অভিমত

নিয়ন্ত্রণহীন বাজারে মধ্যবিত্তের অস্বস্তি

এমএস খান

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

টানা বৃষ্টিতে নতুন করে চালের দাম বাড়ছে। গত কয়েকদিনে মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে সবজির দাম। এখন বাজারে গিয়ে ক্রেতারা অল্প পরিমাণে সবজি নিত্যপণ্য কিনছেন। মাছ, মাংস ও তরিতরকারি কোনো সময় নিয়ন্ত্রিত আবার কখনো কখনো আকাশচুম্বী দামে নাগালের বাইরে চলে যায়। বাজার মনিটরিংয়ের জন্য সরকারি-বেসরকারি একাধিক সংস্থা কাজ করলেও জনগণ তার ফল খুব একটা ভোগ করতে পারে না। আসলে বাজারমূল্য বেচাবিক্রি কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, সাধারণ জনগণ সেটা বুঝে উঠতে পারে না। দাম বাড়লেই জনগণ বলে থাকেন সিন্ডিকেট করে এসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। সরকার টিসিবির মাধ্যমে সারাদেশে কতিপয় পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করলেও তবুও বাজারে জনগণের নাগালে নিত্যপণ্য পাওয়া কঠিন। ডাল, পেয়াঁজ, আদা-রসুন সবকিছুর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। হু হু করে চালের বাজার বেড়ে এখন মোটা চাল কেজি ৭০ টাকার মধ্যে এসে থেমেছে। এভাবে সব ধরনের নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি জনগণকে মহাঅর্থসংকটে ফেলছে। দুর্নীতি ও অর্থ, ডলার পাচারের মাধ্যমে দেশের জাতীয় অর্থনীতি তলানিতে। সরকারি ও বেসরকারি কতিপয় লোভি দুর্নীতিতবাজ লোক জনগণের অর্থ ও দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে। গণতান্ত্রিক দেশের জন্য এটি কোনো চরিত্র হতে পারে না। লুটপাট আর দুর্নীতির একটা সীমা থাকা চাই। সরকার যারা চালায় তারা বাস্তবে এই সব দুর্নীতিবাজদের কীভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে সেটিই জনগণের প্রশ্ন। সাংবিধানিক অধিকার জনগণের মৌলিক নাগরিক অধিকার কী সেই কথাও মনে হয় ক্ষমতাসীন দল ভুলে গেছে। উঁচু তলায় বিত্তশালী ব্যবসায়ী শিল্পপতি আমলা চাকরিজীবী যারা আছেন তাদের জন্য মূল্যবৃদ্ধি কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা শুধু নিম্নমধ্যবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের বেলায়। এসব মানুষের সংখ্যা ৮৫ ভাগ। তাদের কথা চিন্তার জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণ স্থিতিশীল রাখবার উদ্দেশ্যেই মন্ত্রণালয় রয়েছে। বাজার মনিটরিং কমিটি রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। তবুও কেন অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা জনগণের প্রশ্ন। মানুষের যখন আয় ইনকাম সীমিত, কেউ বেকারত্বের অভিশাপে জীবন পার করছে, এক বেলা খেয়ে এক বেলা না খেয়ে বন্যাকবলিত মানুষ যখন মানবেতর জীবনযাপন করছে তখন মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতি লাভের আশায় নিত্যপণ্য মূল্যের মূল্যবৃদ্ধির কুষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কালো হাত ভাংতে হবে। তেল সিন্ডিকেট চিনি সিন্ডিকেট চাল-পেঁয়াজ সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নজরদারিতে মাঠে থাকতে হবে। সহনীয় মূল্যের বাইরে যারা ব্যবসার নামে মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পকেট কর্তন করছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। বাজারে সাধারণ জনগণ অসহায়। পেটের অভাবে যে ধরনের মূল্য দোকানদার চায় তা দিয়েই গ্রাহককে পণ্য ক্রয় করতে হয়। বাজার দেখা যায়, পণ্যের মান যাইহোক না কেন সিন্ডিকেট করে একইভাবে সবাই একযোগে একই দামে পণ্য বিক্রি করছে। হঠাৎ করে ঈদের পর ডিম ও আলুর সিন্ডিকেট কারসাজিতে মধ্যবিত্ত পরিবারে সংকট তৈরি করেছে। অসহায়ভাবে গ্রাহককে পণ্য ক্রয় করতে হয়। সরকার মাঝেমধ্যে পণ্যের তালিকা দোকানে রাখার জন্য বললেও সেটায় তেমন একটা ফল ভুক্তভোগী জনগণ পায় না। জনগণকে খাদ্যে নিরাপত্তা এবং তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী সরবরাহে সরকারকে সর্বদা জনগণের পাশে থাকতে হবে।

বাজারে পাইকারি খুচরা মূল্য সব সময় তদারকির আওতায় রাখতে হবে। খাদ্যপণ্য বাজার নিয়ন্ত্রণ জনগণের নাগালের মধ্যে রাখা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। সে দায়িত্ব কোনো অবস্থায় দুর্বলভাবে ছেড়ে দেয়া যায় না। নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের সিংহভাগ মানুষের রুটি-রুজির অধিকার নিশ্চিত করা সাংবিধানিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রকে পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হবে। কারণ যারা ক্ষমতায় রয়েছে তারা জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। জনগণের সুবিধা-অসুবিধা খাদ্যের প্রয়োজনীয় পণ্য সঠিকভাবে সরবরাহ মূল্য নিয়ন্ত্রণ বাজারজাত সবকিছু রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কোনো অবস্থায় এসব দায়িত্বকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। জনগণের সুখ ও দুঃখের বিচার বিশ্লেষণ সর্বদা রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে করতে হবে। এসব বিষয়ে অবহেলা দুর্বলতা প্রকাশ পেলে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই উঁচু থেকে নিচু, ছোট থেকে বড়, ধনী থেকে গরিব সব শ্রেণিপেশার মানুষ যেন আত্মমর্যাদার সঙ্গে জীবনজীবিকা নির্বাহ করতে পারে সেটায় সরকারের দায়িত্ব হওয়া উচিত। সামাজিক বৈষম্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সব ধরনের নিত্যপণ্য সরবরাহ ও প্রাপ্তিমূল্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শুধু ক্ষমতাকে ধরে রাখার মানসিকতার চিন্তা থেকে সরে থাকা দরকার। সরকারকে এসব বিষয় মাথায় রেখে মানুষের রুটি-রুজির নিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে আসা জনপ্রত্যাশা।