ঢাকা ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্ব বাবা দিবস

বাবা নামক বটগাছটির যত্ন করি তো?

আজহার মাহমুদ
বাবা নামক বটগাছটির যত্ন করি তো?

১৬ জুন বিশ্ব বাবা দিবস। ১৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে হয়তো এবারের বাবা দিবসটা আড়ালে থেকে যেতে পারে। আড়ালে থেকে যাওয়াটা অবশ্য বাবাদের পুরাতন অভ্যাস। বাবারা সবসময় নিজেদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে আড়ালেই থেকে যান। গোটা পৃথিবীর খবর আমার জানা নেই, তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে বাবারা সবসময় সন্তাননদের ভালোবাসা পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে। মাকে নিয়ে যতটা ভালোবাসা, সংগ্রাম, আবেগি, হার না মানা গল্প শোনা যায়, তার অর্ধেকও বাবাদের নিয়ে হয় না।

এসবের পেছনে অবশ্য লম্বা যুক্তিতর্ক হতে পারে। তর্ক-বিতর্ক যাই হোক বাবা শব্দটার ওজন অনেক। বাবা কি শুধু একটি নাম? আমি বিশ্বাস কারি সকলের উত্তর না হবে। বাবার অপর নাম হওয়া উচিত প্রাণ। বাবা মানে নতুন ভোরের আলো, বাবা মানে বেঁচে থাকার শক্তি। বাবা মানে ভয়হীন পথচলা, বাবা মানে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যাওয়া। বাবা মানে স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার, বাবা মানে প্রয়োজন নেই পেছনে ফিরে তাকাবার।

বাবার সংজ্ঞাটা আমার কাছে এমনই। তবুও বাবা নিয়ে আমাদের অনেকের অভিযোগ, অনুযোগ রয়েছে। সেটা স্বাবাভিক। বাবা বকা দেয়, বাবা কঠোর শাসন করে, বাবা মনের মতো জীবন-যাপন করতে দেয় না। বাবাকে নিয়ে এমন শত শত অভিযোগ আমার আপনার আমাদের অনেকেরই থাকতে পারে। এই অভিযোগগুলো জীবনের একটা পর্যায়ে আমার আপনার সন্তানরাও করবে। তখন আমি আপনিও বাবা-মায়ের ভূমিকায় থাকব। আর আমাদের বাবাদের মতোই শাসন করব। কেন করব, সেটা নিশ্চই আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই।

সত্যি বলতে বাবা নামটাই সন্তানের জন্য। একজন পুরুষ যখন বাবা হয়ে যায়, তখনকার চিন্তাচেতনায় থাকে শুধু সন্তান। সন্তানের প্রতি তার যে দায়িত্বটা রয়েছে, সেটা পালন করার জন্যই রোজ নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। কিন্তু আমরা সন্তান হয়ে বাবার প্রতি যে দায়িত্ব আছে তা ক’জন পালন করছি! বৃদ্ধ হলে যে বাবাদের আমরা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসছি তারাই আজ আমাদের এ পর্যন্ত এনেছে। অথচ আজ আমরা সেটা ভুলে গেছি। মায়ের গর্ভে হয়তো মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম। কিন্তু পৃথিবীতে এসে বাবাকে দিয়েছি কঠিন পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ। বাবার সামনে সন্তানের পড়াশোনার খরচ, খাবারের দায়দায়িত্ব, জামা, চিকিৎসা এবং আমাকে সুখে রাখর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছি। যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাবা রোজ লড়াই করে যাচ্ছে নিজের সঙ্গে। এসব কার জন্য? আমার-আপনার জন্য। কিন্তু সেই সন্তানই একদিন ‘বাবা’ নামক প্রাণীটিকে চেনে না।

পৃথিবীতে জন্ম হওয়ার পর প্রথম যেদিন বসতে শিখেছি, সেদিন বাবার কাঁধেই বসেছিলাম আমরা। আমাদের ছোট্ট বেলার বালিশ ছিল বাবার বুক। যার চুমু না পেলে আনন্দ পেতাম না তিনিই বাবা। যার হাত ধরে প্রথম স্কুলে গিয়েছিলাম তিনিই বাবা। পরীক্ষার হলে গিয়ে সন্তানের জন্য নিজের কাজ ফেলে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাই বাবা। নিজের ক্ষুধা চেপে রেখে আমার পছন্দের খাবার কিনে দেওয়া মানুষটাই বাবা। বাবারা এমনই হয়।

কথায় আছে, বাবাদের জামা-জুতা কখনও পুরাতন হয় না। বাবাদের চোখে সন্তানদের জামা-জুতো পুরাতন হয় শুধু। সেই সন্তানেরা (কিছু কিছু সন্তান) নতুন নতুন জামা-কাপড় পড়ে, ভালো ভালো খাবার খেয়ে বড় হয়ে পুরাতন বাবাটাকেই ছুড়ে ফেলে।

প্রতিটা বাবাই চান তার সন্তান যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। আর আমরাই একদিন অমানুষের মতো আচরণ করে, বাবাকে দূরে সরিয়ে দিই। আমাদের কষ্ট হলে বাবারও কষ্ট হয়। আমরা হয়তো তা বুঝতে পারি না, কারণ বাবা আমাদের সেটা বুঝতে দেন না। কিন্তু আমরা বাবার কষ্ট হলে কখনও কি নিজেদের কষ্ট অনুভব করি? এমনও কিছু কিছু নজির রয়েছে, বাবা সন্তানকে সারাজীবন পরিশ্রম করে বড় করে তুলেছে; আজ সেই সন্তান তার বাবাকে আঘাত দিয়ে চলে গেছে। কারণ আজ তার জীবনে আর বাবার প্রয়োজন নেই। তবুও সব বাবারাই চায় তার সন্তান ভালো থাকুক, সুখে থাকুক, সুন্দর থাকুক।

বাবার চিন্তা থাকে শুধু পরিবার আর সন্তান। কীভাবে সন্তানের চাহিদা পূরণ করবে, কীভাবে পরিবারের সব চাহিদা পূরণ করবে সেই চিন্তা নিয়েই বাবার বাকি জীবন কাটে। মৃত্যুর আগেও বাবা নামক মানুষটি তার সন্তানের জন্য চিন্তা করে যাবে।

হ্যাঁ, এটাই বাবা। বাবার চিন্তার ভাগ নেওয়ার মতো কেউ থাকে না। বাবাকে একাই তার সব চিন্তার ভার নিয়ে চলতে হয়। আর আমরা সেই বাবাকেই অনেক সময় ভালোবাসতে জানি না, দেখাতে পারি না কৃতজ্ঞতা।

একটা সময় আমাদের হয়তো অর্থ-সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি হতে পারে। আমরা নিজেরা স্বাবলম্বী হবো। তখন চারপাশে আমাদের অনেক আপনজন হয়ে উঠবে। অনেক সময় এতে আমরা আমাদের সত্যিকারের আপনজনটাই হারিয়ে যায়। হ্যাঁ সেই বৃদ্ধ বাবাকেই আমরা তখন একা করে দিই।

একবার নিজের কাছে প্রশ্ন করলেই উত্তর পাব আমরা। বাবা কীভাবে সময় কাটায়, কীভাবে খায়, কীভাবে ঘুমায়, সে খবরটাও আমরা রাখি না। আমরা কি কখনও জানতে চেয়েছি, বাবা তোমার ডায়বেটিসের কী অবস্থা? নাকি কখনও জিজ্ঞাসা করি, বাবা তোমার প্রেশার কেমন? আসলে আমরা বাবার বেলায় আসলে ব্যক্তিত্বহীন, দায়িত্বহীন হয়ে পড়ি। তাই আমরা এসব কিছুই জানতে চাই না।

তাই আসুন, এসব ভুল থেকে বের হয়ে আসি। বাবাকে সেভাবেই ভালোবাসি, যেভাবে তিনি আমাদের ভালোবাসেন। পৃথিবীতে বাবারাই একমাত্র প্রাণী যারা কিছু দাবি করেন না সন্তানদের কাছ থেকে, শুধু দিয়ে যান নিঃস্বর্থভাবে। ভালো থাকুক পৃথিবীর সব বাবা। ভালো থাকুক আমাদের বাবা নামক বটগাছটি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত