যা-কিছু হারিয়ে যায়, অন্যরূপে তা ফিরে আসে!

রাজু আহমেদ

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

এক.

অন্যের সাথে নিজের তুলনা করে ভালো থাকতে চেয়ে অতুলনীয় দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হতে হয়। যেহেতু আমরা তুলনা করে কারো মতো দুঃখ পেতে চাই না কাজেই আমাদের লক্ষ্য সুখ। তবে সুখের গন্তব্যে পৌঁছাতে হরেক অসুখ বাধাই। কারো সাথে তুলনা করে ভালো থাকা যায়? আমাদের চেষ্টা এবং মহত্তমের পরিকল্পনার সমন্বয়ে যতটুকু বরাদ্দ হয় ততটুকুই আমরা পাই।

অথচ আমরা যখন আমাদের সাধ্যাতিরিক্ত চাই, মন্দের অন্ধ অনুকরণ করতে যাই কিংবা যার মাঝে আমার অকল্যাণ সেখানে নিজেকে হারাই তখন মনোবেদনার গল্প হাজির হয়। বন্ধু-বান্ধবীর বাহ্যিক চাকচিক্য দেখে, প্রতিবেশির দহরমণ্ডমহরম অবলোকন করে কিংবা আত্মীয়-স্বজনের লোক দেখানো ভালোবাসা দেখে যদি কপাল চাপড়ে মরি যে আমার জীবনে এমন খরা কেনো তবে মানসিক অসুখ সেখান থেকেই শুরু হবে।

দুই.

আমি চাই- পাওয়ার জন্য এটাই চূড়ান্ত নির্ধারক নয় বরং একজন মহান পরিকল্পনাবিদ আমার জন্য মঙ্গল নির্ধারণ করে দেওয়া কিংবা না দেওয়া নির্ধারণ করেন। মন্দ সময় দিয়ে তিনি ভালো সময়কে উপভোগের ক্ষেত্র তৈরি করেন, বিশ্বস্ত এবং ধৈর্যশালী করার লক্ষ্যে তিনিই দুঃখ-কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করেন এবং কৃতজ্ঞতা বোধ দেখে নেয়ামত বাড়িয়ে দেন। সুতরাং কারো সাথে তুলনা করে ভালো থাকতে চাইলে দুঃখ বাড়তে পারে।

কেননা আপনি তো আপনি এবং আমিই আমি। ভাগ্যের বরাদ্দ, চেষ্টার সামর্থ্য এবং সুখের সান্নিধ্য যখন সরল রেখায় আসে তখন জীবনের পরতে পরতে বৃহস্পতির আগমন ঘটে। এখানে সময় এবং অসময় সামন্তরাল চলে। যা আপনার নসীবে নাই তার জন্য মিছিল-মিটিং করলেও জুটবে না, কপাল খুঁড়লেও পাবেন না। সব শক্তি বিনিয়োগ করেও পেতে পেতে উবে যাবে। ভুল ঠিকানায় কামনার নাগালে গেলেও দুঃখ বাড়বে। বরং অভিযোগের মাত্রা নিম্নগামী করে উচ্চতর সুখের সাম্রাজ্যে রাজত্ব করতে হবে।

তিন.

আমার যা কিছু হারিয়ে যাবে তা ভিন্ন মোড়কে ফিরে আসবে- এই বোধ জাগ্রত রাখলে দুঃখের তীব্রতা লাঘব হবে। অন্যরা যা যা পেয়েছে তার থেকে যা যা আমি পাইনি তার শূন্যতা আমাকে ভিন্নভাবে অনুভূত করিয়ে দেয়া হবে। সম্পদ সুখের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। সুখ আত্মিক প্রশান্তিতে। গাছতলাতেও সুখী হওয়া যায়, পোশাক ছাড়াও হাসিখুশি থাকা যায় যদি জীবন দর্শনের গুণগত পরিবর্তন সূচিত হয়। আমরা যখন অট্টালিকায় সুখের স্বপ্ন দেখার বাতিকে ভুগতে শুরু করেছি তখন জীবনের সারল্য হারিয়ে গেছে। মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় প্রবেশ করেছি।

এখন যা কিছু মন্দ আর ঘৃণার, যা কিছু ক্ষমতা ও সম্পদের তাতে আমাদের চোখ হারিয়েছে। আমরা অমুক হতে চাই, তমুক হতে চাই কিন্তু মানুষ হতে চাই না। আমরা সব পেতে চাই কিন্তু অতীতে সেজন্য ছাপ রেখে আসিনি। প্রশংসা করা এবং কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়াই আমরা বড় হতে চাই। ক্ষমতায় আরোহন করেই জনতার কুর্নিশ পেতে চাই। দমন ও দহনে মানুষকে গোলাম বানাতে চাই। অথচ এসব মানুষকে সুখী করে না বরং অমানুষের তকমা দেয়।

চার.

কারো সাথে তুলনা না করে নিজের নসিবেরটুকু প্রার্থনা করতে হবে। চেষ্টায় নিজেকে সম্মৃদ্ধের স্বপ্ন দেখতে হবে। কে কীভাবে সুখী- সেই ভাবনা ফেলে রেখে নিজের দায়িত্ব সৎভাবে পালন করতে হবে, আত্মাকেও রবের কাছে কৃতজ্ঞ রাখতে হবে এবং জীবনের নামে অনুযোগ-অভিযোগ কমিয়ে ফেলতে হবে। হতাশায় মানুষের বিশ্বাস-শক্তি হারিয়ে যায়। কাজেই অল্পতেই নিজের গল্প থেকে ইস্তফা দেয়া যাবে না বরং বিকল্পের ভাবনা রাখতে হবে।

যে জীবন আমার তা আমার সাধ্য ও শখের সমন্বয়ে সুসজ্জিত করে ভোগ করতে হবে। অপরের রূপের দিকে না চেয়ে নিজের খুঁতগুলো সারিয়ে তোলায় উদ্যোগী ও আন্তরিক হতে হবে। আমার কাছে অন্যের যা যা পাওনা তা মিটিয়ে দিলে, জীবনযাপনে সততা ও পরিশ্রম বহাল রাখলে সে ব্যক্তি কখনোই নিরাশ হয় না। আমরা কেউ স্রষ্টার ন্যায়বিচারের বাইরের নই। সুতরাং জীবনকে অভিযোগের কাঠগড়ায় তুললে, অপরের সম্পদ ও ক্ষমতা দেখে হতাশায় হারিয়ে গেলে দুঃখের সে অথৈ সাগর থেকে তাকে কেউ আর উদ্ধার করবে না বরং মাঝ দরিয়ায় ঠেলে দেবে। সেখানেই স্বপ্নহীন জীবনের সমাধি হবে।