টেকসই উন্নয়নে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান দরকার

সঠিক ও সুনির্দিষ্ট নীতিকাঠামো প্রয়োজন

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৃতির আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে এবারের মতো তীব্র তাপপ্রবাহ আগে কখনো হয়নি। এই অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ ও দুঃসহ গরম আমাদের জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা দেয়। এটি আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে নিশ্চিত করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগামী বছরগুলোতে তাপপ্রবাহ আরো শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। টেকসই উন্নয়ন হলো- এমন একটি উন্নয়ন প্রক্রিয়া, যা বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের ক্ষমতাকে ঝুঁকিতে ফেলে না। প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান হলো এমন পদ্ধতি, যা পরিবেশগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের শক্তিকে কাজে লাগায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান আমাদের নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে। এটি একটি কৌশলগত সমাধান, যা পরিবেশগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারে। বন উজাড় হওয়া স্থানে পুনরায় বনায়ন হয়েছে। উজাড় ভূমিতে স্থানীয় জাতের গাছপালায় ভরে উঠছে। এই পরিবর্তন জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি, মাটির ক্ষয়রোধ, বাতাস ও পানির গুণগত মান বাড়িয়েছে। রাস্তার দু’পাশে সারি সারি স্থানীয় গাছ শুধু সৌন্দর্যই বাড়াচ্ছে না, তাপপ্রবাহ রোধে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবেও কাজ করছে। গাছের পাতা, শাখা-প্রশাখা ও মাটি রোদের তাপ শোষণের মাধ্যমে পরিবেশকে শীতল করছে। সবুজ কৃষিজমির পাশাপাশি, শিমুল-পলাশের মতো দেশীয় জাতের গাছ ফসলের মাঠে ছায়া ও বায়ু সুরক্ষা প্রদান করছে, তাপের প্রভাব কমিয়ে ফলন বাড়াচ্ছে।

সারা দেশের শহরগুলো প্রাণবন্ত সবুজ নাগরিক শহরে রূপান্তরিত হয়েছে। গাছপালাগুলো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখছে এবং নির্মল ও সজীব বায়ু সরবরাহ করছে। এই মনোরম দৃশ্যগুলো আসলে কল্পনা নয়, প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে আমাদের দেশের উন্নয়নকে টেকসই করার কয়েকটি উদাহরণ। একটু মনোযোগ দিলেই এই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব। এনবিএস পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি কার্যকর পদ্ধতি, যা বহুমুখী সুবিধা প্রদান করে। প্রচলিত অবকাঠামোগত সমাধানের তুলনায় প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান অনেকাংশে সাশ্রয়ী, কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় এবং অতিরিক্ত পরিবেশগত সুবিধা প্রদান করে। আমরা যদি প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান সম্পর্কে আরো সুগভীর চিন্তা করি, তাহলে দেখতে পাব, এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এ ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জন্য পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি জরুরি ও বড় চ্যালেঞ্জ।

পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ঝরনা ও ঝিরিকে পানীয় জলের প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। তবে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি ও ঝরনাগুলো শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে, যা পার্বত্য এলাকায় পানীয়জলের অভাবকে বাড়িয়ে তুলছে, দেখা দিচ্ছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। নদী ও ঝিরি থেকে দূষিত পানি পানের কারণে আক্রান্ত হচ্ছে, পানিবাহিত রোগে। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান নতুন পথ তৈরি করবে। আজকের বিশ্বে যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত অবক্ষয় ও টেকসই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান একটি আশার আলো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে, প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান গ্রহণকে উৎসাহিত করার জন্য সঠিক ও সুনির্দিষ্ট নীতিকাঠামো প্রয়োজন। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, রাজনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজ এবং স্থানীয় মানুষের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে কার্যকর প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান পদ্ধতি চিহ্নিত করতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।