গাজায় ইহুদি রাষ্ট্রের পতনের ঘণ্টা

জামালউদ্দিন বারী

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গাজায় বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক, প্রাণঘাতী ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে শিশু-নারী ও বেসামরিক মানুষ হত্যার রেকর্ড গড়েছে ইসরাইল। ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৭ মাসে ইসরাইল গাজায় ৭০ হাজার টনের বেশি বোমা ফেলেছে। এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিবদমান পক্ষগুলোর প্রধান টার্গেট লন্ডন, ড্রেসডেন ও হামবুর্গে ফেলা বোমার চেয়ে বেশি। মাত্র ৮ মাসে সংকীর্ণ গাজাস্ট্রিপে প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ নিহত এবং ৮০ হাজারের বেশি মানুষ গুরুতর আহত হয়েছে। হতাহতদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আইডিএফ মূলত ফিলিস্তিনি আরবদের হত্যা ও নির্মূলের মাধ্যমে গাজার উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এরই মধ্যে গাজার ৯৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং শতকরা প্রায় ৬০ শতাংশ স্থাপনা ধ্বংস করেও হামাসের সামর্থ্য ও শক্তিমত্তাকে টলাতে না পেরে ইসরাইলি নেতারা অপ্রকৃতিস্ত, পাগলের মতো আচরণ করছে। ইসরাইলি মন্ত্রিসভায় কেউ কেউ গাজায় পারমাণবিক বোমা ফেলার পরামর্শও দিয়েছেন। প্রায় সব ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়ে নিরাপত্তা আশ্রয়, খাদ্য, পানীয় ও জরুরিচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েও ফিলিস্তিনের মুক্তির রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রতি তাদের অটুট আস্থা, সমর্থন ও দৃঢ় মনোবল ধরে রাখার বিরল ঘটনায় সারাবিশ্ব বিস্ময়ে হতবাক হয়ে আছে। সাড়ে সাত দশক ধরে ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামকে সন্ত্রাসী আন্দোলন ও এন্টি সেমিটিজমের তকমা লাগিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করলেও এবার পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অপারেশন আল আকসা ফ্লাড-এর পরে জায়নবাদীরা একটি চূড়ান্ত সামরিক অ্যাকশনের পাশাপাশি ফিলিস্তিনবিরোধী প্রোপাগান্ডাকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করতে সচেষ্ট ছিল। তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আল আকসা অপারেশন শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরাইলি বাহিনীকে পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে। যুদ্ধের শুরুর ২০০তম দিনে হামাসের মুখোপাত্র আবু ওবাইদা এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, ৭ অক্টোবর প্রথম ৬০ মিনিটেই দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর পরাজয় এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল। যুদ্ধের ৮ মাস পেরিয়ে এসে ইসরাইল সামরিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে চূড়ান্ত পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের ভেটো ও ছত্রছায়ার গ্যাঁরাকল অতিক্রম করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জাতিসংঘের কালো তালিকাভুক্ত হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এর আগে গতমাসে আন্তর্জাতিক আদালত নেতানিয়াহুসহ তার মন্ত্রিসভার কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং রাফা অভিযান বন্ধ এবং যুদ্ধবিরতির আদেশ জারি করেছে। আন্তর্জাতিক আদালত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত আহ্বান, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ উপেক্ষা করে রাফা এবং ঘনবসতিপূর্ণ রিফিউজি ক্যাম্পগুলোতে বোমা হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র গাজাবাসীর উপর গণহত্যার মাত্রা বাড়িয়েছে।

ইসরাইলের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান থেকে শুরু করে সাবেক জেনারেল এবং সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকেই হামাস বা হিজবুল্লাহর মতো প্রতিরোধ বাহিনীকে পরাস্ত করার সক্ষমতা আইডিএফ’র নেই বলে স্বীকার করেছেন। বাস্তুহীন, খাদ্যহীন, নিরাপত্তাহীন গাজাবাসির কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ১৯৪৮ সালের মে মাসের নাকবার চেয়েও ভয়ংকর গণহত্যার মুখেও কোনো গোপন করিডোর নিয়ে তারা তাদের জন্মভূমি ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। পালিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে তারা জন্মভূমিতে মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছে। অথচ গত ৮ মাসে লাখ লাখ ইসরাইলি ইহুদি দেশত্যাগ করে ইউরোপ-আমেরিকায় চলে গেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ইহুদি নাগরিকদের কৃত্রিম রাষ্ট্রটিকে সাড়ে ৭ দশক ধরে শুধু অস্ত্র, নিরাপত্তা প্রযুক্তি আর আগ্রাসি ভূমিকা পালনের ষড়যন্ত্র করে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের মুখে এখন তাদের সব যড়যন্ত্র ও কূটচাল নস্যাৎ হয়ে চূড়ান্ত পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ইসরাইলিদের সামরিক সক্ষমতা এবং মনোবল ভেঙে পড়েছে। যদিও জায়নবাদের সঙ্গে ধর্মীয় ইহুদিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা ইহুদিদের বিভ্রান্ত করে তাদের কথিত প্রমিজ ল্যান্ড ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্রের মূলা ঝুলিয়ে দুইটি মহাযুদ্ধে ইহুদি ব্যাংকার-মহাজনদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ফায়দা হাসিল করেছিল। সেই প্রথম ক্রুসেডের আগে থেকেই খ্রিস্টানদের সঙ্গে ইহুদিদের বিরোধ ছিল চরমে। আইবেরিয়ান পেনিনসুলায় মুসলমান শাসকরা ইহুদিদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অবাধ সুযোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত হাজার বছর বিশ্বের কোথাও তারা কোনো স্থিতিশীল সমাজ গড়ে তুলতে পারেনি। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় উসমানীয় খেলাফতের পতন নিশ্চিত করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় বিস্তৃত বিশাল সাম্রাজ্যকে ভাগাভাগি করার মাঝখানে জায়নবাদে উদ্বুদ্ধ ইহুদি সম্প্রদায়কে বাগে রাখতে ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি আবাসভূমি গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লর্ড বালফোরের ডিক্লারেশন ছিল মুসলমানদের দাবিয়ে রাখতে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রভূমি। সাড়ে ৭ দশক পেরিয়ে এসে এক সমুদ্র রক্তের প্রতিরোধে সেই ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ফিলিস্তিন ও মধ্যপ্রাচ্য এক নতুন অপার সম্ভাবনাময় বাস্তবতার মুখে উপনীত হয়েছে। রাজনৈতিক জনসমর্থন হারানো নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিস্তর অভিযোগ। ক্ষমতা হারিয়ে কারাভোগের ঝুঁকি এড়াতেই নেতানিয়াহু বিশ্বসম্প্রদায়ের সব আহ্বান উপেক্ষা করে গাজা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করা ও ফিলিস্তিনি গণহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। জায়নবাদী ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনি আরব মুসলমানদের হত্যা করাকে তাদের পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করে। আসমানি কিতাব তাওরাতকে নিজেদের সুবিধামত বিকৃত করে তালমূদকে ইহুদি ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। সেই তালমুদে বলা হয়েছে, কোনো ইহুদি রাষ্ট্র ৮ দশকের বেশি টেকসই হবে না। ইসরাইলি ইহুদিরা তাদের ধর্মগ্রন্থের এই ভবিষ্যদ্বাণীকে বিশ্বাস করে আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে ইসরাইলের ধ্বংসের আলামত খুঁজে পাচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০২৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র তার জন্মের ৮০ বছর পূর্ণ করবে। সে পর্যন্ত ইসরাইল আদৌ টিকবে কি না, তাই এখন তালমুদে বিশ্বাসী ইহুদিদের আশঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে হামাস, হিজবুল্লাহ, হুতি, ইসলামিক জিহাদের প্রতিরোধ যোদ্বাদের অসম বীরত্ব, অসাধারণ রণকৌশল ও ত্যাগ অন্যদিকে ইহুদি সেনাদের ব্যর্থতা, পরাজয় ও ভেঙেপড়া মনোবল তালমুদের ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্যে পরিণত করতে শুরু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া পশ্চিমা শিক্ষার্থীদের ফিলিস্তিনের সমর্থনে আন্দোলনের ঢেউ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের উপর জায়নবাদের ভিত্তি ও প্রভাবকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সমর্থন পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক-নির্মম সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ৮ মাসের বেশি সময় ধরে শুধু টিকে থাকা নয়, দুর্দণ্ড প্রতাপে লড়াই করে জায়নবাদি বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে দিতে না পারলে জায়নবাদী ইসরাইলীদের মধ্যে ধ্বংসের এই আতঙ্ক তৈরি হতো না। প্রকৃত প্রস্তাবে ইসরাইল কখনোই একটি বৈধ রাজনৈতিক এনটিটি ছিল না। এ কারণেই অর্থডক্স জুদাইজমে বিশ্বাসী ইহুদিরা প্রথম থেকেই এমন অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত ইসরাইল রাষ্ট্রকে মেনে নিতে পারেনি। তারা বিভিন্ন সময়ে ইসরাইল রাষ্ট্রের বৈধতার প্রশ্নে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট জগতের প্রভাবাধীন জায়নবাদীরা এতদিন ধরে ইসরাইলের ঔদ্ধত্যকে বাঁচিয়ে রাখলেও এবার সেই ঔদ্ধত্যই তাদের একঘরে হয়ে পড়া থেকে অনিবার্য ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক সহায়তা ইসরাইলের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনি। তারা কখনোই ইসরাইলকে একটি বৈধ রাজনৈতিক আত্মপরিচয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেনি। এখন পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই বলছেন, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরাইলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। এই সত্য কি ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদিরা বুঝতে অক্ষম ছিল, নাকি ইচ্ছাকৃতভাবেই তারা ইসরাইলকে সাপ মারার লাঠি হিসেবে ব্যবহার করে তাদের পুঁজিবাদী স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেছে? এবার কিন্তু বাক্সবন্দি ফিলিস্তিন ভয়ানক অগ্নিময় স্ফিংস হয়ে তার পুনরুত্থান ঘটিয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ধৈর্যশীলদের জন্য সুসংবাদ দিয়েছেন। আর অহঙ্কারী-অত্যাচারীদের পতন ও চরম শাস্তির বার্তা দিয়েছেন। সুরা বনি ইসরাইলের বিভিন্ন আয়াতে, সুরা বাকারার ১১৪ নাম্বার আয়াতে বিপথগামী ইহুদিদের পতনের যে সব আলামত দেয়া হয়েছে, তার সবগুলোই এখন ক্রমশ পরিস্ফুট হতে শুরু করেছে। গত ২৮ মে তারিখে ইউরোপের তিনটি দেশ স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে একযোগে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে। এ সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বের সব দেশকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। একদিকে, ইসরাইল রাষ্ট্রের শাসকদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার নোটিশ, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে মার খেয়ে তাদের উদ্ধৃত সামরিক বাহিনীর পলায়নপর অবস্থায় তারা জাতিসংঘের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলো। গায়ের জোরে রাষ্ট্র গঠনের ৭৬ বছর পেরিয়ে এসেও ইসরাইল একটি বৈধ রাষ্ট্র হিসেবে তার স্বীকৃতি পেতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে দশকের পর দশক ধরে ষড়যন্ত্র, দখলদারিত্ব, ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা চালিয়েও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার অধিকারকে দাবিয়ে রাখতে পারছে না ইসরাইল ও তার পৃষ্ঠপোষক পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা।

রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের পেছনে সত্যের আলো, ত্যাগের মহিমা এবং অধিকারের প্রশ্ন জড়িত না থাকলে সে লড়াইয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করা সম্ভব হয় না। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা, সবচেয়ে শক্তিশালী সমরাস্ত্র এবং বিত্ত-বৈভবে সুরক্ষিত হওয়ার পরও রাষ্ট্রহীন, অবরুদ্ধ ধন-সম্পদহীন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কাছে ইসরাইলের পরাজয় সেই সাক্ষ্য বহন করছে। তেল আবিবের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ যুদ্ধবাজ ইসরাইলি নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন শহরে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ইহুদিরা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সমর্থনে ইসরাইলকে বয়কটের ডাক দিচ্ছে। লাখ লাখ ইহুদিরা যখন তাদের স্বপ্নের প্রমিজড ল্যান্ড ছেড়ে পিতৃপুরুষের দেশে ফিরে যাচ্ছে, তখন চরম প্রতিকুল পরিস্থিতিতে মৃত্যুর আশঙ্কাকে হেলায় ভ্রুকুটি করে ফিলিস্তিনের ঐক্য ও সাহসী ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সচেতন অনেক মানুষ ইসলাম ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ যুদ্ধের সাহসী ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণে একযোগে ৩০ নারীর ইসলাম কবুলের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইসরাইলে জন্মগ্রহণকারী ব্রিটিশ ইহুদি লেখক, কলামিস্ট গিলাদ আজমনের লেখা একটি নিবন্ধের শিরোনাম ‘ইনসাইটফুলনেস অ্যান্ড প্যালেস্টাইন’। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের পেছনে বিভিন্ন গ্রুপের বহুমাত্রিক তৎপরতা ও বিভ্রান্তির নানা রকম কৌশল নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করেছেন গিলাদ আজমন। জায়নবাদী ইহুদিদের নির্বুদ্ধিতা এবং ফিলিস্তিনের সংগ্রামের সঙ্গে একটি গভীর অন্তর্দৃষ্টি না থাকলে এমন প্রতিকূল বাস্তবতায় বিজয়ের স্বীকৃতি আসত না। সম্প্রতি ইসরাইলের শীর্ষ দৈনিক হারেজের এক সম্পাদকীয়-এর শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘দ্য ব্রুটালাইজেশন অব ইজরায়েল ইজ ওয়েল আন্ডারওয়ে, ইফ উই ডু নট অ্যাক্ট, ইটস কলাপ্স ইজ অনলি অ্যা ম্যাটার অব টাইম’, ‘ইসরাইলকে একটি স্বাভাবিক নৃশংসতার দিকে ঠেলে দেয়ার প্রয়াস চলছে। আমরা যদি এর প্রতিবাদ না করি, ইসরাইলের পতন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।’ জেরুজালেমের রাস্তায় জেরুজালেম দিবস পালনের নামে কাহানিস্টদের হিংসাত্মক আস্ফালন, ভয়ে আরব ফিলিস্তিনিদের ঘরবন্দি থাকার ক্রমবর্ধমান জায়নবাদী বর্বরতাকে হারেজ ইসরাইল ধ্বংসের অশনি সংকেত হিসেবে দেখছে। জুইশ ডিফেন্স লিগ ও ইসরাইলি কচ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড মেইর কাহানে একজন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। এমনকি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টও তাকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। তিনি ইসরাইলকে আরব ও মুসলমান মুক্ত করে একটি ইহুদি ধর্মরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংকল্প করে আশির দশকে কচ পার্টির কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে একটি ইহুদি জায়নবাদী সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে আততায়ীর হাতে নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মিশরীয় বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিককে বিচারের সম্মুখীন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। সই ঘটনাকে স্মরণ করে কট্টরপন্থি ইসরাইলিরা জেরুজালেম দিবস পালন করতে গিয়ে মুসলিমবিদ্বেষী উন্মাদনা ছড়িয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে থাকে। ইসরাইলকে গণতান্ত্রিক, বহুত্ববাদী সেক্যুলার রাষ্ট্রব্যবস্থার অঙ্গীকার থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি নৃশংস ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার মধ্য দিয়ে এর পতনের গোড়াপত্তন শুরু হয়েছিল।