ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিভাবকদের সতর্ক থাকার তাগিদ

অনলাইন জুয়া বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিন
অভিভাবকদের সতর্ক থাকার তাগিদ

ইন্টারনেট মানুষকে যেমন করেছে আধুনিক এবং সামাজিক, ঠিক তেমনি আবার সামাজিক অবক্ষয়ের সুযোগও বাড়িয়েছে। ইন্টারনেট জগতে অনলাইন জুয়ার অ্যাপসের সহজলভ্যতা রয়েছে। যে কেউ চাইলেই সহজে সফটওয়্যার ব্যবহার করে ঘরে বসেই অনলাইনে জুয়া খেলতে পারেন। লোভের ফাঁদে ফেলার জন্য অনলাইন জুয়ায় সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে তারকাদের ভুয়া ভিডিও দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে; যা মানুষকে আকৃষ্ট করছে। কেউ চাইলেই খুব সহজে এজেন্ট কিংবা যে কোনো আর্থিক মাধ্যমে নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা রিচার্জ করতে পারেন।

অ্যাপগুলো এমনভাবে সাজানো থাকে, যার ফলে শুরুতে লাভ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে অধিক লাভের আশায় মানুষ আরো টাকা বিনিয়োগ করে। কিন্তু সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার সংখ্যাটাই বেশি।

সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গণমাধ্যমকে জানান, দেশের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছে, যা উদ্বেগজনক। অনলাইনের অবৈধ জুয়া ও বেটিং সাইট বন্ধ করতে সরকার জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।

রিউমর স্ক্যানারের হেড অব অপারেশন সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত ৪১টি ভুয়া ভিডিও শনাক্ত করা হয়েছে। তারা জুয়ার বিজ্ঞাপনের এসব ভিডিওতে মূল ফুটেজের অডিওর স্থলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় কণ্ঠ নকল করে ভুয়া অডিও যুক্ত করে। তথ্য বলছে, জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা পেজগুলোর বেশিরভাগই পরিচালিত হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। বিটিআরসির তথ্য মতে, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১২ হাজার ৩টি অনলাইন বেটিং সাইট বন্ধ করেছে তারা। বিটিআরসির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে আমাদের নিজস্ব কোনো মনিটরিং সেল নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন এজেন্সি কিংবা প্রতিষ্ঠানের তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়।

অনলাইন জুয়ার আসক্তি প্রবল ও ক্ষতিকারক। আরেকটা হতাশার বিষয় হচ্ছে, অ্যাকাউন্টে রিচার্জ করা টাকা অবৈধভাবে চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে; যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জুয়া অ্যাপগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে, যেন জড়িতরা নাম পরিবর্তন করে নতুনভাবে আবার কার্যক্রম চালাতে না পারে। সংশ্লিষ্টদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তদারকির বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোর লেনদেনগুলোর ওপরও নজর রাখা উচিত। সন্দেহজনক লেনদেন দেখলেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া আবশ্যক। তবে শেষ পর্যন্ত জনগণকে সচেতন হতে হবে। তারকাদের ভিডিও দেখলেই সব কিছু বিশ্বাস করা যাবে না। অনলাইন জুয়ার ফাঁদের বিষয়ে সামাজিকভাবে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে অভিভাবকদের এ বিষয়ে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। যাতে করে কোনোভাবেই পরিবারের কেউ এসবে আসক্ত হয়ে না পড়ে। একই সঙ্গে জাগাতে হবে নিজেদের বিবেকবোধকে। তা হলেই অনলাইন জুয়ার ফাঁদগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সংশ্লিষ্টরা দেশের ক্ষতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত