ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পারিবারিক অঙ্গনে কোরবানির পশু পালন

হতে পারে স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম
পারিবারিক অঙ্গনে কোরবানির পশু পালন

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে কোরবানির পশুর হাটের বেচাকেনা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা কোরবানির পশু কিনে সেগুলো বাজারে তুলছেন। তবে গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি বলে জানা গেছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে গরুর খামার গড়ে উঠেছে। আবার অনেকে পারিবারিকভাবেও দুই-চারটি গরু সারা বছর লালন পালন করে থাকে। তারা ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে পারিবারিকভাবে পালন করা গরু-ছাগল বিক্রি করে থাকেন। ঈুদল আজহার সময় তারা এসব পশু বিক্রি করে যে আয় করেন, তা দিয়ে সংসারের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে পারেন। পরিবারের সকল সদস্য মিলে কোরবানির পশু লালন পালন করার পর তা ঈদুল আজহার আগে বিক্রি করে থাকেন। কোনো কোনো পশুর দাম কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত উঠে। এই টাকা দিয়ে বিয়েশাদীর মতো অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা অনেকটা সহজ হয়। খামারি পর্যায়ে যারা কোরবানির পশু পালন করেন। তাদের বড় ধরনের অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়। পশু দেখাশোনা ও লালন পালন করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলেরও প্রয়োজন হয়। তবে পারিবারিকভাবে কোরবানির পশু পালন করার ক্ষেত্রে বাড়তি কোনো অবকাঠামোর দরকার হয় না। সাধারণ মানের একটা গোয়ালঘর নির্মাণ করে, সেখানে অন্যান্য পশুর সঙ্গে কোরবানির পশু লালন পালন করা সম্ভব। পরিবারের খড়কুটো কিংবা চালের খুদ ও ভাতের মাড়কে পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশপাশের লতাপাতা কিংবা ফসলি জমির কাঁচা ঘাস কোরবানির পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ফলে কোরবানির পশুর জন্য অর্থ খরচ করে কোনো খাবার কিনতে হয় না।

একটি কোরবানির পশু মোটামুটি ১ বছর লালন পালন করতে পারলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব। তবে পারিবারিক অঙ্গনে সকলে যদি মনোযোগী ও আগ্রহী হন, তাহলে সেই পরিবারের সারা বছর অন্তত দুই-একটি কোরবানির পশু লালন পালন করা সম্ভব। কোরবানির পশু বিক্রি করার অর্থ পরিবারের কোনো অভিন্ন সাধারণ খরচের খাতে ব্যয় করা যেতে পারে। ফলে কোরবানির পশু বিক্রির অর্থ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব কিংবা সংঘাত বাধার কোনো আশঙ্কা থাকে না। আমাদের দেশে যে পরিমাণ কোরবানির পশু রয়েছে, তা দিয়ে এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। চোরাই পথে ভারতীয় গরু না এলে ন্যায্যমূল্যে দেশি গরু বিক্রি হবে বলেও আশা করছেন বিক্রেতারা। প্রতি বছর আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় গরু আসায় দেশীয় গরুর বাজারের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দেশি গরুর ব্যবসায়ীরা কোনো কোনো বছর লোকসানের মুখে পড়ে। সে কারণে ভারতীয় কিংবা মিয়ানমারের কোনো পশু যাতে আমাদের দেশে ঢুকতে না পারে, সে জন্য সীমান্ত রক্ষাবাহিনীকে অনেক বেশি তৎপর হতে হবে। রাজধানীসহ বিভিন্ন মহানগরীতে কোরবানির পশুর যেসব হাট বসে, সেখানে মৌসুমি গরু ব্যবসায়ীরা তাদের গরু তোলে। এদের মধ্যে কিছু পশু থাকে, তাদের নিজেদের এবং কিছু থাকে আশপাশের লোকজনের। তারা যদি তাদের পশুর নায্যমূল্য পান, তা হলে তারা আরো বেশি উৎসাহিত হবেন এবং আগামীতেও এই ধরনের মৌসুমি ব্যবসায় আরো বেশি মনোযোগী হবেন। পারিবারিকভাবে প্রতি বছর দুই-একটি গরু মোটাতাজাকরণ করতে পারলে ঈদুল আজহার সময় তা বিক্রি করে সংসারের বাড়তি খরচ মোটানো সম্ভব।

ভারতীয় গরু বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিয়ে গরু মোটাতাজা করার ফলে এসব গরু খুব কম সময়ে বড় হয়ে যায়। ভারত থেকে গরু এলে দেশীয় গরুর দাম কমে যায়। তখন দেশীয় পশুর ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেন না, ঋণ নিয়ে অনেকে গরু লালন পালন করে থাকেন। আত্মকর্মসংস্থানের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে- পশুপালন ও খামার করা। অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশের প্রাণিসম্পদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাই বর্তমান সরকার এই বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আমাদের উচিত সময় ও সুযোগ বের করে পতিত অনাবাদি জমি চাষাবাদ ও পশুপালন করা। এতে নিজেদের চাহিদার কিছুটা পূরণের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক চাপও কমবে। অর্থনৈতিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে দেশের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে বেকার সমস্যা সমাধান করতে হবে। আর এই বেকার সমস্যা বা আত্মকর্মসংস্থানের অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো পশুপালন করা। এতে বেকার সমস্যা সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে মানুষ লাভবান হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত