ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সরকার স্ট্রিট ফুড নিরাপদ রাখতে উদ্যোগ নেয়নি

মান নিশ্চিত করা বড় একটা চ্যালেঞ্জ
সরকার স্ট্রিট ফুড নিরাপদ রাখতে উদ্যোগ নেয়নি

সারা বিশ্বে স্ট্রিট ফুড অর্থাৎ পথের ধারের খাবারের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় এবং বিভিন্ন ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি স্ট্রিট ফুড মানুষের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সহজ প্রাপ্যতা, দামে সাশ্রয়ী, মুখোরোচক এবং সুস্বাদু হওয়ায় স্ট্রিট ফুডের কদর চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী, স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষ থেকে উচ্চবিত্তের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়। ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের ঢাকা শহরে অনেকে যেমন শখ করে স্ট্রিট ফুড খেয়ে থাকে, তেমনিভাবেই বিপুলসংখ্যক মানুষ নিতান্ত প্রয়োজনে স্ট্রিট ফুড খেয়ে থাকে। চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী, স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের কাছে সুলভ মূল্যে খাবার পাওয়ার অন্যতম জায়গা হলো এ স্ট্রিট ফুডের স্টলগুলো। এখনকার মূল্যবৃদ্ধির সময়ে সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাদ, সাধ্য এবং সময় বাঁচানোর খাতিরে লোকেরা এসব স্ট্রিট ফুডের দোকানে ভিড় জমায়। বিশেষ করে বাণিজ্যিক অফিস-আদালত এলাকায় স্বল্পআয়ের মানুষের অন্যতম ভরসা এ স্ট্রিট ফুড। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতিদিন প্রায় ৬০ লাখ মানুষ ঢাকায় স্ট্রিট ফুড খেয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে শুধু বাণিজ্যিক এলাকায় নয়, শহরজুড়ে নানা জনপ্রিয় কেন্দ্র বা হাব তৈরি হয়েছে এ স্ট্রিট ফুডের কালচার ঘিরে। বিভাগীয় প্রতিটি শহর এমনকি জেলা পর্যায়ের শহরগুলোতেও স্ট্রিট ফুডের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের স্ট্রিট ফুডের পরিচ্ছন্নতা ও মান নিয়ে যেসব তথ্য পাওয়া যায়, তা সত্যিই ভয়ঙ্কর!

স্ট্রিট ফুডপ্রেমীদের একটি সুস্বাদু খাদ্য উপকরণ টমেটোর সস। অনেক খাবারে সস না খেলেই নয়। ফাস্টফুডের দোকানে বার্গার, স্যান্ডউইচ, ভেজিটেবল রোল, পিৎজা বা শিঙাড়া-সমুচা খাওয়ার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে টমেটো সস ফ্রি দেওয়া হয়। অনেক রান্নায়ও এই সস ব্যবহৃত হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভেজালবিরোধী অভিযান সূত্রে জানা গেছে, হোটেল, রেস্তোরাঁ, স্ট্রিট ফুড কিংবা ফাস্টফুডের দোকানে যেসব টমেটোর সস দেওয়া হয়, সেগুলোতে টমেটোর কোনো উপস্থিতিই নেই। পচা মিষ্টি কুমড়ার সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত জ্যামটন গাম, টেক্সটাইলের রঙ, পচা ময়দা, ঘনচিনি এবং বিভিন্ন রাসায়নিকের সমন্বয়ে তৈরি করা হচ্ছে- এসব ভেজাল টমেটোর সস। এসব সসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকছে ভেজালের বিষ। প্রতিনিয়ত ভেজাল সস খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে কিডনি, লিভার ও পাকস্থলীসহ শরীরের নানা জটিল রোগে। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। দেশের যে কোনো ব্যস্ত ফুটপাতের ধারেই পাওয়া যায় ফুচকা, চটপটি, ভেলপুরি। সব বয়সের মানুষের কাছে টক সমৃদ্ধ জিভে জল আনা মুখরোচক এসব খাবারের জনপ্রিয়তা থাকলেও মূলত খাদ্যটির খদ্দের হচ্ছে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের এক পরীক্ষায় ফুচকাতে মানুষের মলের জীবাণু পাওয়া গেছে। দেশের একমাত্র রেফারেন্স প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ঢাকা শহরের শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ ভেলপুরি, ফুচকা ও ঝালমুড়িতে কলেরার জীবাণু ই-কোলাইর উপস্থিতি। কিছু নমুনায় টাইফয়েডের জীবাণু সালমোলিনা পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পথের পাশে খাবার তৈরির প্রক্রিয়া, ব্যবহৃত পানি, রান্না, সংরক্ষণ, সরবরাহ এসব নানা স্তরে খাবার দূষিত হয়। তবে দূষণের কারণ বা জীবাণুযুক্ত হওয়ার একটি বড় কারণ অনিরাপদ পানির ব্যবহার। তা ছাড়া বিক্রেতার নোংরা হাতে, গামছায়, প্লেটে বা কাগজে জীবাণু থাকে। এ ছাড়া মাছি বা অন্যান্য কীটপতঙ্গের কারণেও দূষণ ঘটে। এ ছাড়া বারবার টাকা ধরার মাধ্যমেও জীবাণু ছড়ায়। এসব খাবারের সঙ্গে যে টক ব্যবহৃত হয় মূলত সেটি তেতুলের হওয়ার কথা। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অন্যতম অনুষঙ্গ খাদ্য। শরীরের সুস্থতার জন্য সুষম খাদ্য প্রয়োজন। সুস্থ-সবল ও নিরোগ জাতি গঠনের লক্ষ্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য অতীব জরুরি। যে জাতি বেশি উন্নত; তাদের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থাও তত উন্নত। কিন্তু আমাদের দেশের খাদ্যে ভেজাল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার প্রস্তুতি, মানুষের রুচির বিকৃতির শামিল। শুধু সময়ে সময়ে অভিযান, জরিমানা করে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন। যদিও আমাদের দেশে স্ট্রিট ফুডের মান নিশ্চিত করা বর্তমানে বড় একটা চ্যালেঞ্জ, তারপরেও এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে না পারলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।

সরকারের পক্ষ থেকে স্ট্রিট ফুড নিরাপদ করতে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সরকারের উচিত হবে বাণিজ্যিক ও অন্যান্য এলাকায় নিরাপদ খাদ্য জোন তৈরি করা। স্ট্রিট ফুড নিরাপদ খাদ্য মান বজায় রাখতে সরকারকে সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত