ঢাকা ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্বে উষ্ণায়ন ও বন সৃজন

আফতাব চৌধুরী
বিশ্বে উষ্ণায়ন ও বন সৃজন

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর জীবকূল যে এক মহাবিপর্যয়ের দোরগোড়ায় তার স্পষ্ট ইংগিত এরই মধ্যে প্রকটমান। ২০০৮ সালের জুলাই মাসের গোড়ার দিকে জাপানে জি-৮ রাষ্ট্রগুলোর সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়। ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রীন হাউস গ্যাস (কার্বন-ডাই অক্সাইড) নির্গমন ৫০ শতাংশ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয় সম্মেলনে এবং এ ব্যাপারে প্রতিটি রাষ্ট্রকে কার্যকর নীতি গ্রহণে আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, গ্রীন হাউস গ্যাসের বিষাক্ত ছোবল থেকে রেহাই পেতে হলে গোটা দুনিয়াকে একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যৎ বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হবে। এ দীর্ঘসময় সীমার মধ্যে প্রতিটি রাষ্ট্র-নেতৃত্ব নিজ নিজ দেশে গ্রীন হাউস গ্যাসের নির্গমন হৃাসে সক্ষম হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় এ সম্মেলনে। উল্লেখ্য এর আগের বছর জার্মানিতে অনুষ্ঠিত জি-৮ শীর্ষ সম্মেলনেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলো প্রায় অনুরূপ অঙ্গীকারদ্ধ হয়েছিল। জি-৮ গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্র আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি, রাশিয়া ও জাপান সবাই এ দীর্ঘকালীন টার্গেটকে সমর্থন জানিয়েছে, যদিও পরিবেশবিদদের এতে মোটেই সন্তুষ্ট নন। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, এত দীর্ঘ লক্ষ্যমাত্রা স্থির করায় সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলো ধীরলয়ে অগ্রসর হবে এবং এরই মধ্যে পরিস্থিতির অবনমন ত্বরান্বিত হবে। যাই হোক, ২০৫০ সালের সময় সীমার গ্রীন হাউস গ্যাসের পরিমাণ পঞ্চাশ শতাংশ কমানো যাবে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় নিরসন সম্ভব নয়।

উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর স্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অত্যাবশ্যক হলো গ্রীন হাউস গ্যাসের উৎসগুলোর উপর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ। বায়ুমন্ডলে গ্রীন হাউস গ্যাস বা কার্বন-ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ হ্রাসকল্পে তথা বায়বীয় ভারসাম্য রক্ষায় যে প্রধান দু’টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়, তা হলো- প্রদূষণ-রহিত বৈকল্পিক, শক্তি-উৎসের সন্ধান ও ব্যবহার এবং সবুজায়ন বা বনসৃজন। প্রদূষণ রহিত-শক্তি উৎস হিসেবে চর্চিত হয় জৈব জ্বালানি, পারমাণবিক জ্বালানি ও সৌরশক্তির কথা। এ উৎসগুলোর কার্যকারিতা ও সম্ভাবনার উপর কিছু আলোকপাত করা যেতে পারে।

উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রীন হাউস গ্যাস বা কার্বন-ডাই অক্সাইডের মাত্রা বায়ুমন্ডলে বৃদ্ধি ঘটিয়ে চলেছে জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থাৎ কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্রমবর্ধমান দহন। তাই এসব জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যত কমানো যাবে, ততই বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমবে, আর সে সঙ্গে হৃাস পাবে উষ্ণায়ন, কারণ এ কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাসই মূলত তাপ শোষণ করে বাতাসকে গরম করে তোলে। তাই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে তার বিকল্প হিসেবে জৈব জ্বালানির উপর নির্ভরতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। অনেক দেশেই বর্তমানে জৈব জ্বালানির কাঁচামাল (ফিডস্টিক) উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে। জৈব জ্বালানির উৎপাদন বাড়াতে সংশ্লিষ্ট তৈলবীজের উৎপাদনে নানা রকমের উৎসাহমূলক ছাড় দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য এ ধরনের সরকারি নীতি জৈব জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হলেও তা অন্য এক গুরুতর বিপদ ডেকে আনছে। জৈব জ্বালানির উৎপাদনের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট তীব্রতর হচ্ছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তার কারণ হলো, সরকারি ছাড় তথা অধিক অর্থকরী হওয়ায় অনেক কৃষকই চিরাচরিত খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছেড়ে তাদের উর্বর জমিতে পাম জেট্রোফার, চাষ করতে শুরু করছেন। এতে খাদ্যশস্য উৎপাদনে জমির অভাব দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া, ভোজ্য তেল হিসেবে পাম তেলের লভ্যতাও কমে যাচ্ছে এবং তা জৈব জ্বালানি উৎপাদনেই ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যাপক হারে বনাঞ্চল ধ্বংস করে ইথানল ও পাম তেলের উৎপাদন বাড়াতে খেত করছেন কৃষকরা। অর্থাৎ জৈব জ্বালানির উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে খাদ্যশস্যের উৎপাদনে মন্দাভাব লক্ষিত হচ্ছে এবং খাদ্যসংকট সৃষ্টি হচ্ছে। উপরন্তু বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার কাজটি আরো ত্বরান্বিত হচ্ছে। তাই বিষেজ্ঞরা জৈব জ্বালানি নিয়ে সঠিক নীতি রচনার আবশ্যকতা বোধ করছেন। জৈব জ্বালানির উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস পেলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের জনবহুল দরিদ্র দেশগুলাই অধিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। যেহেতু খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি তথা খাদ্য সংকট সৃষ্টির জন্য জৈব জ্বালানি উৎপাদনও একটি কারণ, তাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যতম পাম তেল উৎপাদনকারী দেশ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া জৈব জ্বালানি উৎপাদনের কিবষয়টি জরুরিভিত্তিতে পর্যালোচনা করার গুরুত্ব উপলব্ধি করছে। এ দেশগুলো উর্বর জমিতে জৈব জ্বলানি উৎপাদনের অবসান চায়। কাজেই জীবাশ্ব জ্বালানির বিকল্প হিসেবে জৈব জ্বালানি কতটুকু সার্থক ভূমিকা পালন করতে পারবে, তাতে বিতর্ক ও সন্দেহ থেকেই যায়। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে টানতে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের পরিবর্তে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের কথাও বলা হচ্ছে। অবশ্য পারমাণবিক শক্তির দ্বারা মোট বিদ্যুৎ চাহিদার কতটুকু পূরণ করা সম্ভব এবং তা আদৌ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সামর্থানুগ হবে কি না, সে ব্যাপারে এখনো যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। বলা হচ্ছে, ভারত আমেরিকা পরমাণু চুক্তি সম্পাদনার পর পারমাণবিক শক্তিনির্ভর যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে, তা দেশের মোট চাহিদার মাত্র কয়েক শতাংশ পূরণই সক্ষম। এমন কী পরমাণু বিজ্ঞানে বিশ্বে সর্বাধিক অগ্রসর দেশ আমেরিকাও দেশের উৎপাদিত বিদ্যুতের মাত্র কুড়ি শতাংশই নাকি পারমাণবিক শক্তির সাহায্যে উৎপাদনে সমর্থ হয়েছে।

তাছাড়া, পারমাণবিক শক্তি জ্বালানি হিসাবে প্রয়োগ প্রকৃতই দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব কি না তাও রহস্যাবৃত। এর তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের ফলে পরিবেশে হানিকর প্রভাবের আশঙ্কা বিজ্ঞানীরা মোটেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কাজেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক শক্তি জীবাশ্ম জ্বালানির কতটুকু সার্থক বিকল্প হিসেবে পরগণিত হতে পারে, সে বিষয়ে সংশয় মোটেই অমূলক নয়।

জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে জৈব জ্বালানি ও পারমাণবিক শক্তিনির্ভর জ্বালানির সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষিতে সৌরশক্তিকে এক উত্তম বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। সৌরশক্তির উৎস অসীম, অফুরন্ত। আবশ্যকতার চেয়ে অনেক বেশি শক্তি উৎপাদন সম্ভব সৌরশক্তি ব্যবহার করে। আমাদের দেশে সৌরশক্তির ব্যবহার শুরু হলেও তার মাত্রা এখনো একেবারেই অনুল্লেখনীয়। এ শক্তির সর্বাধিক ব্যবহারের গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। সৌরশক্তির উৎস যেমন অপরীসিম তেমনই-এর থেকে প্রদূষণের সম্ভাবনাও নেই। তাই সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বৃহৎ প্রকল্প স্থাপন করা জরুরি।

উল্লেখ করা যেতে পারে, সম্প্রতি অষ্ট্রেলিয়া ১ হাজার মেঘাওয়াট শক্তিসম্পন্ন বিশ্বের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রায় ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগে নিষ্পাদনীয় এ কেন্দ্রটি ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত বর্তমান বিশ্বের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটির তিনগুণ বেশি শক্তি উৎপাদনে সক্ষম হবে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশেও এ ধরনের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে লাগাম টানা দরকার। উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনীত কুফল থেকে পরিবেশ ও মানবজাতির রক্ষার দায়ভার শুধু সরকারের ঘাড়ে চাপালেই হবে না। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি নাগরিকেই দায়িত্ব রয়েছে এবং ইচ্ছা করলেই প্রত্যেকেই অনায়াসে এক সদর্থক ভূমিকা পালন করতে পারেন। এর জন্য যা একান্ত আবশ্যক, তা হলো গণসচেতনতা। পরিবেশ রক্ষায় প্রতিটি স্তরের প্রতিটি ব্যক্তিই কিছু না কিছু অবদান রাখতে পারেন। বাতাসে গ্রীন হাউস গ্যাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাধারণ মানুষ মূলত দু’ভাবে অতি সহজে এক সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। এক, জীবাশ্ম জ্বালানির অনাবশ্যক ব্যবহার হ্রাস দুই, সবুজায়ন অর্থাৎ বনসৃজন ও বন সংরক্ষণ। দু’টি কাজই সাধারণ মানুষের সাধ্যসীমাভুক্ত। অপ্রয়োজন বা অতি নগণ্য প্রয়োজনে যানবাহন চালিয়ে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে প্রতিদিন বহু কোটি টাকার জ্বালানির অপচয় ঘটানো হচ্ছে। বিরাট সংখ্যক মানুষের কাছে স্কুটার-বাইক তথা বিভিন্ন প্রকারের হালকা যানের ব্যবহার যতটুকু আবশ্যক তার চেয়ে অনেক বেশি লোক দেখানো স্ট্যাটাস সিম্বল। ট্রাফিক জ্যামে নাজেহাল শহরে সংকীর্ণ ভগ্নদশা রাস্তায় নেহাৎ লোক দেখানোর অভিপ্রায়ে বা শখের বর্শবর্তী হয়ে কার-বাইকের যথেচ্ছ ব্যবহার নাগরিক সচেতনতার চরম দৈন্যদশাকেই সূচিত করে। অনাবশ্যক যান ব্যবহারে দুর্লভ মহার্ঘ জ্বালানির অপচয় ঘটে, বৃদ্ধি পায় নাগরিক দুর্ভোগ, দুর্ঘটনাজনিত প্রাণশঙ্কা, রোগভোগের আশঙ্কা, প্রদূষণ আর উষ্ণায়ন। সামান্য গণসচেতনতা এ ক্ষেত্রে দৈনিক বহু কোটি টাকার জ্বালানির সাশ্রয় ঘটিয়ে উষ্ণায়ন ও জরবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়ের মাত্রা স্থিমিত করতে পারে এবং নাগরিক জীবনেও অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্য ও নিয়মশৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করতে পারে।

বনায়নে আমরা প্রত্যেকেই কিছুটা হলেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। গাছপালার নিঃসীম গুরুত্বকে অনুধাবন করতে হবে। গাছপালা বাতাস থেকে ক্ষতিকারক কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে এবং একইসঙ্গে বাতাসে জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন গ্যাস যোগ করে। এভাবেই গাছপালা বায়বীয় ভারসাম্য বজায় রেখে পৃথিবীকে বাসোপযোগী করে তোলে। গাছপালাবিহীন পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব যে অকল্পনীয়, তা কারো অজ্ঞাত নয়। বাড়ি, রাস্তা, স্কুল, কলেজ, অফিস সর্বত্রই যথাসম্ভব গাছপালা রোপণ করে পরিবেশ রক্ষায় এক মহতী ভূমিকা পালন করা আমাদের পক্ষে অবশ্যই সম্ভব। সবুজায়নের মাত্রা যত বাড়বে, ততই বাতাসে গ্রীন হাউস গ্যাসের পরিমাণ কমবে। বলাবাহুল্য, উপরোক্ত কথাগুলো আমাদের কাছে মোটেই দুর্বোধ্য না হলেও তার বাস্তবায়নে আমাদের মধ্যে যে সদিচ্ছার অভাব রয়েছে তা অনস্বীকার্য। আরো আশ্চর্যের বিষয়, এ সদিচ্ছার অভাব সমাজের উচ্চস্তরের তথাকথিত শিক্ষিত-সচেতন মহলেই অধিক মাত্রায় দৃষ্ট হয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যায় চূড়ান্ত ভন্ডাচার। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ্য, আজকাল পরিবেশ দিবসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন এক রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এতে তথাকথিত সমাজসেবীদের, রাজনৈতিক নেতা ও আমলাদের বিশেষ তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়। গাছপালার প্রতি ভালোবাসা বছরের এ বিশেষ দিনটিতে তাদের মধ্যে জাগ্রত হয়। এ নির্দিষ্ট দিনের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দান করে এ সমাজসেবীর দল নিজেদের ধন্য মনে করেন। অথচ পরিবেশ দিবসের পরদিনই তাদের প্রকৃতিপ্রেম উধাও হয়ে যায়। তাই তো এক পরিবেশ দিবসে প্রোথিত বৃক্ষ চারা পরবর্তী পরিবেশ দিবসের মুখবলোকনে বঞ্চিত থাকে। এভাবে আমাদের সমাজসেবী পরিবেশপ্রেমীরা একই স্থানে বছরের পর বছর চারা রোপণ করে চলেন, যে চারা কখনো বৃক্ষ হয়ে উঠে না। আবার এমন কিছু অত্যুৎসাহী পরিবেশপ্রেমী ব্যক্তি-সংগঠনও দেখা যায়, যারা মাঘ-ফাল্গুন মাসের অকালেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিসম্পন্ন করে প্রচারের আলোয় আসার কাজটি সেরে ফেলেন এ শ্রেণির বৃক্ষপ্রেমীরা চারা ও মাটির দিকে চেয়ে বৃক্ষ রোপণ করেন না, স্যুট কোটে পরিপাটি এ বৃক্ষপ্রেমীদের আবিষ্ট নয়নযুগলের অপলক দৃষ্টি থাকে প্রচার মাধ্যমের ক্যামেরার দিকে। অথচ আমরা চাইলেই অনতিব্যয়ে, অনাশ্রমে গাছপালা লাগিয়ে সবুজায়নের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পারন করতে পারি। অনাবশ্যক জ্বালানি দহন রোধ ও সবুজায়নের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ অতি সামান্য মাত্রায় অবদান রাখতে পারলেই তা উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ রক্ষায় এক বিরাট পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু আমাদের অসচেতনতা ও নিষ্পৃহতার কারণে যা আমাদের আয়ত্বের মধ্যে তাও আমরা করতে ব্যর্থ হচ্ছি। এ প্রেক্ষাপটে বিচার করে যে সত্যটি গভীরভাবে অনুভূত হয়- তা হলো, আমাদের কাছে পরিবেশ চিন্তা এখনো যদি প্রাথমিকতা ও সর্বজনীনতা লাভ না করে তা হলে চরম প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীন এক অবাস্তব পৃথিবীই ভবিতব্য হবে। কাজেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রয়াস চালাতে হবে এর বিকল্প নেই।

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট। বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার (১ম) স্বর্ণপদক প্রাপ্ত।

সদস্য-বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি, সিলেট।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত