ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্বাভাবিক ছন্দে ফিরুক সবকিছু

সরকার সঠিক পথ নির্ধারণ করবে
স্বাভাবিক ছন্দে ফিরুক সবকিছু

সাম্প্রতিক সহিংসতায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী যে ক্ষতি হয়েছে তা এক কথায় ভয়াবহ। ওই সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সরকার কারফিউ জারি করে এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে সঙ্গত কারণেই বাধা-বিঘেœর সৃষ্টি হয়। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অভিঘাত লাগে। সব ক্ষেত্রেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খণ্ডিতভাবে যা কিছু উঠে আসছে তা চরম দুর্ভাবনার। যদিও ক্রমেই জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে উঠছে, তবু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই স্বাভাবিকতার পথে অন্তরায় এখনো জিইয়ে আছে।

সড়কপথে বাস যোগাযোগও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গণ্ডিবদ্ধ। বাস ছাড়ার সময় নির্ধারিত হচ্ছে কারফিউ শিথিলের সঙ্গে মিলিয়ে। মালবাহী ট্রেন চালু হলেও যাত্রীবাহী ট্রেন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কিছু রুটে স্বল্প সংখ্যক লঞ্চ চলাচল করলেও বেশিরভাগ রুটেই বন্ধ রয়েছে। আকাশপথ খোলা রয়েছে বটে, কিন্তু আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার বিষয় রয়েছে। আমরা লক্ষ্য করছি, কারফিউ শিথিলকালীন রাজধানী ঢাকায় যানজট চিত্র অধিকতর প্রকট হয়ে উঠছে এবং জনবিড়ম্বনা বহুলাংশে বেড়েছে। মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকাবাসীর কাছে যে আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল তাও ধ্বংসযজ্ঞের কবলে নিপতিত। এই উভয় যোগাযোগমাধ্যমই স্টেশন ও টোলপ্লাজা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর বিরূপ অভিঘাত নগর জীবনে প্রকটভাবে দৃশ্যমান। ঢাকার বাইরে আন্তঃজেলা সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কয়েকটি স্থানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে যোগাযোগব্যবস্থা এখনো মসৃণ হয়নি। অনির্দিষ্টকালের জন্য যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় শুধু জনভোগান্তিই বাড়েনি, প্রতিদিন প্রায় চার কোটি টাকার ওপর লোকসান গুনতে হচ্ছে রেল খাতকে। এক সমীক্ষায় প্রকাশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কারণে স্বল্প পরিসরে ট্রেন চালুর ঘোষণা দিয়েও বাংলাদেশ রেলওয়ে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসেছে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের বিড়ম্বনা আরো বাড়বে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে সরকারের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা মনে করি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকার সার্বিক ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে পদক্ষেপ আরো জোরদার করতে পারে। যোগাযোগব্যবস্থাসহ সব স্তরের শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে উদ্যোগ নিতে পারে। যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে ওঠা যেমন সহজ নয়, তেমনি সময়সাপেক্ষ বিষয়ও বটে। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা কয়েক দিন আগে বলেছি, সব ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দেয়া যায় না। দেশব্যাপী যে ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালিত হয়েছে, চূড়ান্ত অর্থে এর সরাসরি ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।

চলমান বৈশ্বিক সংকটজনক পরিস্থিতির বাইরে আমরাও নই, এমনিতেই আমাদের অর্থনীতি সংকটকাল অতিক্রম করছিল। তার মধ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতায় অর্থনীতির দুরবস্থা আরো বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতির পুনরুদ্ধারও বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমরা এই প্রেক্ষাপটে আরো মনে করি, নানা খাতে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে এর উপশমে জনগুরুত্বের দিক থেকে প্রাধান্য বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগী বিদেশি সংস্থা ও বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে যাতে কোনোরকম ভুল বার্তা না পৌঁছায় এর জন্যও আরো জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন। সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে সরকার দাঁড়িয়েছে। ২৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহিংসতায় নিহত ৩৪ জনের পরিবারকে সঞ্চয়পত্র ও নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিককরণের লক্ষ্যে এবং জনমনে স্বস্তি ফেরানোর উদ্দেশ্য নিয়ে সরকারের তরফে গৃহীত পদক্ষেপে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসছে।

আমরা প্রত্যাশা করি, জনজীবনের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জনগণের সহায়তায় সরকার সঠিক পথ নির্ধারণ করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত