পাঠকের কথা
কদম ফুল
ফারজানা ইসলাম বীথি
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মাঝরাতে খোলা জানালা দিয়ে ঘরে আসা ঝিরঝিরে বাতাসে আপনার ঘুম ভেঙে গেল। মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আপনাকে বিমোহিত করে তুলল। তারই খোঁজে জানালার ফাঁক গলে বাইরে তাকাতেই দেখতে পেলেন ঝকঝকে এক আকাশ। চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ছে চারপাশে। সেই আলোতে স্পষ্ট দেখা যায় সবুজ পাতার মাঝে মাঝে ফুটে আছে কদম ফুল। জোৎস্নালোকে সেগুলোকে ঠিক কদম বলে মনে হয় না, মনে হয় আকাশে গুচ্ছ গুচ্ছ তারা ফুটে আছে। ব্যাকুল হয়ে আছে এ গ্রহের মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য। বর্ষার দিনগুলোতে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। বৃষ্টিমুখর দিনে কদম গাছগুলো ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে পথের ধারে। গাছে ডালে ডালে ফুটে সাদা সাদা ফুল। সৌন্দর্যের সঙ্গে মিষ্টি গন্ধও ছড়ায়। বিমুগ্ধ করে পথচারীদের। আষাঢ় পেরিয়ে চলছে শ্রাবণ মাস। আকাশে কখনো কালো মেঘের ঘনঘটা, কখনো আবার রৌদ্রজ্জ্বল দিন, কখনো হঠাৎ করেই আকাশের বাঁধ ভেঙে যায়। একবার শুরু হলে যেন থামতেই চায় না। কর্দমাক্ত শ্রাবণের দিনে পাড়ার দস্যি ছেলেরা গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুল নিয়ে ছুটোছুটি করে, কদমের পাপড়ি ছড়ায়, কদম ফুলকে বল বানিয়ে ছুড়ে মারে। শহরের পথে পথে ফুল বিক্রি করা ছেলেদেরও রোজগারের নতুন উপায় যুক্ত হয়। বাংলার বর্ষা আর কদম এ দুটোর রোমান্টিক বর্ণনা ফুটিয়ে তুলেছেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি লিখেছেন, ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান...।’ আবহমান বাংলার কবি জসীমউদ্দীন লিখেছেন, ‘কাহার ঝিয়ারী কদম্ব-শাখে নিঝ্ঝুম নিরালায়, ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে অসস্ফুট কলিকায়! বাদলের জলে নাহিয়া সে মেয়ে হেসে কুটি কুটি হয়, সে হাসি তাহার অধর নিঙাড়ি লুটাইছে বনময়।’ গীতিকার সোমেশ্বর অলি লিখেছেন, ‘ওহে বন্ধু ওগো সুপ্রিয়, বাদল দিনের দ্বিতীয় কদম ফুল বুঝে নিও’। ছাড়াও কালে কালে অনেকেই তাদের গান-কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন কদমের রূপ। কদম ফুলের ভেতরে সবুজাভ ছোট আকারের বলের মতো মাংসল পুষ্পাধার রয়েছে। তার উপরে হলুদ বর্ণের পাপড়িতে ঢাকা। ফানেলাকৃতির হলুদ পাপড়িগুলোর মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে সাদা রঙের চিকন পাপড়ি। সাদা আর হলুদে মিলে তাই অদ্ভুত এক সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। কদম গাছ বাংলার প্রাণ-প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও মানুষের নিতান্ত গুরুত্বহীন গাছ হিসেবেই তার পুরো জীবন সে ফুল ফুটিয়ে যায়। সারাজীবন ফুল ফুটিয়ে গেলেও একদিন সে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ফুল-পাতা পড়ে জায়গা ময়লা করার অজুহাতে তার গোড়ায় কুড়ালের ঘা বসে। সেখানেই জীবনের ইতি টানতে হয় তার।
শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।