ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বুলিং- একটা সামাজিক ব্যাধি

ফ্লোরা সরকার
বুলিং-  একটা সামাজিক ব্যাধি

‘বুলিং’ শব্দটা আমি প্রথম শুনি গত বছর, আমার আট বছরের নাতনি আমায়রার মুখে। সত্যি বলতে, শব্দটার অর্থ তখন পর্যন্ত জানতাম না। একদিন সে তার মাকে বলছিল, স্কুল বাসে কে যেন তার সঙ্গে বুলিং করে। তখন তার মা তাকে বললো, ওসব বুলিংয়ের সে যেন কোনো গুরুত্ব না দেয়। কিছু ছেলেমেয়ে থাকে যারা বুলিং করে আনন্দ পায়। এই বছর কিছুদিন আগে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী অবন্তিকা যখন আত্মহত্যা করলো, তার আত্মহত্যার পেছনের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখি, সেও সেই বুলিংয়ের শিকার হয়েছিল। এবং হয়েছিল মারাত্মকভাবে। অবন্তিকার মায়ের একটা সাক্ষাৎকার দেখে বিষয়টা পরিষ্কার হলো। বুলিং বলতে মানুষকে মানসিক যন্ত্রণায় দগ্ধ করা ছাড়াও যৌন হয়রানি হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের বুলিং। বিষয়টা যে কী ভীষণ ভয়াবহ সেটা যারা বুলিংয়ের শিকার হয় শুধু সেই ভুক্তভোগীরাই উপলব্ধি করতে পারে। এরপর খুব সম্প্রতি আরেকটা কেস দেখলাম, সেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রী কাজী ফারজানা মীমের ক্ষেত্রে। এবারের বুলিং ছাত্রদের পক্ষ থেকে না, রীতিমতো শিক্ষকের জায়গা থেকে হয়েছে। যেহেতু সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ফিল্ম স্টাডি বিষয়ের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনের (ইনি আবার চ্যানেল আইরের executive producer) বাজে প্রস্তাবে মীম সাড়া দেয়নি, শুরু হলো তাকে নানাভাবে মানসিক যন্ত্রণা দেয়ার পালা। ক্লাসের মধ্যেই তাকে নানাভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা শুরু করে। তবে মীম অবন্তিকার চেয়ে হয়তো কিছুটা সাহসী, তাই সে বিষয়টা তার বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে অবগত করেন। এতে ফলাফল অবশ্য আরো খারাপের দিকে যায়। বিভাগীয় চেয়ারম্যান মীমের পক্ষ ছেড়ে শিক্ষকের পক্ষ নেয়। মীম যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে লিখিত নালিশ করে তখন সেই নালিশ তুলে ফেলার জন্য সেই শিক্ষকসহ বিভাগের চেয়ারম্যান চাপ প্রয়োগ তো করতেই থাকে, পাশাপাশি সেই শিক্ষক ইমন মীমকে তার বিষয়ে ফেল করিয়ে দেয়। শুধু সেখানেই বিষয়টা শেষ হয় না, মীমকে নানাভাবে ভয়ভীতিসহ তাকে অনার্স পাসে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে মীমের সহপাঠীরা মাস্টার্স দিয়ে ফেললেও, মীমের অনার্স পাস বন্ধ হয়ে যায়। কাজেই বুঝতে অসুবিধা হয় না, বুলিং কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। ২০১৭-১৮ সালে ভর্তি হলেও, এই বুলিংয়ের শিকার মীম এখনো অনার্স পাস করতে পারেনি। মেয়েটার ভবিষ্যৎ তো শেষ করা হচ্ছেই, তার সাক্ষাৎকার দেখে যেটা বুঝলাম, এখন মীম তার জীবননাশেরও ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে দিন কাটাচ্ছে। সব খবর আমরা পাই না। অবন্তিকা, মীমের মতো আরো কত কত অবন্তিকা আর মীম যে সমাজে ছড়িয়ে আছে জানা নেই। কারণ এসব বুলিং জগন্নাথ ছাড়াও আরো বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে চলেছে। উন্নত দেশে ছোটখাটো বুলিংয়ের কারণেই পুলিশ কেস হয়ে থাকে। আর আমরা অবন্তিকা বা মীমের মতো ভয়ানক সব বুলিং দেখেও না দেখার ভান করি। এটা যে কত বড় একটা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে সেটা আরো কিছু অবন্তিকার মতো আরো কিছু আত্মহত্যা দেখে কি বিষয়টা উপলব্ধি করবো? প্রশ্নটা রেখেই লেখাটা শেষ করলাম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত