশিষ্ট তিনজন মারা যায়। প্রতিবছরের মতো এবারও আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের আশঙ্কা বাড়ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাহাড়ি এলাকায় প্রতিবছর কমবেশি পাহাড় কিংবা টিলা ধসের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণহানির সঙ্গে অনেকে আহত হয়। প্রতি বছর পাহাড় ধ্বসের ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও সোচ্ছার হয়। তবে পাহাড় ধস ও প্রাণহানি রোধের লক্ষ্যে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেয়। কয়েকদিন পর আবার সেই সংযোগ স্থাপিত হয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে এই সমস্যা প্রকট হয়ে উঠলেও স্থায়ী সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেই। এমনি অভিযোগ পরিবেশবাদী সংগঠনের। নেতারা মনে করেন, প্রতিবছর কোনো না কোনো জায়গায় পাহাড় ধসে ঘটে প্রাণহানি। শত শত মানুষের মৃত্যু হলেও থেমে নেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। প্রতিবছরের মতো এবারও আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসের শঙ্কা বাড়ছে। আবাহওয়া অফিস থেকে পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করার পর পাহাড়িয়া এলাকার প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে ওঠে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলোকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নিলেও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। এ বছরও যদি বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হয় তাহলে পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে। পাহাড় ধ্বসের সমস্যা সমাধানে ২০০৭ সালে টেকনিক্যাল কমিটি যে ৩৭ দফা সুপারিশ করেছিল সেগুলো কতখানি বাস্তবায়ন হয়েছে সেটাও একটা প্রশ্ন। চট্টগ্রাম মহানগরে অনেকগুলো পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। চট্টগ্রামে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পদদেশে অবৈধ বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যাও কয়েশ’। যারা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি গড়ে বসবাস করছে তাদের বক্তব্য হচ্ছে তারা স্বল্প বেতনে চাকরি করে। পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা বসতি ঘরের ভাড়া অপেক্ষাকৃত কম। তাই প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও তারা সেখানে বসবাস করে। ধস হলে বিপদ হবে জেনেও এখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছে তারা। তবে সরকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে তারা চলে যাবে এমন বক্তব্য দিচ্ছে তারা। পুনর্বাসনের জন্য প্রশাসন থেকে কখনো কখানো তালিকা করা হয়। তবে তার বাস্তবায়ন দৃশ্যমান নয়। বসবাসকারী লোকজনের অভিযোগ, পাহাড়ের পাদদেশে ঘর নির্মাণের পেছনে রয়েছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তারাই পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করে নিম্ন আয়ের লোকজনকে কম ভাড়ার কথা বলে বসবাসের প্ররোচনা দেয়। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। শুধু বর্ষা আসলেই বসতিদের উচ্ছেদ করে। বর্ষা আসলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পাহাড় থেকে বসতিদের উচ্ছেদ করতে উঠেপড়ে লাগে। এ সময় অতিবৃষ্টি বা ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পেলে মাইকিং করে বসতিদের সরিয়ে নেওয়ার নামে জোরপূর্বক তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বসতিরা এ সময় নিরুপায় হয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে যায়। ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টি কমে আসলে আবার ফিরে আসে। অথচ বসতিদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, যেসব প্রভাবশালী পাহাড় দখল করে ঘর তৈরি করে নিম্ন আয়ের লোকজনকে ঝুঁকিতে থাকার প্ররোচনা দিচ্ছে, তাদেরও চিহ্নিত করা জরুরি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামের কোথাও না কোথাও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে পাহাড়ধসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ২০০৭ সালে। ওই বছরের ১১ জুন টানা বর্ষণের ফলে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালে মারা যায় ৩০ জন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বৃষ্টির সময় নগরের বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে পাহাড়ধসে তিনজন নিহত হয়। একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসে মা-মেয়ে মারা যায়। অথচ এ দুটি পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ছিল না। চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোতে বালুমাটি বেশি। ফলে মাঝারি বৃষ্টিপাত হলেও পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আর এই পাহাড়ধসের মূল কারণ পাহাড় কাটা। চট্টগ্রামে একশ্রেণির চিহ্নিত ভূমিদস্যু পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত। যারা পাহাড় দখল করে স্থাপনা তৈরির মাধ্যমে ভাড়া আদায় করে। তারা বিভিন্ন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো কোনো ব্যবস্থা নেয় না। নিলেও দায়সারা। তবে এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকুক এটা কেউ চায় না। পাহাড়ধস ও প্রাণহানি প্রতিরোধে দরকার কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত