ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিমত

শিক্ষাঙ্গন কোনো রণক্ষেত্র নয় এই সহিংসতা বন্ধ হোক

নূরনাহার নিপা
শিক্ষাঙ্গন কোনো রণক্ষেত্র নয় এই সহিংসতা বন্ধ হোক

এ কেমন শিক্ষা যেখানে একজন আরেকজনকে লাঠিপেটা করে, হত্যা করে, রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের ওপর অস্ত্র হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। নারীদের অপমান করছে, কিন্তু কেন? আর এ কেমন নেতৃত্ব, যেখানে মারামারিকে উসকিয়ে দেয়া হয়! অদৃশ্য অন্ধকারে কালো ছায়া। এতো এতো লাশের ভার কার কাঁধে নেবে। আর কত মায়ের বুক খালি হবে। আর কত রক্তের মিছিল দেখতে হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকার সমর্থক সংগঠনের কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েকশ’ মানুষ। নিহিত হয়েছেন কয়েকজন।

পুলিশের হাতে নিহত হয় অনেক তরুণ। তাহলে নিরাপত্তা কার কাছে, দফায় দফায় সংঘর্ষে কারণে আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? সন্ত্রাস বর্বোরচিত হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রক্তে রঞ্জিত। এই মুখে কার রক্ত? আমার সন্তান, আপনার সন্তান। বাংলাদেশের! এই রক্তক্ষরণ আমাদের কোনোভাবেই কাম্য নয়! দেশের শান্তির জন্য এজন্যই বুঝি একাত্তরে ৩০ লাখ শহীদ রক্ত দিয়েছিল। বাংলার বুকে এই অসহায় বাবা-মায়ের, বোনের, আর্তনাদ শোনার জন্য?

মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান থাকুক, সবার অন্তরে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষার্থে হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযুদ্ধের সনদ বাতিল করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করে, সরকার যে ভাতা দেন, সে টাকা একজন চাকরিজীবীর সমান বেতন। তাহলে সে বেতনে তিনি তার সন্তানদের সুশিক্ষিত করতে পারেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সন্তান কোটার সুবিধা পায়। তাই বলে নাতি-নাতনিরা এ কোটার সুবিধা পাবে, তাহলে একটু বাড়াবাড়িই। এমনিতেই শিক্ষা কেন্দ্রের সেশনজটের কারণে শিক্ষার্থীদের বয়স বৃদ্ধি হতে হতে চাকরির বয়স পার হয়ে যায়। তার মধ্যে কোটা প্রথার কারণে চাকরির সন্ধান মিলাতে হিমশিম খেতে হয়। হাজারো শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে, সারাজীবনের একটা স্বপ্ন একটা ভালো চাকরি। সারাজীবনের পরিশ্রমের একটা ভালো চাকরির জন্য হা হুতাশ করতে হয়। একটা চাকরির জন্য কত চেষ্টা করে, একটা ভালো চাকরি পেতে হলে কোটা ব্যবহার করতে হয় অথবা ঘুষ দিতে হয়।

কিন্তু কেন? এর দায় কার। কোটায় আসলে কি অমেধাবী? যতটুকু মানি, প্রিলি, লিখিত, মনসতাত্ত্বিক ও ভাইভাতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোটা সংরক্ষণ করা হয়। এতোগুলো সনদভাবে পার হলো তারা অমেধাবী হলো কীভাবে? তাই কোটার সঙ্গে মেধার তুলনা করা উচিত নয়। জীবনকে ভালোবেসে এই জীবনটাই আবার সামনে এগিয়ে যায় উজ্জ্বল দিগন্তের প্রত্যাশায় স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা, একটা নিরাপদ সুন্দর সফল দিনের আশার আলো জাগে, একজন মা-বাবার কতো বছরের প্রত্যাশা নিয়ে সন্তানকে বড় করে, আজকের স্বাধীনতা রক্তস্নাত দেখার জন্য নয়। মেধার ভিত্তিতে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের চাওয়া, সমালোচনায় বেকারত্ব দূর হোক, শিক্ষিত হয়ে বেকার থাকতে থাকতে ছেলেমেয়েরা ডিপ্রেশনে চলে যায়। নেশাগ্রস্ত হয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে সংসার সমাজ, দেশের বোঝায় পরিণত হয়। দেশে দিন দিন শিক্ষার হার বেড়ে চলছে। তবে সে হারে চাকরির বৃদ্ধি পাচ্ছে না। সূর্যের আলোতে কখনো কখনো প্রভাত অন্ধকারে বিরাজমান। তবুও প্রতিটি প্রভাত সূর্যের জন্যই অপেক্ষামাণ। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ যেমন নির্ভীকভাবে আঘাত হানে তীরে, তেমনি জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, তবে রক্তপাত দিয়ে সবকিছু সমস্যা সমাধান হয় না। আর কোনো মায়ের বুক খালি না করে, কোটা সংস্কারে মাধ্যমে শিক্ষিত বেকারদের মূল্যায়ণ করা হোক, শিক্ষাঙ্গন কোনো রণক্ষেত্র নয়- এই সহিংসতা বন্ধ হোক!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত