১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস

একুশই কি মানব সভ্যতার শেষ শতাব্দী

আফতাব চৌধুরী, লেখক : কলামিস্ট

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সারা দেশে আজ অরাজকতা বিরাজ করছে। বৈষম্য, নিরাপত্তাহীনতা, কর্মসংস্থানের অভাব, দারিদ্র্য, অবাধে বন ধ্বংস, আবহাওয়া দূষণে মারাত্মক আকার ধারণ করছে, মানবতা ও সহমর্মিতাও আজ বিপন্ন। হুমকির মুখে পারস্পরিক সহমর্মিতা। ভ্রষ্টাচার, লুণ্ঠন, অপহরণ, হত্যা, ধর্ষণ, পাশবিক অত্যাচার ও হিংসার বাতাবরণ আজ বহু মাথাবিশিষ্ট বিকটাকার দৈত্য হিসেবে অবতীর্ণ। দেশের প্রতিটি শান্তি প্রিয় নাগরিক আজ অসহায় ও বিপন্ন। এসব অনভিপ্রেত সমস্যার উৎস কোথায়? সমাজসেবী সংস্থা তার প্রকৃত উৎস সন্ধানে না গিয়ে রোগের লক্ষণ দেখে চিকিৎসায় ব্যস্ত, যাকে সিমটোমেটিক ট্রিটমেন্ট বলা যায়। কিন্তু এরূপ চিকিৎসায় রোগকে চিরতরে বিদায় দেওয়া যায় না। তাই সব রোগের শেকড়ের বা উৎসের সন্ধান প্রয়োজন। এই ব্যাধির মূল উৎস লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বায়নের প্রভাব ও বিজ্ঞানের অগ্রগতিপ্রসূত ভোগের লালসা। এই মণিকাঞ্চনের সহাবস্থানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের আজ এই বিষাদময় চিত্র। অনেকেই হয়তো বাংলাদেশকে উন্নয়ন দেশ বলতে কুণ্ঠাবোধ করেন। সরকারি ভাষায় এবং যারা মাখনের পরতে জীবনকে উপভোগ করছেন, তাদের কাছে বাংলাদেশ ‘উন্নতিশীল দেশ’ অভিধায় অভিহিত। যে দেশে শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষের কাছে অন্নচিন্তা প্রকট আর শুধু ২০ শতাংশ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে জীবনযাপন করছেন, সে দেশকে উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অখ্যায়িত করতে সমাজ সচেতন মানুষের দ্বিধা আছে। প্রথমেই লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও তার জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। উপমহাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় অবিভক্ত ভারতের জনসংখ্যা ছিল ৩৩ কোটি। বর্তমানে অর্থাৎ স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর সাবেক ভারত ত্রিখণ্ডিত। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নামে তিনটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র। এক বেসরকারি সংস্থার জরিপে জানা যায় ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ভারতের জনসংখ্যা হবে প্রায় ১২১ কোটি, বাংলাদেশের ১৭ কোটি আর পাকিস্তানে ২১ কোটি। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের অনুন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এশিয়ার চীন ও ভারতের জনসংখ্যা বিশ্বের মধ্যে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ ভারত চীনকে ছাড়িয়ে যাবে। কারণ, বর্তমানে চীনের চেয়ে ভারতে জন্মের হার বেশি ও অনিয়ন্ত্রিত। লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশবিদরা চিন্তিত। আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্মলগ্নে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে এক বড়রকমের সমস্যা হিসেবে গণ্য করা হতো না, যদিও পাশ্চাত্যের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ মালথাস জনসংখ্যার হার নিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন; কিন্তু এসবকে চিন্তাবিদ বা সমাজবিজ্ঞানীরা খুব একটা গুরুত্ব দেননি। সরকারি তরফেও তা বস্তুত গুরুত্বহীন ছিল। ৪৯ বছর আগে দেশের প্রতিটি গ্রামে প্রতি পরিবারের ১ বিঘা থেকে ৫ বিঘার মধ্যে বসতবাড়ি ছিল, সঙ্গে পুকুর ও সব্জি খেতের জায়গা। কৃষিযোগ্য ভূমিও প্রতি পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত ছিল। মাঠে গরু-মহিষ ইত্যাদি গৃহপালিত পশুর জন্য গোচারণভূমি ছিল। এছাড়া খাসজমিতে জলাভূমি, ছোট ছোট বিল, নালা ছিল। এতে প্রচুর মাছ হেমন্তেও পাওয়া যেত। কৃষিজমিতে যে ফসল উৎপাদন হতো এতে সারা বছরের খাদ্যশস্য ঘরে মজুত থাকত। বাড়তি ধান বা অন্য খাদ্যশস্য বাজারে বিক্রি করা হতো। এমনকী গরিব চাষিদেরও বাজার থেকে ধান-চাল কেনার প্রয়োজন হতো না। বেশিরভাগ পরিবার শাকসবজি ক্রয় করতে হাটে যেত না। বস্ত্র, অলঙ্কার, প্রসাধন সামগ্রীর চাহিদাও সীমিত ছিল। ফলে আর্থিক লেনদেন অত্যন্ত সীমিত ছিল। দূরবর্তী স্থানে যাতায়াতের জন্য রেলগাড়িতে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ প্রয়োজনে যাতায়াত করতেন। ৪-৫ মাইল দূরত্বে যেতে হলে পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করা স্বাভাবিক ছিল। এমনকী স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীও অনায়াসে রোজ ৪-৫ মাইল পায়ে হেঁটে পড়াশোনা করতে শঙ্কাবোধ করত না। আমরাও করিনি।

শহরের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে আমরা ছোটবেলা ঢাকা, চট্টগ্রামকে শহর হিসেবে জানতাম। রাজশাহী, বরিশাল, কুমিল্লা, খুলনা, সিলেটকে আমরা জেলা সদর বা ছোট শহর হিসেবে জানতাম। থানা হেড কোয়ার্টার্স তখনও শহরের মর্যাদা পায়নি। এই শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ছিল রাজধানী। এসব শহরের নাগরিকদের স্থানীয় বাড়িই বেশি ছিল। বেশিরভাগ আবাশগৃহই টিনের ছাউনির, এমনকী ছন-বাঁশের গৃহও ছিল। প্রায় বাড়িতেই পুকুর ছিল। বাড়িতে গাছগাছড়া যেমন নারকেল, সুপারি ও অন্যান্য গাছপালাসহ ফুলের বাগান থাকত। শহরে যানজট মোটেই ছিল না। এ হলো ৫২ বছর আগের চিত্র।

বর্তমানে আমরা কী দেখতে পাই, প্রথমেই গ্রামাঞ্চলের কথায় আসি। চার দশক আগে যে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল ৫ থেকে ১০ জন সেই পরিবার ভেঙে এখন ন্যূনতম ১০ পরিবার হয়েছে এবং সব পরিবার মিলে জনসংখ্যা ৫০-এর অধিক। বাধ্য হয়ে ১০ পরিবারের আবাসগৃহের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে কৃষিজমি ভরাট করে বাসস্থান তৈরির প্রয়োজন হয়েছে। এতে কৃষিভূমি সংকুচিত হচ্ছে অথচ খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। যেসব খাসভূমি গোচারণের জন্য ছিল, তাও জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির সময় অর্থের বিনিময়ে ব্যক্তিগত মালিকানায় পাট্টা দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেক কৃষিজীবী মানুষ গো ও মহিষ পালন বাদ দিয়েছেন। তাই দুধের ঘাটতি ঘটে। আবার অনেক কৃষিভূমি ও অনুর্বর জমিতে নতুন নতুন ইটভাটা, ছোট ও মাঝারি ফ্যাক্টরি, কারখানা গড়ে উঠেছে এবং আরও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার কাজ চলছে। প্রতিটি একান্নবর্তী পরিবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। কৃষিভূমিতে বাসস্থান ও কলকারখানা নির্মাণে খাদ্যশস্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবার পিতৃপুরুষের ভূমিতে বাসস্থানের অভাব ও কৃষিভূমি সংকুচিত হওয়ার ফলে নতুন ঠাঁইর সন্ধানে সরকারি খাসভূমি ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বন কেটে বসত করতে শুরু করেছে। অতীতের অনেক সচ্ছল কৃষক পরিবারের উত্তরসূরিরা এখন ভূমিহীন, কর্মহীন হয়ে দিনমজুরি, রিকশা বা ঠেলা চালিয়ে বাঁচার সংগ্রামে অবতীর্ণ। অনেক বেকার যুবক আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নৈশপ্রহরী বা কঠোর পরিশ্রম করে স্বল্প অর্থোপার্জন করছে। আবার, অনেক যুবক পেটের দায়ে অমানুষিক পরিশ্রম করে দিনাতিপাত করছে। সেসব বেকার যুবক কোনোভাবেই কাজের সুযোগ পাচ্ছে না, তারা হতাশাগ্রস্ত এবং অনেকে অপরাধ জগতে প্রবেশ করতেও দ্বিধাবোধ করছে না। যুব প্রজন্মের অনেকে আবার নেশাসক্ত হয়েছে। ফলে সমাজজীবনে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। এদিকে, গ্রামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শাহরের জনসংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য শুধু জন্মহার বৃদ্ধিই একমাত্র কারণ নয়। গ্রাম থেকে অনেক সচ্ছল পরিবার গ্রামের ভিটেমাটি বিক্রি করে বসবাসের জন্য শহরে চলে আসছে। যেহেতু, গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত নয়, তাই শহরে আসার প্রবণতা বাড়ছে। ফলে আমাদের শহরগুলোয় শ্বাস ফেলবার মতো ফাঁকা জায়গা প্রায় নেইই। পুকুর ভরাট করে দালানবাড়ি তৈরি হচ্ছে। আশপাশের গ্রামকেও শহরের আওতায় আনা হচ্ছে, তবু স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যানবাহন যত বাড়ছে তার জন্য শহরে পার্কিংয়ের জায়গারও অভাব দেখা দিয়েছে। অসংখ্য যানবাহন থেকে নির্গত গ্যাসে বায়ুদূষণ ঘটছে। সড়কদুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, রোগ ব্যাধিও বাড়ছে। সবকিছুর জন্য দায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধি। উল্লেখ্য, শহরে বসবাসকারী শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এতে সরকারের বিশেষ অবদান নেই। মধ্যবিত্তদের পরিবার সীমিত হওয়ার কারণ হলো- আজকাল মধ্যবিত্ত পরিবারের বিবাহযোগ্য যুবক-যুবতী স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করতে অনাগ্রহী। তাই অনেকেই বিলম্বে বিয়ে করে। অনেকে আবার বিয়ে করতেও আগ্রহী নয়। অধিক বয়সে বিয়ে করার ফলে শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রী দুই সন্তানের বেশি সন্তান জন্ম দিতে আগ্রহী নন। কারণ, ছেলেমেয়েকে যত্ন সহকারে লালন-পালন ও ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনো করাতে হলে সংসার সীমিত থাকা বাঞ্ছনীয়। তাই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মের হার দৃষ্টান্তমূলকভাবে হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এরূপ সচেতন পরিবারের সংখ্যা সীমিত। এদিকে গ্রামাঞ্চলেও শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রবণতা সীমিত হলেও সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে নিম্ন ও অতিনিম্ন বা অতি সাধারণ মানুষ যেমন দিনমজুর, রিকশাচালক ইত্যাদি পরিবারে লাগামহীনভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে। এখনই বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ যদি লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে আগ্রহী না হন, তাহলে একবিংশ শতাব্দীই বিশ্ব মানবসভ্যতার শেষ শতাব্দী হিসেবে চিহ্নিত হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানবতা, সহমর্মিতা লুপ্ত হতে চলেছে। বেঁচে থাকার প্রতিযোগিতায় একে- অন্যকে খুন করতেও মানুষ দ্বিধাবোধ করছে না। হিংসা, পরশ্রীকাতরতা বাড়ছে। বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা, স্বার্থপরতা। এসব সংকটকে আরো সুদৃঢ় করতে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও বিশ্বায়নের অবদানও যথেষ্ট। আধুনিক বিজ্ঞানের দৌলতে হাতের মুঠোয় এসেছে ফোন, ল্যাপটপ, মুঠোফোনের ক্যামেরা, টুইটার, ব্লগ, রঙিন টিভি আরো কত কী। টিভি ও ভিডিও পার্লারে এমনকী ইন্টারনেটের মাধ্যমে যৌন উদ্দীপক ছবি কিশোর মনে যৌন আশংকা উদ্দীপিত করছে। ফলে একদিকে অপসংস্কৃতি দেশের সাধারণ মানুষের বিশেষ করে যুবক-যুবতীদের বিপথে পরিচালিত করছে অন্য দিকে যৌন কেলেঙ্কারি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেসঙ্গে বাজারে ভোগ্যপন্যের ছড়াছড়ি। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো- সে সবরকমের ভোগ্যবস্তু পেতে চায়। আর তা পেতে দুর্নীতি, ভ্রষ্টাচার, পাপ পথে অর্থোপার্জনের দিকেও ধাবিত হয়। বড় বড় শহরে বাড়ি, গাড়ি ও সম্পদ আহরণে এক মরিয়া প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাণিজ্যের কথায় যদি আসি, তাহলে আমরা ভালোভাবে জানি, বাংলাদেশ গ্যাট চুক্তি ও ডব্লটিওতে স্বাক্ষরকারী দেশ। তাই বিদেশের ভোগ্যপণ্য এ দেশের বাজারে আমদানিতে সরকার খুব বাগড়া দিতে পারবে না। জন্মনিয়ন্ত্রণ বা জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে কড়া পদক্ষেপ বা কড়া আইন প্রণয়ন সম্ভব নয়। বিশ্বের সবচেয়ে অধিক জনসংখ্যাবহুল দেশ চীন যেভাবে কড়া হাতে জন্মনিয়ন্ত্রণে নীতি-নির্দেশিকা বলবৎ করেছে, তাতে কোনো দম্পত্তি এক সন্তানের অধিক সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না। এই কঠোর নীতি চালু করায় চীনের জনসংখ্যা বর্তমানে স্থিতাবস্থায় রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে তাদের বর্তমান জনসংখ্যাও হ্রাস পাবে। বিপরীতে, বাংলাদেশে অস্বাভাবিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আগেই উল্লেখ করেছি। চীনে যেভাবে জনসংখ্যা হ্রাসে কড়া দাওয়াই প্রয়োগ করা হয়েছে, আমাদের মতো গণতান্ত্রিক দেশের সরকারের পক্ষে তা সম্ভব নয়। এ দেশের সরকারের পক্ষে যা সম্ভব তা হলো, দেশে শিক্ষিতের হার বাড়ানোয় সচেষ্ট হওয়া এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যাবলী সুন্দরভাবে মোকাবিলা করা। এ বিষয়ে সমাজসচেতন নাগরিক, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও বোদ্ধাদের সদর্থক ভূমিকাও থাকতে হবে। দেশে শিক্ষিতের হার যত বাড়বে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তত হ্রাস পাবে। যে কোনোভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে স্থিতাবস্থায় আনতে হবে তারপর হ্রাস করার লক্ষ্যে সদর্থক পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, সমাজে ভ্রষ্টাচার, দুর্নীতি, অপরাধ ও নিরাপত্তাহীনতা আরো প্রকট হবে যা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। যার আভাস আমরা এখনই টের পাচ্ছি। ক্ষয়িষ্ণু প্রাকৃতিক ভারসাম্য আরো ভয়ংকর রূপধারণ করবে। সুতরাং এ বিষয়ে সব নাগরিককে সচেতন হয়ে নবপ্রজন্মকে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বাঁচতে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবাইকেই নিতে হবে।