ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফ্লাইওভারের নিচে জমি নিয়ে নীতিমালা তৈরি হয়নি

অপব্যবহারের নেপথ্যে রয়েছে চাঁদাবাজির অভিযোগ
ফ্লাইওভারের নিচে জমি নিয়ে নীতিমালা তৈরি হয়নি

রাজধানীতে একখণ্ড জমি স্বর্ণের চাইতেও দামি। অথচ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে রাজধানীর উড়ালসড়কের নিচের অধিকাংশ জমিরও অপব্যবহার হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে গত দুই দশকে উড়ালসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটি, ইউলুপ ও মেট্রোরেলসহ নানারকম উড়ালপথ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত মোট ১০৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এসব উড়ালপথের নিচে দখল-বেদখল ও অপব্যবহারে পড়িয়া রহিয়াছে প্রায় ২০৭ একর জমি। উড়ালসড়কের মূল্যবান জমি দখল করিয়া কোথাও গড়িয়া উঠিয়াছে ওয়ার্কশপ, কোথাও দেখা যায় গুদামঘর। কেউ কেউ আবার ছোটখাটো দোকান বসিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, উড়ালসড়কের নিচের মূল্যবান জমির এই ধরনের অপব্যবহারের নেপথ্যে রয়েছে চাঁদাবাজির অভিযোগ।

একটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় উড়ালসড়কের জমির অপচয়ের ফলে প্রতি বছর সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যগত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে- বাংলাদেশি মুদ্রায় যা অন্তত সাড়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা। নগরবিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনা অনুযায়ী এই সকল জমিতে জনগণের জন্য পাবলিক টয়লেট, খেলার মাঠ, সবুজায়ন, হাঁটিবার পথ, জলাধারসহ নানা উপায়ে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব। অথচ এর বিপরীতে এই সকল স্থান নিয়ে উঠছে অপরাধী ও মাদকসেবীদের অভয়াশ্রম।

রাজধানীর কুড়িল, বাড্ডা, রামপুরা, মহাখালী, মালিবাগ, মৌচাক, খিলগাঁও, তেজগাঁও, ফার্মগেট, মগবাজার, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ীসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরিয়া উড়ালসড়কগুলোর নিচের জায়গার দখল-দূষণের ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার ও মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে বেশকিছু জায়গায় পার্কিং, অস্থায়ী কাঁচাবাজার, ময়লা ফেলিবার ভাগাড় এবং ছোট ছোট দোকান গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও অন্ধকারে ছিন্নমূল মানুষ আবাস গড়ে তুলছে। অনেক সময় অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাগুলিতে মাদকসেবন ও মাদক কেনাবেচা হয়। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে সবুজায়ন করতে দেখা গেছে, তবে সামগ্রিকভাবে এই বিপুল মূল্যবান জমি নিয়ে কোনো নীতিমালা তৈরি হয়নি। ফলে অধিকাংশ জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয় নাই।

রাজধানীর জমি অতি মূল্যবান বিধায় তা কখনোই খালি পড়ে থাকে না। সেই জমিতে কিছু না কিছু গড়ে তুলে যারা সেইখান থেকে চাঁদা তুলবার পথ তৈরি করে, সেই মতলবাজগোষ্ঠী এই সুযোগ সহজে হাতছাড়া করতে চাইবে না। ফলে তারা চায় না এই জমির সঠিক ব্যবহারের নীতিমালা গড়ে উঠুক। সামগ্রিক ক্ষতির খতিয়ান আমরা আগেই উল্লেখ করেছে, বেশি বিপদ হলো মাদকের কারবার নিয়ে। মাদকের বিকিকিনির কাঁচা টাকা বিভিন্ন প্রভাবশালী জায়গায় ভাগ হয়। ফলে মাদকের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি থাকা সত্ত্বেও এই কারবারিদের প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। যার ফলে একদিকে যুবসমাজের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে অপচয় হচ্ছে রাজধানীর অতি মূল্যবান জমি। তাহা ছাড়া ঝুপড়িদোকান কিংবা ছিন্নমূল অপরাধীদের আড্ডাখানায় পথচারীদের নিরাপত্তা বিঘেœর পাশাপাশি উড়ালসড়কেরও ক্ষতি হইয়া থাকে। যেমন- হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে দখল করে দোকানঘর তুলবার কারণে সেইখানে আগুন লাগার ঘটনাও ঘটে। যাহার কারণে ফ্লাইওভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সুতরাং ফ্লাইওভার যেমন নগরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থাকে গতিশীল করছে, তেমনি তার নিচের জায়গাগুলিও গণপরিসর তৈরিতে এবং জনকল্যাণমুখী কাজে ব্যবহার করতে হবে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে বর্তমানে ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড স্ট্রাকচারের নিচের অংশে জনবান্ধব, টেকসই ও সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহার উপযোগী কমিউনিটি জোন তৈরি করা হয়েছে, যেখানে থাকছে হাঁটাচলার পথ ও সাইকেলের লেন, নগর-কৃষি, বাগান, বনায়ন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা। কিছু জায়গায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও শরীরচর্চা কেন্দ্র, সুইমিং পুল, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং পথনাটক ও শিল্পকর্ম প্রদর্শনেরও ব্যবস্থা হইতেছে। সার্বিকভাবে উড়ালসড়কের মতো অবকাঠামোর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত