ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নিজেদের স্বার্থেই সুন্দরবনকে রক্ষা করা জরুরি

৫২টি নদী ও খালে কমেছে পানিপ্রবাহ
নিজেদের স্বার্থেই সুন্দরবনকে রক্ষা করা জরুরি

বিশ্বের বিস্ময়কর প্রাকৃতিক বনের একটি সুন্দরবন। আমাদের গর্ব, অহংকার ও ঐতিহ্যের ধারক এই বন বিশ্ব ঐতিহ্যেরও একক অংশ। বছরের পর বছর ধরে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সুরক্ষা বলয়ের ভূমিকায় রয়েছে এ বন। বনটি উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানের পাশাপাশি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে দিচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপত্তা। তবে গত কয়েক দশকে গাছপালা কেটে মানববসতি তৈরি, নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধ ও ঘের ইত্যাদি গড়ে তোলার কারণে বনসংলগ্ন ৫২টি নদী ও খালে কমে গেছে পানিপ্রবাহ। কোথাও আবার এ প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে একেবারে। এতে নদী ও খালের তীরবর্তী ম্যানগ্রোভ বন বিলীন হয়ে গেছে। আবার অবৈধ উপায়ে জ্বালানি কাঠ লুণ্ঠন, দেদার ইঞ্জিনচালিত নৌযানের চলাচল ও গোলপাতা সংগ্রহসহ বিভিন্ন সম্পদ আহরণের কারণে ভবিষ্যতে সুন্দরবনে গাছ, প্রাণী ও কীটপতঙ্গ কমে যাওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এবং লবণাক্ততা বাড়ায় লবণসহিঞ্চু গাছের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, কমেছে লবণাক্ততা অসহিঞ্চু গাছের সংখ্যাও। এতে সুন্দরবন হারাতে বসেছে তার স্বাভাবিক ভারসাম্য। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উভয় কারণেই সুন্দরবন ঝুঁকিতে রয়েছে। বিগত প্রায় তিন দশকে এ বন সংলগ্ন কৃষি কার্যক্রম প্রায় ১৭ হাজার ১৭৯ হেক্টর বন এলাকা ধ্বংস করেছে। চিংড়ি ঘেরে ধ্বংস হয়েছে আরো প্রায় ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর বনভূমি। শিল্প-কারখানা, কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র ও দেড় শতাধিকের বেশি সক্রিয় কারখানা বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনকে করছে তিলে তিলে ধ্বংস। ধ্বংসযজ্ঞ এভাবে চলমান থাকলে সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও সুনামির মতো দুর্যোগের সময় নিজের জৈবিক লড়াইয়ের ক্ষমতাও ফেলবে হারিয়ে। পাশাপাশি উপকূলীয় জনগোষ্ঠী পড়বে মারাত্মক হুমকির মুখে। আমাদের ক্রমাগত ধ্বংসযজ্ঞের ফলে এর মধ্যেই প্রায় ১০ হাজার পরিবার হয়ে পড়েছে গৃহহীন। যার সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া গৃহহীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে- আরো এক লাখেরও বেশি মানুষ। বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনে গত দুই দশকে আগুন লেগেছে প্রায় ৩৩ বার। এতে পুড়ে গেছে অন্তত একশ একরের বেশি বনভূমির গাছপালা। সুন্দরবনের কাছে আমাদের ঋণ অপরিশোধ্য। সুন্দরবনের বাধার শক্ত দেওয়াল ডিঙিয়ে জনপদে পৌঁছতে সিডর, আইলা, আম্ফান বা রিমালের মতো ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসাত্মক তাণ্ডবের শক্তি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। রক্ষা পায় ঘরবাড়ি, প্রাণ, শস্য ও সম্পদ। এজন্যই বাংলার ‘প্রাকৃতিক প্রাচীর’ সুন্দরবন রক্ষা আমাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই জরুরি। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ভূমিকাও ব্যাপক। ফলে সুন্দরবনের গায়ে কোনো ঘাতকের হাত লাগুক তা কাম্য নয়। ভবিষ্যতের হাজারটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেতে সুন্দরবন সুরক্ষায় যত্নবান হতে হবে। নিজেদের স্বার্থেই তা করতে হবে গভীর মমতা ও সততায়। মনে রাখতে হবে, সুন্দরবন বাঁচলে বাঁচবে বাংলাদেশ। রক্ষা পাবে উপকূল। শঙ্কামুক্ত হবে উপকূলীয় জনগোষ্ঠী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত