ঈদে ভোগান্তি রোধে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত

বাস্তবায়নের প্রত্যাশায় ঘরমুখো মানুষ

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আগামী ১৭ জুন দেশে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখা, সড়ক-নৌ-রেলপথে দুর্ঘটনা কমানো, রেলে শিডিউল বিপর্যয় রোধ, সহজে টিকিট পাওয়াসহ সব ধরনের ভোগান্তি ও হয়রানি বন্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে এক গুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘ঈদুল আজহার প্রস্তুতিমূলক সভায়’ নেওয়া এসব সিদ্ধান্ত গত বুধবার গণমাধ্যমকে জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিজিএমইএ’র প্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিরা সভায় অংশগ্রহণ করেন। গ্রহীত সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে সড়কপথে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের মধ্যে আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে সব কার্যক্রম গ্রহণ করবে : পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) যানজটমুক্ত ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে হটস্পট চিহ্নিতকরণ, হটস্পটগুলোতে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দায়িত্বশীল জনবলের উপস্থিতি ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় নিশ্চিত করবে। মহাসড়কের পাশে কিংবা যত্রতত্র কোরবানির পশুর হাট স্থাপনের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে আন্তঃদপ্তর সমন্বয়ের নিশ্চিত করতে হবে। এফবিসিসিআই ও বিজেএমইএ তাদের কর্মীদের একসঙ্গে ছুটি প্রদান না করে ধাপে ধাপে ছুটি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও যানজটমুক্ত রাখতে হটস্পট চিহ্নিতকরণ, হটস্পটগুলোতে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, দুর্ঘটনায় পতিত কিংবা বিকল যানবাহন তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণে নিবিড় সমন্বয় ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ঈদে রেলযাত্রা, রেলের টিকিট পাওয়া এবং শিডিউল রক্ষার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে টিকিট পাওয়াতে যেকোনো ধরনের ভোগান্তি, হয়রানি, প্রতারণারোধে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে টিকিট বিক্রয়ের বিষয়টি নিবিড়ভাবে মনিটরিংসহ সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে নজরদারি করতে হবে। শিডিউল বিপর্যয় রোধে বিকল্প ট্রেন, রিলিফ ট্রেনের ব্যবস্থা এবং বিকল্প অতিরিক্ত বগি রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ঈদে ঘরমুখী ও ফিরতি মানুষের নৌযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নৌযানগুলো অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন রোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নৌযানগুলোর ফিটনেস নিশ্চিত করতে হবে। লঞ্চ, ফেরি ও নৌঘাটগুলোর নিরাপত্তা, যাত্রীবান্ধব ঘাট ব্যবস্থাপনা এবং টিকিট পাওয়াতে সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। ঈদে বিমানযাত্রায় সরকারি-বেসরকারি বিমান পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো বিশেষ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড তাদের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল বৃদ্ধি করে যাত্রীসেবা সুনিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে বিমানের ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি বড় বিমানের ব্যবস্থা করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে: বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এছাড়া এ সভায় আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা, পরিবহন, হাট ব্যবস্থাপনা, অনলাইন মার্কেট মনিটরিং, ঈদযাত্রা, কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চামড়া সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, ঈদ ফিরতি যাত্রাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি, কার্যক্রম ও আন্তদপ্তর নিবিড় সমন্বয়, ঈদ-পূর্ব সময়ে নিত্যপণ্যের সরবরাহ, মজুত ও মূল্য নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে এই ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় মানুষ অনেকখানি আশ্বস্ত হয়েছে। মানুষের ধারণা, যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর অফিস উদ্যোগী হয়ে এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেহেতু এবার হয়তো ঈদযাত্রা অত্যন্ত নির্বিঘ্ন হবে। মানুষ স্বস্তির সঙ্গে বাড়িতে আপনজনের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ পাবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন করার মতো মানসিকতা ও জনবল কাঠামে কিংবা উদ্যোগ আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের মধ্যে আছে কিনা, সেটাই এখন বড় কথা। সিদ্ধান্ত নিতে তো কোনো সমস্যা নেই, তবে সমস্যা হলো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে। এবার যারা ঈদে বাড়ি যাবেন তাদের আশা থাকবে, সিদ্ধান্তগুলোর যেন বাস্তবায়ন হয়।