ঢাকা ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রকাশ্য শত্রুকে পাশে বসালেও গোপন শত্রুকে চিনতেই হবে!

রাজু আহমেদ
প্রকাশ্য শত্রুকে পাশে বসালেও গোপন শত্রুকে চিনতেই হবে!

প্রত্যেকের চরিত্রের দুটো দিক আছে! এই বিভাজনকে ঠিক অন্ধকার এবং আলো হিসেবে প্রকাশ করা যায় না! এই চরিত্রের একদিক হচ্ছে- সেটা যেটা ব্যক্তি তার নিজ উদ্যোগেই অন্যকে দেখায়। কেউ সেটা বিশ্বাস করতেও পারে, আবার নাও করতে পারে! কেন না, চরিত্রের সেই দিকটিতে ব্যক্তির মুখোশ থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে! সেখানে ব্যক্তি তার অভিনয়ে হোক কিংবা নিরেট বাস্তবতায় হোক- ভালো দিকটিই ফুটিয়ে রাখে। ব্যক্তি কামনা করে তার আচরণে মানুষ মুগ্ধ হোক। তাকে সবাই বাহবা প্রদান করুক। কখনো কখনো এই ফাঁদের কারণে সে তার আসল চরিত্র লুকিয়ে মানুষকে বিব্রত করে! ব্যথা দেয়! কাঁদায়।

কখনো কখনো এর উল্টোটাও হতে পারে! নেতিবাচক দিকের কথা এজন্যই বললাম যে, আজকাল মানুষ কোনো বস্তু বা ঘটনার ইতিবাচক দিককে ভাববার আগেই নেতিবাচক মন্তব্যকে এগিয়ে রাখে। তবে চরিত্রের দ্বিতীয়ভাগ সবচেয়ে জীবন্ত! এখানে ব্যক্তি তার চরিত্রের মধ্যে যা-ই প্রকাশ করুক বা না করুক, সেটা মূখ্য নয় বরং অন্যজন সেখানে কী দেখছে সেটাই বিবেচ্য! এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্বে মানুষকে খুব সহজে চেনা যায়! প্রয়োজন ফুরালে মানুষকে হারে হারে জানা যায়! কেউ কারো অধীন থাকলে তখন পা-মাথাকে চিনতে পারে! দুর্বলরা অতিসহজেই সবলের দুর্বল এবং সবল দিক জানতে পারে! মানুষ সম্পর্কে মানুষ বাইর থেকে কী দেখে, কী জানে তা মানুষের সঙ্গে মিশলে বোঝা যায়! দুনিয়ার তাবৎ ছেলেমেয়ে ভালো, ছেলেমেয়ে কিন্তু সে যখন কারো প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা স্বামী-স্ত্রী তখন তাদের চিনতে সুবিধে হয়! কর্মী জানে বস কেমন, আর বস জানে কর্মী কেমন! মুর্শিদ মুরিদকে চিরদিন অন্ধ রাখতে পারে না, আবার মুরিদও যাকে তাকে ধরে মুর্শিদ মানে না! মানুষের জীবনের যত ব্যথা তার প্রায় পুরোভাগ আপন মানুষ থেকে পেয়েছে। অথচ এই মানুষেরাই সবচেয়ে বিশ্বস্ত ছিল। সুসময়ে আগ বাড়িয়ে ছাতা ধরেছে, যেখানে সেখানে প্রশংসায় ভাসিয়েছে এবং সাহস যুগিয়েছে। আবার এরাই স্বার্থ ফুরিয়ে যেতেই বুক ঘুরিয়ে পিঠ দেখিয়ে সটকে পরেছে। দূরের মানুষ মানুষকে আর কতোখানি ব্যথা দিতে পারে! যারা এক সময় সীমাহীন বিশ্বস্ত ছিল তারাই সীমা অতিক্রম করে দুঃখের পাহাড় টেনেছে! রাতভর কাঁদিয়েছে, ঘুম কেড়েছে এবং একাকী বাঁচার মতো কঠিন পথে ঠেলে দিয়েছে। কত ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে জীবন এখানে দাঁড়িয়েছে, তা অতীতে ফিরে তাকালে লম্বা দীর্ঘশ্বাসে জানা যায়। প্রিয়জন থাকাকালে মানুষ যে চরিত্র দেখায়, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেও সেই চরিত্র টিকিয়ে রাখে, হাসিমুখে ভরসার হাত বাড়িয়ে রাখে কিংবা আড়ালেও বুকে রাখে, তেমন সুজন এই ধরাধামে অনেক কম বললেও সামান্যতম অত্যুক্তি হবে না! আপনের থেকে ব্যথা পেতে পেতে মানুষ একসময় তাকে পাষাণ ভাবতে শরু করে! মানুষের প্রতি বিশ্বাস একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া! সুসময়ে কেউ যেমন আচরণ করে দুঃসময়েও যদি অনুরূপ অনুকম্পা বাঁচিয়ে রাখে, তবে তাকে অনায়াসে আপন মনে করা যায়। কারো সঙ্গে আত্মীয়তা নেই, পাশাপাশি থাকা ও বাঁচা হয় না, তবুও কিছুক্ষণ কথা বললে, তার দু’চারটি কাজ দেখলে কিংবা চিন্তা প্রকাশের আলামতে তার গতিবিধি অনুমান করা যায়! মানুষ যা দেখায় এবং যা ভেতরে লালন করে তা যদি সাদৃশ্য না হয়, তবে বিশ্ব বাটপারকেও একদিন কোথাও না কোথাও ধরা খেতে হয়! পৃথিবীর কোনো অপরাধী আলামত রাখা ছাড়া অপরাধ সংঘটিত করে আড়ালে থাকতে পারে না! লুকিয়ে থাকতে থাকতেও সে একদিন ধরা পরে যায়।

হাজার ভালো কথার মধ্যে মাত্র একটি কুকথা একজন মানুষের সব অর্জন, সব ত্যাগ ম্রিয়মান করে দেয়! মানুষকে চেনাতে সাহায্য করে। একটি মন্তব্য মানুষের মনে জমানো তার গন্তব্যকে বিচ্যুত করে। মানুষ আসলে খুব কম ক্ষেত্রে তার বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে! শাখা-প্রশাখায় কতক্ষণ নাচানাচি করে, তাকে মূলে ফিরতেই হয়! কখনো কখনো ভালোবাসার মধ্যেও স্বার্থ থাকে! কথায় কথায় বের হয়ে আসে কপটতার নীলনকশা! যে মানুষের মুখের কথার সাথে মনের বিশ্বাসের মিল নেই, সে মানুষ ক্ষমতাহীন হতেই ব্যবহৃত টিস্যুর মতো ভাগাড়ের কদর্যতা বাড়ায়! কেউ তার সম্পর্কে যে প্রচার-প্রকাশ করে তাতে মাখামাখি রকমের ভন্ডামি থাকতে পারে! খুব বেশি পরচর্চা কারো জন্যই শোভনীয় নয়। তবে যে সার্কেলে সময় কাটাতে হয়, আড্ডা জমাতে হয় কিংবা যাদের কাছে মান-সম্মান গচ্ছিত তাদের সম্পর্কে না জেনেই সব বিশ্বাস বিনিয়োগ করা ঠিক নয়! যদিও মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ; কিন্তু মানুষ নিজেই বিশ্বাসভঙ্গের জন্য প্রতারণা করে আগেই অবিশ্বাসের মুকুট পরিধান করেছে। কাজেই দুঃখ বাড়াতে না চাইলে, সবার ওপর বিশ্বাস হারাতে না চাইলে ব্যক্তি ও ঘটনাকে একটুখানি পরখ করে নিতেই হবে! প্রকাশ্য শত্রুর সঙ্গে হাঁটতে গেলেও গোপন শত্রুকে চিনতেই হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত