ত্যাগের মহিমায় পশু কোরবানি

মাংস বণ্টনে মানা হোক ইসলামি অনুশাসন

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দু’টি- ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহা। এই দুই ঈদের দুই রকম তাৎপর্য রয়েছে। ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ আসে ১ মাসের সিয়াম সাধনার পর আনন্দের বার্তা নিয়ে। আর ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ আসে ত্যাগের মহিমা নিয়ে। ৪ হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে বলেছিলেন, তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কোরবানি করতে। হজরত ইব্রাহীম ভেবে দেখলেন, তার সবচেয়ে প্রিয় আসলে সন্তান ইসমাইল। ইব্রাহীম আল্লাহর জন্য ইসমাইলকে কোরবানি দিতে নিয়ে গেলেন। শেষ মুহূর্তে আল্লাহ ইব্রাহীমের কোরবানি কবুল করলেন এবং ইব্রাহীমের ছুরির নিচ থেকে ইসমাইলকে সরিয়ে একটি দুম্বা দিয়ে দিলেন। ঈদুল আজহার মূল বাজেট কোরবানির পশু কেনায় ব্যায় করা হয়। আর সে কারণে ঈদুল আজহার মূল আনন্দ হচ্ছে কোরবানির গরু কেনা। পশুকে কয়েকদিন লালন-পালন করা এবং কোরবানি দেওয়ার মধ্যেই আনন্দ। সকালে ঈদের নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈদগাহ ময়দানেই চলতে থাকে পশু জবাই। মাংস কাটাকাটির পর ভাগাভাগি করা হয়। মাংসের একটা অংশ চলে যায় ‘সমাজের তহবিলে’। সমাজের মাংস তারাই পান যারা কোরবানি দিতে পারেননি। কোরবানি ঈদে প্রত্যেকের ঘরে ঘরেই পৌঁছে যায় মাংসের ভাগ। কোরবানির ঈদের সবচেয়ে চমৎকার ব্যবস্থা ‘সমাজের মাংস’র এই ধারণাটি। এখন অবশ্য মানুষের আর্থিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। কোরবানি না দেওয়া মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। সবার ঘরে মাংস পৌঁছে দেওয়ার এই সাম্যের ধারণার চেয়ে চমৎকার আর কোনো কিছু আছে বলে মনে হয় না। এই সবার ঘরে ঘরে আনন্দ পৌঁছে দেওয়াটাই কোরবানির ঈদের মূল চেতনা। ত্যাগেও যে পাওয়ার আনন্দ আছে, ঈদুল আজহা আমাদের সেটাই মনে করিয়ে দেয়। তবে সেই প্রেক্ষাপট কেন যেন অনেক পাল্টে গেছে। কোরবানির গরু কার চেয়ে বড়, কার গরুর দাম কত বেশি- এই নিয়ে চলে আলাপ-আলোচনা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তটা দিন দিন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। কার গরুর কত মণ মাংস হবে, মাংসের স্বাদ কেমন হবে, গরু দেশি না বিদেশি তা নিয়েই চলে আলাপ-আলোচনা। মোবাইল ফোনে ছবি তুলে পরিচিতজনের কাছে পাঠানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মাংস সংরক্ষণের জন্য এই সময় ফ্রিজের বাজারও থাকে জমজমাট। সর্বত্রই উৎসবের আমেজ। কোথাও কোথাও ত্যাগের বেদনার ছোঁয়া কম। লোক দেখানোর আড়ালে কেন যেন ক্ষয়ে যাচ্ছে, ত্যাগের চেতনা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির ভাবনা। আপনি গরু না ছাগল? এ প্রশ্ন শুনতে শুনতে শুনতে মানুষ অনেকটা বিরক্ত। জবাই করা গরুর ওপর বসে সেলফি তোলার মতো ঘটনাও কম নয়। কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য খামার। ঢাকায় পাড়া-মহল্লায়, রাস্তার মোড়ে, বাসার সামনে চলে অবাধে কোরবানি। অথচ গরু জবাই করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। নারী, শিশু, ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক, ধর্ম- কোনো কিছু বিবেচনা না করে নিজের বাসার সামনে গরু জবাই করা হচ্ছে। কোরবানির পর রক্ত যেখানে সেখানে পড়ে থাকে, বর্জ্যও আশপাশে ফেলে রাখা হয়। চারদিকে দুর্গন্ধ ও জীবাণু ছড়ায়। সে ক্ষেত্রে আমাদের কেন যেন, কোনো পরোয়া নেই। নিজের মাংসটা নিয়ে ফ্রিজ ভর্তি করতে পারলেই যেন কাজ শেষ। বাকি কাজ যেন সিটি কর্পোরেশনের। অথচ পরিচ্ছন্নতাটা ঈমানের অঙ্গ। পরিশেষে বলা যেতে পারে, ইসলামের অনুশাসন হিসেবে যার কোরবানির মাংস পাওয়ার অধিকার রয়েছে, তার মাংস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। যারা এক বা একাধিক পশু কোরবানি করবেন, তাদের দীর্ঘদিন ধরে মাংস সংরক্ষণ করার মন-মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। যাদের কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য মহান আল্লাহ রাখেননি। তাদের কথা মনে রাখতে হবে। হকদারের হক বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। কোরবানির পশুর মাংস বণ্টনের ইসলামি অনুশাসনের প্রতি পালন হোক- সেটাই সবার কামনা।