মহররমের শিক্ষা

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মহররম আরবি মাসের অন্যতম। রমজানের পরে মুসলমানদের কাছে এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে। সমস্ত মুসলিম-ছুটির মতো মহররমের ১০ তারিখে ছুটি পালিত হয়। ইসলামের চান্দ্র ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম মাস হলো মহররম। মহররম মাসের দশম দিনকে আশুরা বলা হয়। হাদিস শরিফে আশুরার দিন রোজা রাখার বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। এমনকি রমজানের পর এ রোজার ফজিলত বেশি বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসের পর সর্বোত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা (আশুরার রোজা) এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের সালাত।’ (সুনানে নাসায়ি : ১৬১৩)। অন্য হাদিসে এসেছে, উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত; আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে যখন আশুরার রোজা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি তাকে বলতে শুনেছেন, নবীজি (সা.) রমজান মাসের ও আশুরার রোজা ছাড়া অন্য কোনো দিনের রোজাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানা নেই। (সুনানে নাসায়ি : ২৩৭০)। বিভিন্ন হাদিসে আশুরার রোজার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশা রাখি, তিনি আশুরার রোজার মাধ্যমে আগের এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন।’ (তিরমিজি : ৭৫২)।

মহররম মাস মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক উভয় ক্ষেত্রেই তাৎপর্যপূর্ণ। এটি কেবল আল্লাহতায়ালা কর্তৃক পবিত্র হিসেবে নির্ধারিত মাসই নয়, ইসলামিক ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস; যা মুসলমানদের মদিনায় হিজরত ও ৬২২ সালে প্রথম ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে চিহ্নিত করে। মহররম আরবি শব্দ। যার অর্থ- পবিত্র, সম্মানিত। প্রাচীনকাল থেকে মহররম মাস পবিত্র হিসেবে গণ্য। আবার মহররম শব্দটি ‘হারাম’ থেকেও এসেছে। যার অর্থ ‘নিষিদ্ধ’। কাবাও একই শব্দ থেকে এসেছে। নামটি এ সত্যের সঙ্গে সম্পর্কিত যে, এ পবিত্র মাসে যুদ্ধ করা নিষিদ্ধ; যাতে মুসলমানরা হজে যেতে এবং নিরাপদে ফিরে আসতে পারে। ইসলামের পবিত্র মহাগ্রন্থ কোরআনে মহররম মাসকে পবিত্র মাস বলা হয়েছে। এ দিনে গভীর শ্রদ্ধা ও বেদনায় কারবালাপ্রান্তরে শহিদ হওয়া হুসাইনকে স্মরণ করা হয়। সুন্নি ও শিয়া মুসলমানের জন্যই মহররমের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে রয়েছে এ যুদ্ধের অপরিসীম ধর্মীয় তাৎপর্য।

মহররমের ১০ তারিখে ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে কারবালার যুদ্ধে রাসুল (সা.)-এর নাতি ইমাম হুসাইন (রা.) এবং তার সঙ্গীদের শাহাদতের ঘটনা স্মরণ করা হয়। সেই যুদ্ধ ছিল নিপীড়নের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের লড়াইয়ের প্রতীক। ইমাম হুসাইন (রা.)-এর অত্যাচারী শাসক ইয়াজিদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করতে অস্বীকৃতি, যার শেষ পরিণতি তার আত্মত্যাগের দিকে পরিচালিত করেছিল। যুদ্ধে যাওয়ার আগে ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-এর শেষ কথা ছিল, ‘হে আমার অনুসারীরা! যখনই তোমরা সতেজ পানি পান করবে, আমাকে স্মরণ করো এবং যখনই একজন শহিদ বা নিঃসঙ্গ ব্যক্তির কথা শুনবে, তখনই আমার জন্য কাঁদবে।’ তাই মহররম আমাদের সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল হতে এবং অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করে। এটি আমাদের অভাবীকে সাহায্য করা, নিপীড়িতদের সমর্থন করা এবং সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখার জন্য আমাদের কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যেমনটি ইমাম হুসাইন (রা.) তার কর্মের মাধ্যমে করেছিলেন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মী