প্রত্যয় নয়, স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো দিন

ড. এ. এইচ. এম মাহবুবুর রহমান

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারের ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন প্রিত্যয় স্কিমটির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অর্ন্তভূক্তি এবং সরকারের ঘোষিত সুবিধাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মেনে নেয় নি। কেন মেনে নিচ্ছে না সেকথা পরে বলছি প্রত্যয় শব্দের অর্থ বিশ্বাস, নিঃসন্দিগ্ধতা, নিশ্চায়াত্বক, ইত্যাদি। স্কিমের শব্দ চয়নটি ভালো বলতেই হয়। বিশ্বাস না থাকলে মানুষ তো বটেই সমাজ রাষ্ট্র সবকিছুই অচল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুর আগে তার ‘সভ্যাতার সংকট’ প্রবন্ধে বলেছেন ‘মানুষের ওপর বিশ্বাস হারোনো পাপ.. বিশ্বাস রাখলাম।’ কাজেই বিশ্বাস তো রাখতেই হবে। বিশ্বাসের সামাজিক গুরুত্ব অনস্বিকার্য। খোদ ব্রিটেন রাষ্ট্রটি চলে বিশ্বাসের ওপর। তাদের লিখিত কোনো সংবিধান নেই। বিশ্বাস যখন এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তখন সরকার সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতেই স্কিমটির নাম দিয়েছেন ‘প্রত্যয়’। কিন্তু এই প্রত্যয় স্কিমটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য যারা তৈরি করেছেন তারা অবিশ্বাসের মতো কিছু কাজ করেছেন যে কারণে শিক্ষকরা আজকে রোদ বৃষ্টি ধুলো বালি উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছেন। বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে। শিক্ষরা সারাজিবন সরল পথে চলেন। সহজ কথা বোঝেন। সত্যকথা বলেন। জটিল সমীকরণে নেই। সুতরাং সরকারের প্রত্যয় স্কিম থেকে শিক্ষকদের বের করে স্বতন্ত্র স্কিমে রাখুন তাহলে আর প্রত্যয় বোঝানোর দরকার হবে না। ১৯৭৩ সালে সদ্য স্বাধীন একটি দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভেবেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় হবে স্বায়ত্ত্বশাসিত। শিক্ষকরা হবেন মর্যদাশীল। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী হাত দিতে চান নি। শিক্ষকদের ওপর ‘প্রত্যয়’ রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন এই শিক্ষকরা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার নির্দেশে বই খাতা কলম ছেড়ে ইস্পাতের ম্যাগজিন হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর এই সূর্য সন্তানরাই হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ‘প্রধম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-১৯৭৮) প্রণয়ন, পরিকল্পনা কমিশনে শিক্ষকদের নিয়োগ করে বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ায় শিক্ষকদের নিয়েজিক করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদের ওপর বঙ্গবন্ধুর ‘প্রত্যয়’ ছিল অগাধ ও অশেষ। বঙ্গবন্ধু হয়তো সাহিত্য স¤্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের মেজ দা সঞ্জিব চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনি ‘পালামৌ’ এর সেই বিখ্যাত উক্তিটি পড়েছিলেন ‘বন্যেরা বনে সুন্দুর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’ যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সব সময় আলাদা সম্মান দিতেন। আজকে ‘প্রত্যয়’ নাম দিয়ে শিক্ষদের যে বঞ্চনার মুখে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু এটি মেনে নিতেন না (আশা করছি বঙ্গবন্ধু কন্যা অবশ্যই শিক্ষদের এই বঞ্চনা মেনে নিবেন না)। প্রত্যয় স্কিমে কি আছে তা এরই মধ্যে সবাই জেনে গেছে। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ (অবসরের বয়স) কতো বছরের এটি প্রত্যয় স্কিম প্রণেতারা জানতেন না। পরে তারা জেনেছেন শিক্ষকরা যখন আন্দোলনে যেতে বাধ্য হলেন। আমাদের বাঙালি নোবেল বিজয়ী বিখ্যাত অর্থনীতবিদ অমর্ত্য সেন তার আত্বজীবনী ‘জগৎ কুটির’ এ লিখেছেন উপমহাদেশ যখন ভাগ করার দায়িত্ব নিয়ে স্যার সিরিল র‌্যাডক্লিফ এখানে এসেছিলেন তখন তিনি সময় পেয়েছিলেন খুব অল্প। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে কাজ শুরু করেছিলেন মধ্য আগস্টে শেষ করেছেন। এতো কম সময়ে এতো বড় উপমহাদেশ ভাগ করতে গিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে ফলে অনেক সময় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দাগ টানতেন। এর ফলাফল এখানকার মানুষকে ভৌগোলিক টানাপোড়েনের দায় এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’ প্রত্যয় স্কিম প্রণয়নে এমন ঘটনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা। তড়িঘড়ি করে কাজ করতে গিয়ে শিক্ষকদের প্রতি বঞ্চনার অনুপাত দেখে তাই মনে হচ্ছে।

চেয়ারম্যান, সমাজকর্ম বিভাগ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]