কীটনাশক বিষক্রিয়া প্রতিরোধের উপায়

আফতাব চৌধুরী, সাংবাদিক-কলামিস্ট

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

কীটনাশক বহুল ব্যবহৃত একটি রাসায়নিক সামগ্রী। এর ব্যবহার শস্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ঠিক, তবে এর অপব্যবহারে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক বিষে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। নিরাপদভাবে কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক মৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব যারা খেতখামার, শস্যবাগান কিংবা দোকান, গোদাম প্রভৃতি স্থানে কীটনাশক ব্যবহার করেন কিংবা গোদামজাত করেন, সর্বোপরি সবারই নিরাপদে কীটনাশক প্রয়োগ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন এ কীটনাশক সবসময় একই পাত্রে রাখা উচিত। এক পাত্র থেকে অন্যপাত্রে কীটনাশক স্থানান্তর বিপজ্জনক। খাবার কিংবা পানীয় মনে করে ভুলবশত কেউ কীটনাশক খেয়ে ফেলতে পারে। নিরাপদভাবে কীটনশক সংরক্ষণ করতে হবে। বেশি পরিমাণে কীটনাশক জমা করে রাখতে চাইলে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক। বিপজ্জনক সংকেত দিয়ে এলাকা চিহ্নিত করতে হবে, দরজা তালা বন্ধ রাখতে হবে, জানালার গ্রিল থাকতে হবে, অননুমোদিত কাউকে বিশেষ করে শিশুকে এসব স্থানে যাওয়ার অনুমতি দেয়া ঠিক হবে না। গোদামে যা সংরক্ষিত আছে তার একটি তালিকা সবসময় হাতের কাছে রাখা বাঞ্ছনীয়। এ তালিকা গোদামে না রেখে সবসময় নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে যাতে প্রয়োজনে বিশেষ করে আগুনজনিত দুর্ঘটনায় তা পাওয়া যায়। গোদামের মধ্যে রাসায়নিক সামগ্রী ব্যবহারের নিরাপদ তথ্য ও জরুরি যোগাযোগ মাধ্যম ও ফোন নম্বর রাখা উচিত। কীটনাশক মেশানো ইঁদুরের খাবার শস্য খাবার থেকে আলাদা রাখতে হবে। কৃষি কাজের কীটনাশক খাবার ঘর থেকে আলাদা জায়গায় নিরাপদ স্থানে রাখা উচিত। বসতবাড়িতে শুধু ঘরে ব্যবহারের জন্য কীটনাশক রাখা যায়। খাবার রাখার পাত্রে কখনও কীটনাশক রাখা ঠিক হবে না। কীটনাশক বা যন্ত্র ব্যবহারে পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণসহ সব ধরনের নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যের মতো কীটনাশক পাত্রের লেবেলে সামগ্রীটি কি, প্রস্তুতকারক কীভাবে নিরপাদ ও কার্যকরভাবে ব্যবহার করবেন তা লেখা থাকা প্রয়োজন। এছাড়া বিপজ্জনক দিক, নিরাপত্তা বিধান ও প্রাথমিক চিকিৎসাব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য কর্মীর জন্য উপদেশ উল্লেখ্য। পাত্র ছোট হলে ভেতরে বাক্সে লিফলেট আকারে এসব তথ্য থাকবে। এছাড়া সামগ্রীটির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য ও কেমিক্যাল নিরাপত্তা তথ্য শিট থাকার নিয়ম আছে। ব্যবাহরের আগে লেবেল পড়ে ও অন্যান্য যে তথ্য আছে তা বুঝতে না পারলে ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি বা সরবরাহকারী যিনি এ ব্যাপারে অবগত তার কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। না বুঝে কোনো অবস্থাতেই কেমিক্যাল ব্যবহার করা ঠিক নয়। পাত্রের গায়ে মোড়ক না থাকলে মোড়কসহ পাত্র সরবরাহকারীকে বলতে হবে। যেসব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন তা হল কৌটার ভেতর কি আছে, কতটুকু ও কীভাবে মিশিয়ে ব্যবহার করা হবে। নিরাপদভাবে ব্যবহারে পদ্ধতি, যন্ত্রপাতি ও পোশাক, সম্ভব্য কী কী অসুবিধা হতে পারে ও এর প্রাথমিক পরিচিতিগুলো কখন কীভাবে কীটনাশক ব্যবহা করা যায় ইত্যাদি।

কীটনাশক স্প্রে করার আগে প্রতিবেশীকে অবহিত করা উচিত। ব্যবহারের যন্ত্র কার্যপযোগী কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কীটনাশক মিশানো, ব্যবহার, যন্ত্র পরিষ্কার বা খালি করার সময় শরীর ঢেকে রেখে হালকা কাপড় পরতে হবে। জুতা, গ্লাভস ও চশমা পরা উচিত। ব্যবহারের পরে কাপড় পরিবর্তন করা উচিত। মোড়কে নির্দেশিত ব্যবস্থা অনুসরণ না করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতিসহ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। নিরাপদ ব্যবস্থা যথাযথভাবে রক্ষিত আছে কি না তা দেখে নেবেন। প্রতিদিন যতটুকু কীটনাশক ব্যবহার করা প্রয়োজন সে পরিমাণই তৈরি করা উচিত, যাতে অব্যবহৃত অংশে রাখা কিংবা বর্জ্য করতে না হয়। ধোয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সাবান ও পানি হাতের কাছে রাখা উচিত। গ্লাভস খোলার আগে ভাল করে ধুয়ে নেয়া উচিত। কীটনাশক ব্যবহারের পর ভালোভাবে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। মারাত্মক কীটনাশক ব্যবহার কিংবা মেশানোর সময় একা না থেকে কাউকে সঙ্গে রাখা উচিত। কীটনাশক ব্যবহারের সময় চোখ জ্বালাপোড়া, চুলকানি, ঘাম বেশি হওয়া, মাথাব্যথা, তৃষ্ণা কিংবা অন্য কোনো উপসর্গ হলে সঙ্গে সঙ্গে কাজ বন্ধ করতে হবে। ঊর্ধ্বতন কাউকে বলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। সঙ্গে সামগ্রীর বিস্তারিত তথ্য নিয়ে যাওয়া উচিত। যেসব শস্য ও খাদ্যে কীটনাশক প্রয়োগ করা হবে তা কখন খাওয়া যাবে তা জেনে নেয়া ভালো। নিরাপদ ব্যবস্থার জন্য ছেঁড়া কাপড়, জুতা, গ্লাভস, নষ্ট ও বিপজ্জনক যন্ত্র ব্যবহার করা উচিত নয়। পাত্র থেকে পাউডার কীটনাশক ছড়ানোর জন্য কিংবা মেশানোর জন্য কোনো অবস্থাতেই খালি হাত ব্যবহার করা উচিত নয়। কীটনাশক পরিমাপ ও মেশানোর পাত্র অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। ঘরে কিংবা এর কাছে কোনো প্রাণী রাখার ঘরে কীটনাশক পরিমাপ করা ও মেশানো যাবে না। স্প্রে করার যন্ত্রের নজেল ফু দিয়ে কিংবা মুখ দিয়ে পরিষ্কার না করাই ভালো। বরং পানি ও ঘাসের শলাকা দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। বাতাস জোরে বাইতে থাকার সময় কীটনাশক ছিটাল প্রয়োগকারীর শরীরে আশপাশের বাড়িতে ও অন্যান্য প্রাণীর বা জীব-জন্তুর উপর উড়ে আসতে পারে। গোদামের বাইরে আনা কীটনাশক সবসময় চোখের সামনে রাখতে হবে। কীটনাশক প্রয়োগের সময় কেউ সঙ্গে যাওয়া বা থাকা উচিত নয়। কীটনাশক মেশানোর স্থানে বা যন্ত্রেও কাছে শিশুদের রাখা উচিত নয়। শিশুকে কীটনাশক প্রয়োগ করতে দেয়া অবাঞ্ছনীয়। খালি পাত্র ও পড়ে থাকা কীটনাশক নিরাপদে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে কৃষি উপদেষ্টার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। বেশিরভাগ অব্যবহৃত কীটনাশক মাটির তলায় পুতে ফেলা যায়; কিন্তু রাসায়নিক সামগ্রীর জন্য এটা ভালো উপায় নয়। এমনকি কোনো এলাকায় মাটিতে পুঁতে ফেলার জন্য অনুমোদন নাও থাকতে পারে। অন্যেরও পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, এমনভাবে কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত ও অপ্রয়োজনীয় কীটনাশক ফেলে দেওয়া উচিত। দৈনন্দিন অব্যবহৃত পদার্থের পাত্রে অব্যবহৃত কীটনাশক ফেলা উচিত নয়। স্প্রেয়ারে নেওয়া সব কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত। সম্ভব না হলে স্প্রে ট্যাঙ্ক থেক কীটনাশক ঢেলে ফেলে অল্প করে মাটির নিচে পুঁতে ফেলা যায়। মাটির নিচে রাখার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পানি, শস্য, কুয়া ও বসবাসের কাছাকাছি না হয়। কতটুকু কীটনাশক একসঙ্গে পুঁতে ফেলা যাবে, তার জন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেয়া উচিত। ব্যবহারের পর সব যন্ত্র ধুয়ে স্টোরে রাখতে হবে। কীটনাশক ব্যবহার শেষে ভালোভাবে গোসল করে পরিষ্কার কাপড় পরতে হবে। কীটনাশক ব্যবহৃত কাপড় আলাদাভাবে ধুতে হবে। এসব কাপড় বাড়িতে পরা যাবে না কিংবা জমা রাখা যাবে না। অব্যবহৃত কীটনাশক বসবাসের জায়গায় না রেখে স্টোরে রাখা উচিত।

পাত্র সম্পূর্ণ কীটনাশকমুক্ত করা সম্ভব নয় বলে ব্যবহৃত খালি পাত্র ব্যবহার করা উচিত নয়। প্লাস্টিকের পাত্র ভালোভাবে ধুয়ে ব্যবহার করা উচিত। বেশিরভাগ কীটনাশক ত্বকের সংস্পর্শে আসলে, নিঃশ্বাসের সঙ্গে নিলে ও খেয়ে ফেললে বিষক্রিয়া হতে পারে। কীটনাশক যথাযথভাবে ব্যবহার না করলে, ব্যবহারের সময় প্রথাযথভাবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে, ব্যবহারের পর যথাযাথভাবে কাপড়-চোপড়সহ শরীর পরিষ্কার না করলে, পানীয় পান করলে বিষক্রিয়া হতে পারে। তাই এ থেকে সতর্ক থাকা জরুরি।

বৃক্ষরোপণে জাতীয় (স্বর্ণপদক ১ম) পুরস্কার প্রাপ্ত।