ঢাকা ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কথা কম বলাই উত্তম

ভালো কথা বলতে হবে নতুবা চুপ থাকতে হবে
কথা কম বলাই উত্তম

কথায় বলে কথা কম, কাজ বেশি। কিন্তু এই কথা বলা যত সহজ, করা ততটা কঠিন। যারা বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান, তারা জানেন কীভাবে জিহ্বাকে সামলিয়ে চলিতে হয়। কথায় নয়, কাজেই মানুষ বড় হয়। ভাষণ নয়, অ্যাকশনেই দক্ষ মানুষের পরিচয়। এই জন্য কবি কুসুমকুমারী দাশ ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’। আমাদের অবশ্যই কথার চাইতে কাজে দক্ষতা বেশি অর্জন করতে হবে। প্রয়োজনের বাইরে কোনো কথা বলা যাবে না। অনেক সময় ছোট্ট ছোট্ট কথায় অনেক অনেক বড় কিছু হয়ে যায়। আমাদের চারিপার্শ্বে পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীবনযাপনে এমন ছোট্ট ছোট্ট কথা, বিষয় বা সাইন-সিম্বল রয়েছে, যা বড় বিষয়কে তুলে ধরে, যা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। ‘আকাশ’ শব্দটি যতই ছোট্ট হোক, তার বিশালতা কল্পনার চাইতেও বড়। মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। তাই কথা কম বলিয়া বেশি বেশি কাজ করে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। মৃত্যুর পরেও মানুষ বাঁচিয়া থাকে তাহার কাজের মাধ্যমে। এই জন্য কথার মানুষ আর কাজের মানুষ কখনো এক হইতে পারে না।

আমাদের দেশে অনেকে কম কথা বলেন, কাজ বেশি করেন। কেউ কথা বেশি বলেন, কাজ কম করেন। অনেকে আছেন যতটুকু বলেন, ততটুকু করেন। কেউ আবার না করেও বলেন। আর কেউ না বলেও করেন। এই কথা ও কাজের ক্ষেত্রে কে ভালো কে মন্দ, তা সবাই জানেন। তার পরেও একটা স্ট্যান্ডার্ড বা মান বোধহয় আমাদের চারিপার্শ্ব হতে বোঝা যায়। আমরা মানি আর না মানি, কম কথা বলা আসলে মানুষের উত্তম গুণ। কেন না, বেশি কথা বললে বিপদ বেশি হয়। সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। পক্ষান্তরে চিন্তাভাবনা করিয়া কথা বলিলে পদস্খলন কম হয়। এই জন্য ইসলামের নির্দেশনা হলো- যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে নতুবা চুপ থাকে (বুখারি ও মুসলিম)। অনেক সময় চুপ থাকিবার কারণে পরবর্তী সময়ে লজ্জায় পড়িতে হয় না। এই জন্য বলা হয় : যে চুপ থাকে, সে পরিত্রাণ পায় (তিরমিজি)। কেন না, কথা বুলেটের মতো। একবার মুখ থেকে বের হয়ে গেলে গেলে তা আর ফিরিয়ে আনা যায় না। অনেক সময় কথার পরিণতি ও ফলাফল হয় বিপজ্জনক। এমনকি এটি একসময় জাতীয় সংকটের রূপ নিতে পারে। এই জন্য মানুষের অঙ্গপ্রতঙ্গের মধ্যে হস্ত ও জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ সবচাইতে জরুরি। বিশেষ করিয়া, জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই জন্য মহানবী (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী অঙ্গ (জিহ্বা) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী অঙ্গ (লজ্জাস্থান) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তাহার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব, (বুখারি)। অনেক সময় হাতের আঘাতের চাইতে কথার আঘাত মারাত্মক ও কষ্টদায়ক। অতএব, অপ্রয়োজনীয় ও অনর্থক কথা পরিহার করে চলতে হবে। ভালো কথা বলতে হবে নতুবা চুপ থাকতে হবে। কথার চাইতে কাজের মূল্য বেশি দিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত