ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রতিবন্ধিতা নাগরিকদের সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থাপনায় শ্রেণি বিভাজন কেন?

মো. তাহমিদ রহমান
প্রতিবন্ধিতা নাগরিকদের সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থাপনায় শ্রেণি বিভাজন কেন?

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গত ২৩ জুলাই ২০২৪ খ্রি. সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের মূল সমালোচনাটা ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে। মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশের সূর্যসন্তান। সমসাময়িককালে দূরদর্শী চিন্তা, বুকে দেশপ্রেম লালন এবং প্রজ্ঞাবান হওয়ায় তারা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করে এনেছিল লাল-সবুজ পতাকা। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশের। তাই মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের মানুষের কাছে সম্মান ও আবেগের জায়গা। এজন্য সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে যা প্রশংসনীয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্ম সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা লাভ করবে যা যৌক্তিক। যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে, এদেশ স্বাধীন করেছেন, তাদের প্রতি রাষ্ট্রের একটি দায়বদ্ধতা রয়েছে। পৃথিবীর যেসব দেশে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তি সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছিল অর্থাৎ যেসব দেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেসব দেশে যারা মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিল, তাদের সন্তান-সন্ততি ও বংশধররা চাকরিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে একটা অগ্রাধিকার পায়। কোটায় অন্তর্ভুক্ত আর মেধাবী এ দুটোবিষয় যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে, তাতে মনে হয় কোটার মাধ্যমে চাকরি প্রার্থীরা মেধাবী নয়। আমাদের মেধাবী সন্তানদের বোঝা উচিত যে চাকরির প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় কোটাধারীদের জন্য আলাদা নম্বর নির্ধারিত থাকে না। তারা অবশ্যই মেধাবী কারণ একই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা পাস করে সংবিধানের আলোকে প্রণীত সরকারি নীতি অনুযায়ী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। আন্দোলনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রজন্মের স্থলে শুধুমাত্র সন্তানদের জন্য এই কোটা নির্ধারণ প্রকারান্তরে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সামিল। বিশ্বের মানচিত্রে অন্যকোনো রাষ্ট্রে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করা কোনো যোদ্ধা এভাবে অসম্মান হয়েছে কি না আমার জানা নেই। মেধাবী সন্তানদের উচিত ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মানের দায়বদ্ধতা থেকে তাদের প্রজন্মের জন্য ৫ শতাংশ কোটাব্যবস্থা বহাল রাখা। সংস্কারকৃত কোটা ব্যবস্থায় ১ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য এবং ১ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছেÑ শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য। কোটার উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমতল ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা করা। যেই পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কোটা রাখা হচ্ছে তা কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে এবং কতটা কাজে লাগছেÑ সে বিষয়টাতেও নজর দেয়া প্রয়োজন। রাষ্ট্রের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমতার ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতেই কোটাব্যবস্থা।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে প্রথম কোটাব্যবস্থা চালু করা হয়। ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন সময়ে এই কোটার পরিধি বেড়েছে, নতুন নতুন কোটাযুক্ত করা হয়েছে। ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল। বিন্যাস ছিল এমন-মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ (ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনি), নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রার্থীর নিয়োগের বিধান ছিল। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ-২০২১’-এ বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের চলমান প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে সরকারিসেবা সনদপ্রাপ্তির জন্য স্বীকৃত প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ৭২৭ জন। প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাগরিকদের সরকার ১২টি ভাগে বিভক্ত করেছে।

১) শারীরিক প্রতিবন্ধিতা ২) মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা ৩) দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা ৪) শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা ৫) বাক প্রতিবন্ধিতা ৬) শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা ৭) অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার ৮) ডাউন সিনড্রোম ৯) সেরিব্রাল পলসি ১০) বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা ১১) বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা ১২) অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

২০১৩ সনের প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা (৩৯ নং) আইনের ৫নং ধারায় বলা হয়েছে নিম্নবর্ণিত বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তি ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ বলিয়া বিবেচিত হইবেন, যথাÑ

(ক) একটি বা উভয় হাত বা পা না থাকা; (খ) কোনো হাত বা পা পূর্ণ বা আংশিকভাবে অবশ অথবা গঠনগত এইরূপ ত্রুটিপূর্ণ বা দুর্বল যে, দৈনন্দিন সাধারণ কাজ-কর্ম বা সাধারণ চলন বা ব্যবহার ক্ষমতা আংশিক বা পূর্ণভাবে ব্যাহত হয়; (গ) স্নায়ুবিক অসুবিধার কারণে স্থায়ীভাবে শারীরিক ভারসাম্য না থাকা।

উপর্যুক্ত ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও যথাযথ অধিকার প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ‘সূবর্ণ নাগরিক’ পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই পরিচয়পত্রের মাধ্যমে প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সম্পর্কিত সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে। সেখানে আরো বলা হয়েছে, মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই অনুচ্ছেদে আরো বলা হয়েছে, জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।

সংবিধানের এই বিধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের সব জনগোষ্ঠী যাতে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে সমভাবে সুযোগ পায়। রাষ্ট্র ও সমাজে যাতে কোনো বৈষম্য না থাকে, সেজন্যই এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই সমতা হতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমতা। তার আলোকে সরকার দেশের অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের কল্যাণ ও জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দেশের প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে যথাযথ অধিকার রক্ষা ও কল্যাণের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা’ আইন পাস করা হয়। আইনটিতে উপর্যুক্ত ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের পূর্ণমাত্রায় বেঁচে থাকা ও বিকশিত হওয়া; সর্বক্ষেত্রে সমান আইনি স্বীকৃতি এবং বিচারগম্যতা; উত্তরাধিকার প্রাপ্তি; স্বাধীন অভিব্যক্তি; মতপ্রকাশ এবং তথ্যপ্রাপ্তি; পরিবারের সঙ্গে সমাজে বসবাস; বিয়ে ও পরিবার গঠন করা; সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ; শিক্ষার সবস্তরে একীভূত বা সমন্বিত শিক্ষায় অংশগ্রহণ; সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মে নিযুক্তি; কর্মজীবনে প্রতিবন্ধিতা শিকার ব্যক্তির কর্মে নিয়োজিত থাকা বা ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি; সর্বাধিক মানের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি; সবক্ষেত্রে উপযোগী পরিবেশ ও ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি; সংস্কৃতি, বিনোদন, পর্যটন, অবকাশ ও ক্রীড়া কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ; ব্যক্তি তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা; জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি; ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং ভোট প্রদান ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির পরিপূর্ণ জীবন লাভের জন্য রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে যেসব সহযোগিতা প্রয়োজন, তার সবকিছুই এই আইনের দ্বারা স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এই আইনের আওতায় প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের অধিকার ও আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয় ও নির্বাহী কমিটি এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার নেতৃত্বে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ আইনের ৩৩(১) ধারায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের কথা বলা হয়েছে। আইনের এ ধারায় বলা হয়েছে যেÑ শুধুমাত্র প্রতিবন্ধিতার কারণে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বা কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তির, অন্যান্য যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভর্তির আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না। কোনো বৈষম্য ঘটলে, বৈষম্যের শিকার প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে। এছাড়া প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নিষিদ্ধ করে এ বিষয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থাকে আইনি ভিত্তি দেয়া হয়েছে। যেখানে আইন থাকার পরও প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাগরিকগণকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হতে হয়, সেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী কোটা সংকোচন এবং শুধুমাত্র শারীরিক প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাগরিকদের কোটা সুবিধা প্রদান ও অন্য ১১ ধরনের প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাগরিকদের বঞ্চিত করা স্পষ্টতই ২০১৩ সালে পাশ করা ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা’ আইনকে লঙ্ঘন। যুগ যুগ ধরে প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিরা সামাজিক নিগ্রহের শিকার হয়ে আসছে।

২০১৩ সালের সুরক্ষা আইনের ফলে শিক্ষা, সামাজিক ক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্রসহ অন্যান্য সবক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের কষ্ট লাঘবে যতখানি ভূমিকা রাখার কথা ছিল বাস্তবতা তার তুলনায় ভিন্ন। এখনো শিক্ষাক্ষেত্রে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আইনটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে এবং শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষা গ্রহণে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করলেও মাঠপর্যায়ে-এর যথাযথ প্রয়োগ এখনো হতাশাজনক। আমাদের দেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক, প্রথাগত, গোষ্ঠীগত, ভাষাগত, জাতিগত, জন্মগত নানা কারণে সমাজের মানুষ বৈষম্যের শিকার হয়। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-মূর্খ, অগ্রসর-অনগ্রসর, ধর্মণ্ডগোত্র, রাজনৈতিক ধারা-মতবাদসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমরা দেখছি বৈষম্যের বিচিত্র্য রূপ। সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হয় প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জনগণ। এখনো তাদের জীবন ব্যবস্থাপনাকে কল্যাণের চোখে দেখা হয়; কিন্তু রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে জনসাধারণের মধ্যে এই ধারণার প্রচার ও প্রসার ঘটানো যে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি হলো তাদের ন্যায্য অধিকার। সেই সঙ্গে সব ধরনের প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাগরিকের জন্য সরকারি চাকরিসহ অন্যান্য সবক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা আগের মতো বহাল রাখার জন্য দেশের প্রায় ৩৪ লাখ প্রতিবন্ধিতা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাগরিকের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।

লেখক : প্রভাষক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ)

নূরুল আমিন মজুমদার ডিগ্রি কলেজ, লাকসাম, কুমিল্লা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত