ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তারুণ্যের দুর্দিনে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সাররা কোথায়?

রাজু আহমেদ
তারুণ্যের দুর্দিনে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সাররা কোথায়?

ন্যায়কে আলো আর অন্যায়কে কালো বলার জন্য আপনাকে যদি কারো সন্তুষ্টি-শ্লেষের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, তবে আপনি বিবেকবানদের কাতারভুক্ত কি-না সেটা নিজেকে প্রশ্ন করে আর জানা যাবে না। যে তরুণদের আবেগকে পুঁজি করে তারুণ্যের আইডল সেজেছেন তাদের ঘোর দুর্দিনে আপনি চুপ থাকবেন এবং এই রহস্যময় নিশ্চুপতার বিরুদ্ধে যারা বলবে, তাদের জঘণ্য ভাষায় বিরোধিতা করবেন- এরপরেও তারুণ্য কারো মোহমায়ায় থাকবে, এটা ভাববার কারণ নেই। সুদিনে অনেক কথাই সহজে সওয়া যায়; কিন্তু মন খারাপের দিনগুলোতে সামান্য খোঁচাও কলিজা পর্যন্ত লাগে!

সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে যদি হিসাবনিকাশ করতে হয়, ন্যায়ের পক্ষে বলতে কথা যদি দাঁড়িপাল্লায় মাপতে হয় তবে আপনার দ্বারা কল্যাণকর কিছু আশা করা অকল্যাণের। তরুণ সমাজের আইডল বেকারদের জন্য ইশারা ইঙ্গিতেও কিছু বলবে না- এই ক্ষোভ যদি রোগে পরিণত হয়, তবে তা জনপ্রিয়তাকেও সংক্রৃমিত করতে পারে। সময়ের আবর্তন ভুলে যাবেন না। কারো থেকে কেউ উপকার না পেলেও তাতে রাগ জাগে না। কিন্তু দুঃখের দিনের তাচ্ছিল্য সহ্য করা কঠিন। কালো মেঘ কেটে যাবে, তবে আঘাত থেকে যাবে অন্তরে। তরুণদের ভালোবাসা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। আপনারা পেয়েছিলেন; কিন্তু সেটার অপব্যবহার করলেন। যারা আকাশে তুলতে পারে তারা টেনেহিঁচড়ে ভূমিতেও নামাতে পারবে। কারো বিরোধিতা করার ব্যাপার নয়- আপনারা শুধু ন্যায়সঙ্গতভাবে বলতে পারতেন। তরুণরা যদি অযৌক্তিক এবং অহেতুক দাবি করে, তবে সেটাও বৌদ্ধিক যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলতে পারেন। এই ব্যাপারে কিছুই বলবেন না- এমন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে, যারা আপনাকে বলতে বলে তাদের থ্রেট দিয়ে এমনকি প্রিলি পাস করবে না, এমন অভিশাপ দিয়ে মন্তব্য করা আপনার জন্য কতোখানি সাজে তা বিবেকের কাছে জিজ্ঞেস করবেন। যখন বিবেক সুস্থ হবে। সব ব্যাপারে কেউ কোনোভাবে শতভাগ সঠিক থাকে না। শিক্ষার্থীদের দাবি অযৌক্তিক হতে পারে, সাংবাদিকের খোঁজখবর কোন হিডেন এজেন্ডা বাস্তবতায়নের জন্য কথা বলতে পারে কিংবা আপনিও সঠিক হতে পারেন! কোনো ব্যাপারে চুপ থাকার অধিকার নিশ্চয়ই আমাদের আছে; কিন্তু কেন বলব না, বলতে বললে কি হবে- এইসব ভুজুংভাজুং ঠিক নয়। সময়ের মূল্য সবার আছে। তরুণরাও নিশ্চয়ই সময়ের অপেক্ষায় থাকবে। যারা উপরে উঠতে মই ধরেছে, তারা মই সরিয়ে নেওয়ার ওজন বহন করতে জানে। দুঃসময়ে যারে পাওয়া যায় না, সুসময়ের বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা ও অধিকার তার নেই। কতিপয় সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের চরিত্র রহস্যে ঘেরা! তরুণদের জন্য, সমাজের জন্য কত কত কথা বলে! অথচ ন্যায়ের জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যখন বলা দরকার, তখন মুখে কুলুপ আঁটে আর বিবেক অন্যপথে হাঁটে! তারুণ্যের মাঝে আবেগ বিক্রি করে যারা কামাই করে, তরুণদের ওপর ভর করে যারা জনপ্রিয়তা পায়, তারাই তরুণদের দুর্দিনে কোথায়? এখন টুঁ-শব্দটিও করছে না। যে ব্যস্ততা এবং সময়ের দাম দেখালেন সেই সময় চিরকাল বিপক্ষের কোর্টে থাকবে? যেদিন সময় দিক পরিবর্তন করবে, সেদিন ঝড়-ঝঞ্ঝায় সব ওলোটপালোট করে দেবে। কেউ সত্য-সততার পক্ষে না বললেও সত্য দল পাল্টিয়ে মিথ্যার সঙ্গে বেসাতিতে জড়াবে না। ন্যায় কখনোই অন্যায্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে না। ইতিহাসের পাতায় পাতায় কত সত্য হেরে গেছে, তবে হারিয়ে যায়নি। সত্য দিবালোকের মতো স্পষ্ট। আলোর নিজস্বতা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হবে। যারা সুযোগ নিয়ে সুযোগবাদী হলেন তারা তাদের দুঃখের অতীত ভুলে গেছেন। সামনে আরেক রকমের ভবিষ্যৎ আছে, সেটা দুঃখের কিংবা সুখের হতে পারে।

কেমন হবে তা আপনার আজ কিংবা আজকের কাজ নির্ধারণ করবে। চুপ থাকুন তবে চুপ থাকার কারণ ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। তরুণরা বোঝে এবং বোঝে না-এর মাঝখানে অবস্থান করে না। আজকের তরুণরা মেধাবী। আপনি আপনার দিকটা দেখার অধিকার নিশ্চয়ই রাখেন; কিন্তু কারো ঘোর বিপদে তাকে খোঁটা দেওয়া কিংবা খোঁচানো বুদ্ধিপ্রসূত নয়। সুদিনে বালখিল্য যতখানি সহ্যের দুঃখের দিনে তেমন নয়। প্রিয়জন প্রিয় জায়গায় থাকুক- এমন প্রত্যাশা রাখতে চাচ্ছেন না কেন? ইতিহাসের কোনো আন্দোলনে তারুণ্য হেরেছে? অনেকেই কালোর স্রোতে হারিয়ে গেছে। মন থেকে ওঠে গেলে তার চেয়ার কিংবা পদে থাকা কেবল মাস শেষের বেতনের সঙ্গে জড়িয়ে যায়!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত