রাজনীতি

আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তীতে প্রত্যাশা

জিয়াউল হক

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

২৩ জুন আওয়ামী লীগ-এর প্লাটিনাম জয়ন্তী। ১৯৪৮ সালের এই তারিখেই রাজধানী ঢাকার টিকাটুলির কে এম দাস লেন রোডস্থ শওকত আলীর রোজ গার্ডেন প্যালেসে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে একজন নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের জন্ম হয়েছিল। বলে রাখা ভালো তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারের অন্যায়-অন্যায্যের প্রতিবাদ স্বরূপ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অর্থাৎ প্রতিবাদ করতেই আওয়ামী লীগের জন্ম। প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও শামসুল হক। কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সেদিনের শেখ মুজিব তথা আজকের বঙ্গবন্ধু। পরে অবশ্য পররাষ্ট্রবিষয়ক মতপার্থক্যের কারণে মাওলানা সাহেব দল ত্যাগ করেন।

বাঙালি জাতির মহান মুক্তির ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠিত দলটি হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ ৭৫তম বর্ষ পূর্ণ করেছে। সাথে পূর্ণ করেছে বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষা। সুদীর্ঘ পথচলা দলটির জন্য মোটেও মসৃণ ছিল না। বাঙালি জাতির ক্রান্তিলগ্নে প্রতিষ্ঠিত দলটি এই জাতিকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছে। শুধু দেশ দিয়েই তাদের কর্ম শেষ করেছে তা নয়। যুদ্ধ বিধস্ত দেশকে খাদের কিনার থেকে টেনে তুলে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার যে মহাকর্মযজ্ঞ আজও চলমান রেখেছে। বন্ধুর পথে নানা চড়াই-উতরাই, বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে আজ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে।

আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ধরে সফলতার সাথে টিকে আছে। এর কারণ হলো প্রতিষ্ঠার পর হতেই দলটি জনগণের মন পাঠ করতে পারত। দলটির মুখ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যিনি গণমানুষের মনের ভাষা অনায়াসে পড়তে পারতেন। গণমুখী কর্মসূচি ও কর্মসূচি পালনে গণসম্পৃক্ততা আওয়ামী লীগকে সার্বজনীনতা দিয়েছে। ফলে দলটি যখন যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সমগ্র জাতি তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তা সফল করেছে। এর নজির আমরা দেখতে পাই, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে। এর ফলেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন জিতেছিলেন।

পৌনে শতবর্ষ বছর বয়সি আওয়ামী লীগের এই সময়কাকে দুটি অধ্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ভাগ ছিল প্রতিষ্ঠা হতে শুরু করে স্বাধীনতাত্তরকাল হয়ে স্বাধীনতা অর্জন এবং ৭৫ বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।

দ্বিতীয় অধ্যায় ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে শুরু হয়ে অদ্যবধি চলছে। এরমধ্যে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সময়কে আওয়ামী লীগের অন্ধকার অর্ধযুগ বলা যেতে পারে। কেন না, বঙ্গবন্ধু বিহীন আওয়ামী লীগে অনেকটা হালহীন নৌকার তুল্য। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগেরও গলাটিপে ধরেছিল হত্যাকারীরা। অনেকটা সফলও হয়েছিল বলা যায়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া আজকের শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল না ধরলে বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন রকম হতে পারত। প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছরে আওয়ামী লীগের আমলনামা দাঁড়িপাল্লায় ওজন করলে সফলতার পাল্লাই ভারি হবে বৈকি। দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনা করার তেমন কোনো রসদ আছে বলে মনে হয় না। তবুও বলতে হয় আওয়ামী লীগও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়।

দেশ বিনির্মানকারী দলটির বড় শক্তি গণমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারা। জনগণের হয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলা। যে কথাটি মানুষ বলতে চায় তা আওয়ামী লীগ বলে দেয়। প্রতিষ্ঠার সময় হতে আজকের দিনের সাথে তুলনা করলে আওয়ামী লীগের সেকেলে হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। বরং সময়ের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলেছে। তার নজির আমরা দেখি দলের নাম পরিবর্তনে ক্ষেত্রে। প্রতিষ্ঠার সময় দলটির নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। সময়ের বিবেচনায় তা হয়তো সঠিক ছিল। কিন্তু দিন বদলের সাথে দলের নামেও পরিবর্তন এনেছে। দলকে একটি নিদিষ্ট ধর্ম মতের মধ্যে কুক্ষিগত না রেখে সার্বজনীন রূপ দিয়েছেন। ধর্মীয় সংকীর্ণতা থেকে বের করে গণমানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। যাতে যেখানে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের কথা বলা যায়। দলের নাম আওয়ামী মুসলিম লীগ হতে মুসলিম শব্দটি অপসারণ করে আওয়ামী লীগ নামকরণ করেন।

৭৫ বছর বয়সি একটি সংগঠনকে যদি একজন মানুষের সাথে তুলনা করা হয়, তাহলে আজ সে অভিজ্ঞতায় টইটম্বুর। বৃক্ষের সাথে তুলনা করলে মহীরুহতে পরিণত হয়েছে। যার শিকড় এখন গভীর থেকে গভীরতরে। ভেবে আশ্চর্য হই, এত বছর একটা দল কি করে এতটা জনপ্রিয়তার সাথে টিকে আছে? সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়! তা আওয়ামী লীগ পেরেছে এবং পেরেই আসছে। স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে পূর্ব প্রস্তুতিসহ সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রাম এই দলটির ব্যানারেই হয়েছে। আর এই ব্যানারের একমাত্র ট্রেডমার্ক ছিল আওয়ামী লীগের প্রাণভোমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব দেশভাগের ক্ষত সারাই থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা দাবি, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন হয়ে একাত্তরে বিজয় অর্জন এই সবই ঘটেছে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর যুগলহাত ধরে। আন্দোলনকে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের একক কৃতিত্ব বললে অত্যুক্তি হবে না।

আওয়ামী লীগের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা একটু বেশি। যেটি দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে মানুষ করে না। আওয়ামী লীগের কাছে থেকে দেশ কি পেল? এই প্রশ্নটি পাঠক মনে সহজে উঁকি দিতে পারে। এক কথায় এর জবাব দেওয়া দূরহ। বলতে গেলে বাঙালি দেশটাই তো পেল আওয়ামী লীগের কাছে থেকে। দেশ পেলে আর কি পাওয়ার বাকি থাকে? তারপরও আওয়ামী লীগ প্রতিনিয়ত জনগণের কাছে জবাবদিহি করে আসছে। মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে আওয়ামী লীগও সদা সচেষ্ট। আওয়ামী লীগের কাছে বাঙালির প্রত্যাশা ছিল- আছে থাকবে। আজকের প্লাটিনাম জয়ন্তীতে একটাই প্রত্যাশা- যুগ যুগ জিও আওয়ামী লীগ।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট