অনিয়ন্ত্রিত বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে কে?

আজহার মাহমুদ, লেখক কলামিস্ট

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বেঁচে থাকার জন্য মানুষের খাবার অত্যন্ত জরুরি। এই খাবারের জন্যই আমাদের এতো শ্রম, এতো সবকিছু। অথচ সেই খাবারটুকুই এখন আমাদের অনেক কষ্টে খেতে হয়। বাজারে গেলে যে কোনো সাধারণ মানুষের কপাল দিয়ে ঘাম ছুটে, চিন্তার ভাঁজ পড়ে। ভোগ্যপণ্যের দাম যেন রেলের চাকার মতো ছুটছে। আর থামার কোনো লক্ষণ নেই। সবকিছুর দাম এখন আকাশচুম্বি।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে, আমরা এতোকিছু নিয়ে কথা বলি, আন্দোলন করি অথচ এই একটা বিষয় নিয়ে কারো কোনো আওয়াজ নেই। বর্তমানে কোটা নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, ছাগলকাণ্ড নিয়ে বেশ হইচই হচ্ছে। নানা দুর্নীতির আলাপ হচ্ছে, অথচ একটা সিন্ডিকেট নিয়মিত আমাদের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে তুলছে। তার কোনো খবর আমাদের নেই। সেটা নিয়ে কোনো প্রতিবাদ, আন্দোলন আমাদের নেই। বাজারে অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে নিয়মিত। কেজি প্রতি ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকাও দাম বেড়ে যায় হঠাৎ করে। কিছু কিছু পণ্যের দাম তো দিগুণেরও বেশি। সাধারণ মানুষ যখন কম দামে একটু ভালো খেতে চায় তখন তারা ডিমকে প্রাধান্য দেয়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ পরিবারেই ডিম অন্যতম একটি খাবার। নিম্ন আয়ের মানুষরাও ভালো তরকারি বলতে ডিমকে বুঝায়। সেই ডিম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। নিয়মিত ডিম খাওয়া এখন কঠিন নয় শুধু, অসম্ভভও প্রায়। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। আর মাংস? প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দরে। সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। গরুর মাংসের কেজি কোথাও ৭৫০ কোথাও ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

আপনি যদি মনে করেন এসব মাংস আর ডিম আপনার জন্য না, আপনি খাবেনও না। শুধু সবজি দিয়ে মন ভরে ভাত খাবেন? সেটাও পারবেন না। বাজারে সবজির দামও ভয়ংকর। কাকরোলের কেজি ৮০ থেকে ১০০, পটল ও ঢ্যাঁড়স ৬০ থেকে ৭০, ধুন্দল ও চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০, কাঁচা পেপে ৫০ থেকে ৬০, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। গাজরের কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ও টমেটো ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কি ভাবছেন? আলু দিয়েই পার করে দিবেন? সেটাও আপনার জন্য কঠিন, বাজারে আলুর দাম উঠেছে ৬৫ টাকা প্রতিকেজি, যা গত সপ্তাহের চেয়ে ৫ টাকা বেশি। এই আলুর দামও কত উঠে সেটা দেখার বিষয়।

সবজি হোক আর মাংস ডিম হোক, আমাদের বাঙালিদের রান্নার সাথে পেঁয়াজ-মরিচ লাগবে নিশ্চিত। সবজি কোনো রকমে কেনা গেলেও পেঁয়াজ-মরিচ কেনা আরো কঠিন। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা দরে। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে।

দ্রব্যমূল্যের দাম এমনভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় চিন্তত আপনি? টেনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন? ডাক্তার যদি ফল খেতে বলে ভুলেও ফলের দোকানে যাওয়া যাবে না। ফলের দাম আরো চড়া। যখন তখন স্ট্রোকও করতে পারেন। ফলের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ১০০ টাকা। বাজারে বর্তমানে সবচেয়ে কমদামি বিদেশি ফল মাল্টা, যা কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কমলা ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, আপেল ৩০০ থেকে ৩৪০, নাসপাতি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ডালিম বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এছাড়া লাল অঙুরের কেজি ৬০০ থেকে ৬৬০ টাকা। প্রতি কেজি ড্রাগন ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমের মৌসুম হলেও প্রতি কেজি আম ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনতে হবে।

অতিরিক্ত মজুদের মাধ্যমে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি, যানজট ও অতিরিক্ত পরিবহণ ব্যয়, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর উচ্চ সুদের হার, ঋণপ্রাপ্তিতে জটিলতাসহ নানা কারণ বিশেষজ্ঞরা প্রায়-সময় তুলে ধরেন। এসব কারণ নিয়ে টকশো-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই, কাজের কাজ ওই সিন্ডিকেটই করে যাচ্ছে।

কিন্তু এভাবে আর কত? এই অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতেই হবে। এই আওয়াজ হতে হবে সম্মিলিত আওয়াজ। এটা কোনো দলের জন্য নয়, এটা দেশের মানুষের জন্য। আসুন-না এসব রাজনীতি বাদ দিয়ে একটু মানুষের কথা ভাবি। পেটে ভাত না পড়লে তো রাস্তায়ও নামতে পারবেন না। তাই নড়বড়ে ইস্যু নিয়ে রাজপথ গরম না করে ভোগ্য পণ্যের দাম কমানোর জন্য সবাই সোচ্চার হই, আন্দোলন করি। আগে মানুষ, তারপর রাজনীতি। মানুষের জন্য কিছু করুন, তবে মানুষ আপনাদের জন্য কিছু করবে। সরকারের কাছে অনুরোধ দয়া করে বাজারের এই অস্থিরতা বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। দেশের মানুষের সমস্যাকে গুরুত্ব দেওয়া সরকারের প্রথম এবং প্রধান কাজ। আশাকরি সরকার এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনবে।