পরিবর্তিত ভূরাজনীতিতে জি-৭ সম্মেলন

অলোক আচার্য

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ইতালিতে আজ শুরু হয়েছে গ্রুপ অব সেভেন বা জি-৭-এর ৫০তম শীর্ষ সম্মেলন। জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর নেতারা পুগলিয়ার (আপুলিয়া) দক্ষিণাঞ্চলে বৈশ্বিক বিষয়ে আলোচনা করতে ৩ দিনের শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন। গত বছর ৪৯তম সম্মেলনের আয়োজক ছিল জাপান। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম আন্তর্জাতিক ফোরাম আয়োজন। অতীতে এই জোটের অনেক সিদ্ধান্তের বৈশ্বিক প্রভাব দেখা গেছে। এবারের সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছাড়াও উপস্থিত রয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুরুডো, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল। এছাড়া আরো কয়েকটি দেশের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর কাছে বিশ্বের প্রত্যাশা একটু বেশিই থাকে। এবারের সম্মেলনে যেসব বিষয় এজেন্ডা হিসেবে গুরুত্ব পাবে বলে মনে করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইউক্রেন পরিস্থিতি। আফ্রিকা এবং ভূমধ্যসাগর এ দুটি জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু এবারের সম্মেলনে আলোচনার মুখ্য বিষয়বস্তু হতে যাচ্ছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য ৫০০ কোটি ডলার ঋণের একটি চুক্তিসম্পন্ন হবে যা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কো তার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করার পরপরই পশ্চিমে হিমায়িত করা হয়েছে। গতবার প্রথমবারের মতো আলোচিত হয়েছিল সবচেয়ে নতুন বিষয় হলো এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের নীতি ও নিয়ম প্রবর্তন। এবারও বিষয়টি রয়েছে। ৫০তম জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে পোপ ফ্রান্সিসকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) একটি অধিবেশনের জন্য প্রথমবারের মতো শীর্ষ সম্মেলনে একজন পোপকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানব সভ্যতার জন্য হুমকি না ভালো এটা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক চলছে। সুতরাং একটি নীতিমালা থাকা প্রয়োজন এবং তা শক্তভাবে। এবারের আলোচ্য সূচির প্রথম সারিতেই ছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সম্ভবত এটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জানা যায়, মূলত রাশিয়াকে কীভাবে চাপে রাখা যায়, এ বিষয়টি ছিল দেশগুলোর মধ্যে আলোচনায়। এসেছে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কথা। জানা যায়, জি-৭ এর সব দেশই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, না কাটা হীরার বাণিজ্য রাশিয়ার সঙ্গে আপাতত বন্ধ রাখা হবে। এই সম্মেলন এমন এক মুহূর্তে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন বিশ্ব রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। পৃথিবী এখন বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে রয়েছে- অর্থনীতি, জ্বালানির সংকট, খাদ্য সংকট, শরণার্থী সংকট এবং আবশ্যিকভাবেই পরিবেশ বিপর্যয়। পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতেও দেশগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রত্যাশা ছিল। পৃথিবী এখন অর্থনৈতিক দুর্দশায় এবং মূল্যস্ফীতির কবলে অর্থনীতি ভুগছে। বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির ৭টি দেশ ও একটি সংস্থা নিয়ে গঠিত এই জোটের কাছে বিশ্বের প্রত্যাশাও থাকে বেশি। পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য এসব দেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এবারের সম্মেলনে যোগ দিয়েছে আফ্রিকা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নেতারা। ইতালিতে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১০ বছরের জন্য একটি দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক চুক্তি বলে স্বাগত জানিয়েছে কিয়েভ। চুক্তিতে ইউক্রেন মার্কিন সামরিক ও প্রশিক্ষণ সহায়তার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে এই চুক্তিতে ইউক্রেনের মাটিতে মার্কিন সৈন্য পাঠানোর কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জি-৭। রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ থেকে বছরে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার সুদ আসে। জি-৭ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী এই তিন বিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সরিয়ে ইউক্রেনের ৫০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের বার্ষিক সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হবে।

একটি বিভক্ত বিশ্বে নেতৃত্বের ভবিষ্যতে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং কোন পন্থায় অগ্রসর হবে, তার করণীয় নির্ধারণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে এমন একটি অবস্থা বিরাজ করছে, যেখানে সর্বত্রই অস্থিরতা। দ্বন্দ্ব-সংঘাতে প্রাণহানির সঙ্গে সঙ্গে অতীতের তুলনায় বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো একটি ভালো অবস্থানে পৌঁছালেও অধিকাংশ দেশেই মুদ্রাস্ফীতি বাজারের উত্তাপ বাড়াচ্ছে। ব্যাংকিং খাতগুলো নানামুখী সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানি সংকটে টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থা নির্ধারণ করতে চাইছে দেশগুলো।