ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিক্ষার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা নিন

শিক্ষার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা নিন

সাম্প্রতিক সহিংসতায় সব খাতেই কম-বেশি অভিঘাত লেগেছে। এর মধ্যে শিক্ষা খাত অন্যতম। আমাদের স্মরণে আছে, করোনা-দুর্যোগে মাসের পর মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বৃহদাংশের মধ্যে একধরনের মনোবৈকল্য দেখা দিয়েছিল। যদিও ওই দুর্যোগের এক পর্যায়ে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাকার্যক্রম চালু হয়েছিল, কিন্তু এর সুফলের চেয়ে বিরূপ ফলেরই চিত্র উঠে এসেছিল। সাম্প্রতিক সহিংসতায় সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এর বিরূপ মাশুল গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষাঙ্গন খুলে দেয়ার মতো পরিবেশ এখনো হয়নি- ৩০ জুলাই সংবাদমাধ্যমে এ কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত সবকিছু স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। বিদ্যমান বাস্তবতায় আমরা শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম চালুর ব্যাপারে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনাক্রমে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ এবং একই সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করি। আমরা মনে করি, যূথবদ্ধ প্রচেষ্টায় যেকোনো সংকটের ছায়া দূর করা যতটা সহজ, একপক্ষের পদক্ষেপে এর সুরাহা এত সহজ নয়। সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপট দেশের সচেতন মানুষ মাত্রই অজানা নয়। সংবাদমাধ্যমে এও অভিযোগ উঠেছে, সৃষ্ট সহিংসতার দায়ে নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের আটক করা হচ্ছে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল মহলের তরফে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

আমরা চাইব, উত্থাপিত অভিযোগের সত্যাসত্য নিরূপণকল্পে সরকারকে নির্মোহ অবস্থান নিয়ে মূল বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলন শিক্ষার্থীদের অহিংস কর্মসূচি, কীভাবে শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় গড়াল এর প্রেক্ষাপটও সচেতন মহল মাত্রই অজানা নয়। কিন্তু সহিংসতার সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না- তাদের এই বক্তব্য আমরা বিশ্বাস করি। কারণ, ধ্বংসযজ্ঞের যে ক্ষত দৃশ্যমান, তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। আমাদের ধারণা, যদি নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়, তাহলে পরিবেশ স্থিতিশীল হওয়ার পরিবর্তে আরো অস্থিতিশীল হবে। সার্বিক ক্ষতি যা হয়েছে তা অনেকাংশেই অপূরণীয় থেকে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ জীবনের মূল্য কোনো কিছু দিয়েই নির্ধারণ করা যায় না, যাবেও না। আমরা মনে করি, বিরাজমান পরিস্থিতির নিরসন করে শিক্ষার্থীদের কীভাবে শিক্ষাঙ্গনমুখী করা যায়- এটিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

করোনা দুর্যোগে যখন শিক্ষাঙ্গনের দরজা বন্ধ হয়ে পড়ে এবং ক্রমেই যখন তা প্রলম্বিত হতে থাকে, তাতে সব স্তরের শিক্ষার্থীর মাঝে একধরনের বিরূপতা পরিলক্ষিত হয়। আমরা লক্ষ্য করেছি, অনেকেই ডিভাইসনির্ভর হয়ে পড়ায় এর বহুমাত্রিক নেতিবাচকতায় তাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট যদিও ভিন্ন, কিন্তু অভিঘাতটি রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোর সবক্ষেত্রেই লেগেছে এবং শিক্ষাঙ্গনও এর বাইরে নয়। শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহে এমনিতেই ভাটা পড়ে। বিশেষ করে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মানসিকতা হয় এক ধরনের, আর এর পরবর্তী পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মানসিকতা হয় অন্য ধরনের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মনোবিকাশে অন্যান্য ক্ষেত্রও উন্মুক্ত থাকে। এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীর শিক্ষাকার্যক্রম, সুকুমারবৃত্তির চর্চার পাশাপাশি শিক্ষা এবং শরীরচর্চাসহ বহু ক্ষেত্রেই এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকলে এর সবকটি সমান্তরালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আজকের যারা শিক্ষার্থী তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের উপযুক্ত শিক্ষাদীক্ষায় গড়ে তুলতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে তো বটেই, পারিবারিক ও সামাজিকভাবেও বিশেষ ভূমিকা থাকে। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতায় পারিবারিক ক্ষেত্রটি বাদ দিলে বাকি দুটো ক্ষেত্রের দ্বার শিক্ষার্থীদের সামনে রুদ্ধ। আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষসহ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে। মনে রাখতে হবে, সময় যত গড়াবে ক্ষতির চিত্র ততই স্ফীত হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কারোই বিরূপ আচরণ কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা আশা করব, সব পক্ষের যূথবদ্ধ প্রয়াসে সংকট কেটে যাবে। সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষেরই এমন কোনো কিছু করা উচিত নয়, যা স্থিতিশীল পরিবেশের জন্য বৈরী হয়ে দাঁড়ায়। আমরা সংগত কারণেই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিরুদ্বিগ্ন থাকতে পারি না। আমরা আশা করব, ক্রান্তিকাল কাটাতে সব পক্ষের মধ্যে শুভবোধের উদয় হবে। সৃষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা নিঃসন্দেহে কঠিন, তবে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা আরো বেশি কঠিন; এই সত্য যেন সংশ্লিষ্ট কেউই ভুলে না যান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত