রাজস্ব আয় বৃদ্ধি

কর প্রশাসনের কার্যকর সংস্কার দরকার

প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কর-রাজস্ব বাড়ছে না। জানা যায়, সদ্য বিদায়ি অর্থবছরে কাটছাঁটের পরও অর্জিত হয়নি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা। এমন পরিস্থিতিতে বড় অঙ্কের আয়ের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছরের। এ লক্ষ্যমাত্রা কতটা অর্জিত হবে, এটাই এক প্রশ্ন। এদিকে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে উচ্চ লক্ষ্যসহ পাঁচ সমস্যা চিহ্নিত করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এ সবের মধ্যে রয়েছে- কর সম্প্রসারণে জরিপ কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা ও পদ্ধতিগত সমন্বয়হীনতা এবং কর ব্যবস্থাপনার তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা। এছাড়া রয়েছে দক্ষ জনবল সংকট ও ভৌত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধার অভাব। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ‘কর্মসম্পাদন’ প্রতিবেদনে এসব সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অটোমেশন বাস্তবায়ন করাই মূল চ্যালেঞ্জ। উল্লিখিত সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে গত কয়েকদিনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ফলে গত সাতদিন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আহরণ হয়নি। অর্থ বিভাগের হিসাবে দৈনিক ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অর্থবছরের শুরুতে এ ধরনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। চলতি অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এটি গত অর্থবছরে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ ছিল। উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।

এক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো কর ফাঁকির প্রবণতা। সেটি রোধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে করদাতার সংখ্যা বাড়িয়ে খুব একটা লাভ হবে কিনা সংশয় রয়েছে। দেশের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এখনো কর-জালের বাইরে রয়ে গেছে। করযোগ্য সবাইকে কর-জালের অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজস্ব আয় বাড়াতে কর প্রশাসনের কার্যকর সংস্কার দরকার। এক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করার পদক্ষেপও নিতে হবে। তা না হলে লক্ষ্য অর্জনে নানা জটিলতা দেখা দেবে। জানা যায়, ভ্যাট আদায় বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হবে আরও ৪২ হাজার ইএফডি মেশিন। এ মেশিন স্থাপনের ফলে ভ্যাট খাতে আদায় আগের তুলনায় বেড়েছে। পুরোপুরি মেশিনের আওতায় আনা গেলে আদায়ের হার আরো বাড়বে। আইএমএফের ঋণের শর্ত হিসাবে প্রতিবছর জিডিপির দশমিক ০৫ শতাংশ হারে কর বাড়াতে বলা হয়েছে। সে হিসাবে প্রতিবছরই কর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সরকারকে বাড়াতে হবে।

এমনিতে ডলার সংকটের কারণে অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে নানা সংকট। বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট সংকট প্রভাব ফেলছে রপ্তানি খাতে। অবরোধসহ নানা কর্মসূচি ব্যবসায় কিছুটা প্রভাব ফেলছে। ফলে এসব খাত থেকে কমেছে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আদায়। এ কারণে গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ কমেছে। বস্তুত রাজস্ব আদায় বাড়াতে কর সেবা উন্নত করার পাশাপাশি আরও যা যা করণীয় তার সবই করতে হবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে আয়কর, ভ্যাট ও সঞ্চয়পত্র অফিসের সাংগঠনিক কাঠামো সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি লক্ষ্য অর্জনে কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর পদক্ষেপও নিতে হবে।